হাইলাইটস
- প্রায় সপ্তদশ শতকে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে চিনারা কলাকাতয় বাসা বাঁধতে শুরু করেন।
- তখন দেশে চলছে ইংরেজদের রাজত্ব। কলকাতা তাদের প্রধান ঘাঁটি।
- এদিকে চিনারাও চুপিসাড়ে কলকাতায় ঘাঁটি বাঁধতে শুরু করে।
এতটুকু পড়ে অনেকেই রে রে করে উঠতে পারেন। ‘মা কালীকে অলক্ষ্মী বলা? বলি ধম্মে সইবে?’
আসলে আজকের মেয়েরা মা সরস্বতীর মতো পড়াশোনা করে দু হাতে রোজগার করে যেমন মা লক্ষ্মীর মতো সংসার আগলাচ্ছে তেমনই মা কালীর মতো স্বাধীনচেতা জীবনও কাটাচ্ছে বিন্দাস। সপ্তাহান্তের পার্টিতে যেমন সোমরস-মাংস চলছে তেমনই, কাজের চাপে রান্নাবান্নার সময় নেই তাই চাউমিন, চপস্যুই খেয়েই দিন কেটে যাচ্ছে।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে মদ-মাংস না হয় ঠিক আঅছে। ওটা কালীর প্রসাদ। শাক্তমতে পুজো হলে ওগুলোর দরকার পড়বেই। কিন্তু তা বলে চাউমিন-চপস্যুই? এসব তো ম্লেচ্ছ খাবার, হিন্দুদের অখাদ্য। আজ্ঞে না। ধর্মের মাথারা ওরকম অনেক কিছুই বিধান দেন। তা বলে ভগবান তো কারও একার সম্পত্তি নয়। আর কালীর মতো চঞ্চল দস্যি স্বাধীনচেতা মেয়েকে নিয়ে কোনোরকম ছেলেখেলা হবে না বস্। তিনি যদি খিচুড়ি, নকুলদানার বদলে চাউমিন, চপস্যুই, স্টিকি রাইস খেতে চান তাহলে তাঁকে তা দিতেই হবে।
অন্যদের মতো বাঙালিরা ঈশ্বরকে ভয় করে না। বরং নিজের ঘরের সন্তানের মতো ভালোবাসে। আর সন্তান যদি চাউমিন খেতে ভালোবাসে তাহলে তাকে তা দেবে না? তাই তো চায়না টাউনের কালী কিন্তু চাউমিন-চপস্যুই-স্টিকি রাইস খেতে খুব ভালোবাসেন। আর সেই প্রসাদ খেতে ভালোবাসেন ভক্তরাও।
অনেক ভনীতা হয়েছে এবার খুলে বলা যাক।
চা, চিনি, চামড়া, চাউমিন এবং চিনা
প্রায় সপ্তদশ শতকে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে চিনারা কলাকাতয় বাসা বাঁধতে শুরু করেন। তখন দেশে চলছে ইংরেজদের রাজত্ব। কলকাতা তাদের প্রধান ঘাঁটি। এদিকে চিনারাও চুপিসাড়ে কলকাতায় ঘাঁটি বাঁধতে শুরু করে। মূলত চা, চিনি এবং চামড়ার ব্যবসা করতেন চিনারা। আর চিনাদের খাবারি পরে চাউমিন নামে দারুণ জনপ্রিয় হয়। সেই চিনারা বাঙালিরদের সঙ্গে মিলেমিশে বাঙালি সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছেন। আপন করে নিয়েছেন বাঙালিরদের প্রিয় দেবীকেও।
চিনা কালীর ইতিহাস
চাইনিজ খাবার ইচ্ছে হলে আমরা যেমন চায়না টাউনে ভিড় জমাই তেমনই সেখানকার অধিবাসীরা তাঁদের কালীকে পুজো করেন আধা বাঙালি এবং আধা চিনা রীতিতে। কলকাতার ট্যাংরা অঞ্চলে প্রচুর চিনা বংশদ্ভূত থাকেন। এই কারণেই ওই এলাকার স্থানীয় নাম চায়না টাউন। প্রায় দশকেরও বেশি সময় আগে এই চিনা কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়।
প্রথমে স্থানীয় একটি গাছের নীচে সিঁদুর মাখানো দুটি কালো পাথরে নিয়মিত পুজো হত। স্থানীয় বাসিন্দারাই সেই পুজো করতেন। কালীর মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন এক চিনা বৌদ্ধ। বর্তমানে তার তৃতীয় পুরুষ এই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।
কালী মায়ের পুজো
স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী, তখনও মন্দির তৈরি হয়নি। গাছের নীচেই ঠাকুর পুজো চলছে। তখন এক চিনা বালক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক চিকিৎসা করেও কোনও লাভ হয় না। অবশেষে তার মা-বাবা চিনা কালী মন্দিরে এসে ধরনা দেন। দেবীর কাছে মানত করেন। গাছের নীচেই নিজেদের অসুস্থ ছেলেকে শুইয়ে রাখা হয়। ধীরেধীরে নাকি সে সুস্থ হয়ে ওঠে। তারপর থেকেই এই কালীর উপর চিনাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। এবং পরবর্তী সময়ে মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজে তাঁরা এগিয়ে আসেন। এবং কলকাতার বুকেই তৈরি হয়ে যায় চিনা কালী মন্দির। হিন্দুদের মতো খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধরাও এখানে পুজো দেন। বাঙালির পাশাপাশি কালীর আরাধনা করেন চিনারাও। পুজো হয় চিনা এবং বৌদ্ধ মতে।
দীপাবলির নিয়ম
দীপাবলির দিন চিনা কালী মন্দিরের চেহারাই বদলে যায়। একে ভক্ত সমাগম তায় আবার ভোগের বহর। ফল-মিষ্টির পাশাপাশি মা কালীকে চাউমিন, স্টিকি রাইস, সবজি, চপস্যুই অর্পণ করা হয়। দীপাবলির দিন অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে হাতে তৈরি কাগজ পোড়ানো হয়। জ্বালানো হয় লম্বা মোমবাতি এবং চিনা ধূপ।
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য
সীমান্ত, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি, পাকিস্তানকে সাহায্য এসব ক্ষেত্রে যতই ঝগড়া ঝাঁটি চলুক না কেন কলকাতায় কিন্তু হিন্দি চিনি ভাই ভাই। এই সৌভ্রার্তৃত্ব আরও বেড়ে যায় চিনা কালী বাড়িতে। তা পাকিস্তানের কথা যখন উঠলই তখন এই বেলা বলে রাখি যে, কলকাতায় যেমন চিনা বৌদ্ধরা রা মা কালীর পুজো করেন তেমনই পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে কালীর পুজো দেন মুসলমানরা। সেই কালাট কালীর গল্প আরেক দিন হবে না হয়।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-25 18:05:37
Source link
Leave a Reply