রক্তের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগ নিরাময় সম্ভব। ব্লাড ক্যাসারে যে ধরনের কোষ বিনাশকারী ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তা ক্যাসার সেলকে ধ্বংস করে, কিন্তু পাশাপাশি কিছু সুস্হ কোষকেও নষ্ট করে। তাই দেহের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি মুখেরও বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়।
ব্লাড ক্যাসারে দাঁতের চিকিৎসার সময় স্হানীয় অবশকারী ইনজেকশন না দেওয়াই ভালো, যদি বেশি রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে তাহলে ব্লাড ক্যাসারের চিকিৎসা চলাকালীন দাঁত তোলা ঠিক নয়। কারণ এ সময় বেশি রক্তপাত হতে পারে এবং সংক্রমণের দ্বারা অষ্টিওমাইলাইটিসও হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ব্লাড ক্যাসার চিকিৎসা চলাকালীন যদি ডেন্টাল সার্জারি বাধ্যতামুলক হয়, তাহলে সার্জারির আগে রক্ত পর্যন্ত দেওয়া লাগতে পারে। সার্জারির পর ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক সেবন করা উচিত। এন্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনই ভালো।
ব্লাড ক্যাসার রোগীর মাংসপেশীতে কোনো ইনজেকশন প্রদান করা ঠিক নয়, কারণ এর ফলে হেমাটোমা তৈরি হতে পারে। দাঁতের ব্যথায় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। কারণ এমনিতেই মাঢ়ি থেকে রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। ব্লাড ক্যাসারে মাঝে মাঝে মাঢ়ির নির্দিষ্ট অংশ অথবা পুরো মাঢ়িই ফুলে যেতে পারে। আবার ওরাল মিউকোসা বা মাঢ়িতে আলসার হতে পারে।
ব্লাড ক্যাসারে মুখে ক্যান্ডিডোসিস হতে বেশি দেখা যায়। হারপেটিক সংক্রমণ কখনো কখনো মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এন্টিফাঙ্গাল রোগ প্রতিরোধক হিসেবে নিষ্টাটিন মাউথওয়াশ দিনে ৪ বার ব্যবহার করা যেতে পারে। তা ছাড়া এমফোটেরিসিন লজেসও এক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকা রাখে। হারপিস ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যাসাইক্লোভির জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এ ছাড়া টনসিল গ্রন্হি ফুলে যেতে পারে। ম্যান্ডিবল বা নিচের চোয়াল এবং প্যারোটিড লালাগ্রন্হির ওপরে ব্যথাযুক্ত ফোলাভাব হতে পারে। অনেক কোষবিনাশকারী ওষুধ ওরাল মিউকোসাতে প্রদাহ এবং মাঝে মাঝে মুখে আলসার সৃষ্টি করে থাকে। শিরায় কনকমিটেন্ট ওষুধ প্রয়োগ করে আলসার প্রতিরোধ করা যায় বা কমিয়ে আনা যায়। আবার ফলিনিক এসিড ১.৫ মিলি গ্রাম ১৫ সিসি পানিতে পরিমাণমত দিনে ৩ বার ব্যবহার করলে বেশ কাজে আসে। এ ছাড়া ক্লোরোহেক্সিডিন এবং পোভিডন আয়োডিন মাউথওয়াশও ব্যবহার করতে হবে। মুখে মারাত্মক রক্তপাত বিশেষ করে মাঢ়ির পাশ থেকে হতে পারে রক্তের অনুচক্রিকার পরিমাণ কমে গিয়ে। এক্ষেত্রে ডেসমোপ্রেসিন অথবা রক্তের অনুচক্রিকার ইনফিউশন দিয়ে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
একনজরে ব্লাড ক্যাসারে মুখের সমস্যা
ক) লসিকাগ্রন্হি বা লিম্ফনোড বড় হয়ে যাওয়া, খ) মাঢ়ি থেকে রক্তপাত, গ) সংক্রমণ-ক্যান্ডিডোসিস এবং অন্যান্য ফাঙ্গাল সংক্রমণ, ঘ) হারপিস ভাইরাস সংক্রমণ, ঙ) মুখে ঘা বা আলসার সাধারণত হারপিস ভাইরাস এবং ক্যাসার বিনাশকারী ওষুধ মাধ্যমে হয়ে থাকে, চ) মাঢ়ি ফুলে যাওয়া, ছ) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ (১) ওরাল আলসার (২) শুষ্ক মুখ (৩) পিগমেন্টটেশন (৪) ক্যান্ডিডোসিস। তাই ব্লাড ক্যাসার রোগীর ক্যাসারের চিকিৎসার পাশাপাশি মুখের সমস্যাগুলোর প্রতি যত্মবান হতে হবে।
লেখকঃ ডা. মোহাম্মদ ফারুক হোসেন
উৎসঃ দৈনিক আমার দেশ, ২৭ নভেম্বর ২০০৭
Leave a Reply