হাইলাইটস
- কেরলের জটায়ু পাহাড়ের পক্ষীরাজের অভূতপূর্ব পাথর খোদাই মূর্তির দেখে মুখ হাঁ হয়ে যেতে পারত জটায়ুর সৃষ্টিকর্তারও।
- কথা হচ্ছে কেরলের কোল্লম জেলার জটায়ুপারা বা পাথরের জটায়ু মূর্তির।
- আমরা বাঙালি।
- তাই জটায়ু বললেই আমাদের মাথায় আগে চলে আসে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের সেরা লেখক লালমোহন গাঙ্গুলির নাম।
তোপসে তো বটেই ফেলুদাও হয়তো এই নয়া প্রযুক্তি দেখে জটায়ুর মতোই অবাক হত। আগেকার দিনে ছেনি হাতুড়ির নয়, এই কাজ হয়েছে একেবারে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। অবাক হওয়ারই কথা বটে। কেরলের জটায়ু পাহাড়ের পক্ষীরাজের অভূতপূর্ব পাথর খোদাই মূর্তির দেখে মুখ হাঁ হয়ে যেতে পারত জটায়ুর সৃষ্টিকর্তারও। কথা হচ্ছে কেরলের কোল্লম জেলার জটায়ুপারা বা পাথরের জটায়ু মূর্তির। আমরা বাঙালি। তাই জটায়ু বললেই আমাদের মাথায় আগে চলে আসে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের সেরা লেখক লালমোহন গাঙ্গুলির নাম। কারণ তাঁর ছদ্মনাম জটায়ু। লালমোহনবাবুর কথা ‘জটায়ু, বঢ়িয়া পকশি মেরা ছদ্মনাম’।
ইতিহাস
সেই জটায়ুরই (পৌরানিক পাখি) এক বিশাল মূর্তি রয়েছে কোল্লমের চড়য়মঙ্গলম গ্রামে। স্থানীয় ভাষায় গ্রামের নাম চড়য়মঙ্গল হলেও সেটি জটায়ুমঙ্গলম নামে বেশি জনপ্রিয়। আনুমানিক খ্রিস্টিয় সপ্তম শতকে জটায়ুমঙ্গলম গ্রামের স্থাপন করা রাজ্যের রাজা ‘নেদিলা পরন্তক নেদুম সদয়ন’-এর নাম অনুসারে এই স্থানটি চড়য়মঙ্গলম নামে পরিচিতি পাচ্ছে বলে অনেকে মনে করে।
পৌরাণিক বিশ্বাস
বাঙালির কাছে জটায়ু মানেই লালমোহনবাবু হতে পারেন কিন্তু হিন্দুধর্মীদের কাছে জটায়ু হল রামায়নের সেই সাহসী পাখি যে সীতাকে বাঁচাতে রাবণের সঙ্গে ভয়ানক যুদ্ধ করেছিলেন। জটায়ুর আক্রমণে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন স্বয়ং রাক্ষসরাজ রাবণও। কিন্তু শেষপর্যন্ত জটায়ুর একটি ডানা কেটে সীতাকে নিয়ে তিনি পালান। অর্ধমৃত অবস্থায় জটায়ু পড়ে যান একটি বড় পাথরের খণ্ডের উপর। মৃত্যু পথযাত্রী জটায়ুর মুখ থেকেই সীতাহরণের ঘটনা শোনেন রাম। কোনও কোনও ধর্মপ্রাণদের বিশ্বাস জটায়ু যেই পাথরে পড়েছিলেন সেটি ছিল চড়য়মঙ্গলম গ্রামে। লোকমুখে তার নাম হয় জটায়ুপারা। এই স্থান পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে সেই পাথরের উপর রয়েছে একটি পাথরের তৈরি জটায়ুর মূর্তি। এছাড়াও জটায়ুপারাতে রয়েছে একটি প্রায় ১৮ ফিট উঁচু একটি নির্মীয়মাণ রামমূর্তি।
আধুনিক বাস্তব
জটায়ুপারা নামের পাথরের উপর রয়েছে একটি পাথরের তৈরি জটায়ু মূর্তি। মূর্তিটি পৌরানিক জটায়ুর মতো ডানা কাটা জখম অবস্থায় পড়ে থাকার মতো করে গড়ে তোলা হয়েছে। আর এই বিশাল কার্যকলাপের প্রধান কারিগর স্থপতি, ভাস্কর এবং চিত্র পরিচালক রাজীব আঁচল পাথরের এই জটায়ু মূর্তির খবরে যে সব পর্যটকরা রাখেন তাঁরা একবার হলেও তা দর্শন করে আসেন। স্থাপত্য ভাস্কর্যের এক অসাধারণ উদাহরণ এই জটায়ু মূর্তি। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে পড় পাথরের পাখি মূর্তি এটি।
কোল্লমের চড়য়মঙ্গলমের জটায়ু আর্থ’স সেন্টার দারুণ জনপ্রিয়। এটি জটায়ু পরিবেশ উদ্যান বা জটায়ু রক নামেও পরিচিত। সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩৫০ মিটার বা ১২০০ ফিট। রাজীব আঁচলের তৈরি পাথরের জটায়ুর দৈর্ঘ্য ২৫০ ফিট, প্রস্থ ১৫০ ফিট এবং উচ্চতা ৭০ ফিট। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এই জটায়ু উদ্যানটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
জটায়ু উদ্যানের আকর্ষণ
- আমাদের দেশের অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধতে লাইট-শো-এর ব্যবস্থা থাকে। যদিও রাজীব এখানে ব্যবস্থা রেখেছেন আরও অভিনব আকর্ষণের। এখানে 6D এফেক্টের মাধ্যমে রাবণের সীতাহরণ এবং জটায়ু পাখির বাধাদানের ঘটনা দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে দর্শকদের জন্য। সেই শো টিকিট কেটে দেখতে হয়।
- দিনে প্রায় ৪০০০টি টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা আছে। অ্যাডভেঞ্চার উদ্যানটি সম্পূর্ণ করতে লেগেছে প্রায় দশ বছর।
- জটায়ু উদ্যান ঘুরে দেখতে দিনের বেলা নির্দিষ্ট ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে।
- সেক্ষেত্রে জন প্রতি খরচ ৪০০ টাকা। অনলাইনে টিকিট বুক করা যায়।কেরলের কোল্লম জেলার এমসি রোড থেকে তিরুবনন্তপুরমের দিকে পড়ে জটায়ুগ্রাম বা চড়য়মঙ্গলম।
- চড়য়মঙ্গলম থেকে জটায়ু উদ্যানের মূল গেটের দূরত্ব মাত্র অর্ধেক কিলোমিটার।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-30 10:26:49
Source link
Leave a Reply