হাইলাইটস
- সারা মাসই প্রায় হেসে খেলে কাটানোর পর নির্দিষ্ট চার পাঁচটি দিন প্রায় প্রত্যেক মহিলার কাছেই যেন বিভীষিকা।
- অস্বস্তি বা শরীর দুর্বলের কথা বাদ দিলেও যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় তা হল ব্যথা।
- কোমর, তলপেটে অসহ্য ব্যাথাতেই কাহিল হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মহিলা। ব্যথা বাড়তে বাড়তে সারা শরীরের ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু কী কারণে হয় এই অসহ্য যন্ত্রণা?
পিরিয়ড চলাকালীন অসহ্য যন্ত্রণার অন্যতম কারণ হতে পারে জরায়ু মোটা এবং আয়তনে বড় হয়ে গেলে। এর পোশাকী নাম অ্যাডেনোমায়োসিস। নারী দেহের অভ্যন্তরীণ নানা পরিবর্তন হতে থাকে অনবরত। এর ফলে নানা রোগ শরীরের বাসা বাধে। এর প্রভাব পড়ে জরায়ুতে। সমস্যা শুরু হয় পিরিয়ড, প্রেগন্যান্সি এবং মেনোপজের কারণে নারী দেহের যে ভয়ানক পরিবর্তন হয় তাতে জেরবার হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। নারী দেহের প্রথম পরিবরর্তন শুরু হয় কৈশোরকালে, পিরিয়ড শুরু হওয়ার মাধ্যমে। মোটামুটি বেশিরভাগ মেয়েকেই পিরিয়ড চলাকালীন অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারম ব্যথা বলে চার পাঁচদিন কাটিয়ে দেয় মেয়েরা। মায়েরাও বিশেষ গুরুত্ব দেন না। বরং ব্যথা সহ্য করার পরামর্শ দেন। কিংবা ব্যথা কমাবার ঘরোয়া টোটকা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই অতিরিক্ত যন্ত্রণা যে বড়সড় রোগের পূর্বাভাস হতে পারে তা বেশিরভাগ মহিলাই গ্রাহ্য করেন না।
অ্যাডেনোমায়োসিস কী?
জরায়ুর (এন্ডোমেট্রিয়াম) অভন্তরস্থ্য যে কোষগুলি জরায়ুর প্রাচীর (মায়োমেট্রিয়াম) তৈরি করে সেগুলির অবস্থানের এক অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে প্রায়ই গর্ভাশয় বড় হয়ে যায়। এই অবস্থাকই বলা হয় অ্যাডেনোমায়োসিস। আর এই অবস্থা যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ডের প্রধান কারণ। অ্যাডেনোমায়োসিস সাধারণত মধ্যবয়সী মহিলা এবং সন্তানের মায়েদের শরীরের প্রভাব ফেলে।
অ্যাডেনোমায়োসিস-এর লক্ষণ
অল্প থেকে মারাত্মক একেক ধাপে অ্যাডেনোমায়াসিসের লক্ষণ হতে পারে একেক রকম। যদিও তার কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ রয়েছে।
– অতিরিক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা ঋতুস্রাব
– পিরিয়ড চলাকালীন তলপেটে ভয়ানক যন্ত্রণা এবং খিঁচুনি
– ইন্টারকোর্সের সময় যন্ত্রণা
– পিরিয়ডের নির্দিষ্ট সময়ের মাঝেই হঠাৎ রক্তপাত শুরু হয়ে যাওয়া
– পেটে চাপ এবং ফুলে যাওয়া
– জরায়ুতে প্রদাহ
– অ্যানিমিয়া
– প্রজনন ক্ষমতা লোপ
– প্রসারিত জরায়ু
অ্যাডেনোমায়োসিস বনাম এন্ডোমেট্রিয়োসিস
অ্যাডেনোমায়োসিস এবং এন্ডোমেট্রিয়োসিস উভয়েই এন্ডোমেটিরিয়াল কলার অসুখ। অতএব এই দুটি একে অপরের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। এমনকি উভয়ের লক্ষণগুলিও প্রায় একইরকম। তা সত্ত্বেও এই দুইয়ের মধ্যে যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে তা হল এন্ডোমেটিরিয়াল কলার বৃদ্ধি।
এন্ডোমেট্রিয়োসিস- এন্ডোমেট্রিয়োসিস অবস্থা হল যখন এন্ডোমেটিরিয়াল কোষগুলি নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে বাইরে যেমন তলপেট, পেলভিস, ওভারি কিংবা গর্ভে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
অ্যাডেনোমায়োসিস- অ্যাডেনোমায়োসিস অবস্থা হল যখন কোষগুলি জরায়ুর দেওয়ালে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তবে যাই হোক না কেন উভয় সমস্যার জন্যই পিরিয়ড চলাকালীন ভয়ানক যন্ত্রণা হতে পারে। অথবা চলতে পারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। আবার কথনও যন্ত্রণা এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ চলতে পারে একসঙ্গেও।
অ্যাডেনোমায়োসিসের চিকিৎসা
অ্যাডেনোমায়োসিসের লক্ষণের উপর তার চিকিৎসা নির্ভর করে। এছাড়াও মেনোপোজে সময়ের উপরও এর চিকিৎসা নির্ভর করে। মেনোপোজের পর অ্যাডেনোমায়োসিসের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তাররা অনেক সময় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়াও নানা হরমোনাল চিকিৎসা যেমন- ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টিনের উৎপাদন কম, হরমোনযুক্ত প্যাচ, কিংবা ভ্যাজাইনাল রিং পরার পরামর্শ দেন চিকিৎকরা। ব্যথার জন্যও নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া হয়।
তবে যন্ত্রণা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে একেবারে অসহ্য হয়ে ওঠে তখন চিকিৎরা জরায়ু বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
ব্যথা কমিয়ে সাময়িক আরামের জন্য বেশ কয়েকটি ঘরোয়া টোটকাও অবলম্বন করা যেতে পারে। এই টোটকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন।
ব্যথা কমানোর ঘরোয়া টোটকা
– তলপেটে গরম জলের সেঁক দিন। এক্ষেত্রে আইসব্যাগে গরম জল ভরে নিতে পারেন।
– মাসাজ করলে শরীরের ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়
– খাবারে পুষ্টিকর জিনিস রাখুন। তেল, মশলাদার খাবার, ফাস্টফুড বন্ধ করে দিন
– আদা এবং মধুর মিশ্রণ খান
– গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে পান করুন
– ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম রাখুন
– উষ্ণ গরম জলে স্নান করুন
– নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-08-17 17:12:36
Source link
Leave a Reply