হাইলাইটস
- বাতকর্ম Fart করে থাকি আমরা প্রত্যেকেই।
- অনেকের কাছেই এটি হাসির খোরাক হলেও এটি একটি সাধারণ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া যার মাধ্যমে পাচনতন্ত্রে উৎপন্ন অতিরিক্ত গ্যাস মলদ্বার থেকে নির্গত হয়।
কিছু ব্যাক্টিরিয়া কিয়দংশ গ্যাস গ্রহণ করে। বাকি গ্যাস Fart রূপে মলদ্বার হয়ে বা ঢেকুর রূপে মুখ থেকে নির্গত হয়। কোনও ব্যক্তির শরীর থেকে যদি এই গ্যাস নির্গত হতে না-পারে, তা হলে ব্যথা বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে গ্যাস জমে যায়।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের কারণে সাধারণত গ্যাস হয়। বিনস, লেগামস, ফল, সবজি, গোটা শস্য ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে। এই খাবারের কারণে শরীরে গ্যাসের পরিমাণ বাড়লেও পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ও রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফাইবার অত্যন্ত জরুরি উপাদান। এ ছাড়াও অন্য যে সমস্ত কারণে পাচনতন্ত্রে গ্যাস সৃষ্টি হয়, তা হল—
১. সোডা ও বিয়ারের মতো কার্বোনেটেড পানীয় পান করা।
২. তাড়াতাড়ি খাওয়া, স্ট্র দিয়ে কোনও কিছু পান করা, ক্যান্ডি চুষে খাওয়া, চিউয়িং গাম এবং খাবার চেবাতে চেবাতে কথা বলার কারণে আমরা গ্যাসও গলাধঃ করে ফেলি।
৩. এমন কোনও ফাইবার সাপ্লিমেন্ট, যাতে মেটামুসিলের মতো সিলিয়াম থাকে।
৪. সরবিটল, ম্যানিটল এবং জাইলোটলের মতো চিনির বিকল্প, যা চিনি ছাড়া খাবার ও পানীয়ের মধ্যে থাকে।
ঘুমের মধ্যে কী বাতকর্ম করা যায়?
ঘুমের মধ্যে বাতকর্ম করার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এ সময় গ্যাস সৃষ্টি হলে অ্যানাল স্ফিংটার সামান্য স্বস্তি পায় এবং তখন অনিচ্ছাকৃত ভাবে কিছু গ্যাস বেরিয়ে পড়ে।
বাতকর্ম ও মলত্যাগ
এবার প্রশ্ন ওঠে একজন যদি ঘুমের মধ্যে বাতকর্ম করতে পারে, তা হলে মলত্যাগ করতে পারে না কেন? ঘুমের মধ্যে অ্যানাল স্ফিংটার সামান্য প্রসারিত হয় ঠিকই, কিন্তু ততটাই যাতে তার মধ্যে দিয়ে সামান্য গ্যাস বেরোতে পারে।
অধিকাংশ ব্যক্তি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় মলত্যাগ করেন। সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পরই এটি হয়ে থাকে, কারণ শরীর তখন দৈনন্দিন তালিকার মধ্যে প্রবেশ করতে উদ্যোগী থাকে।
তবে মলত্যাগের কারণে ঘুম ভাঙার সম্ভাবনা তখনই থাকে, যখন ব্যক্তি অসুস্থ হয় বা যাত্রার কারণে তাঁদের নিত্যকর্মের সময় এদিক-ওদিক হয়ে গিয়ে থাকে।
বাতকর্মও কী নাক ডাকার মতোই?
অধিকাংশ ব্যক্তিই ঘুমের মধ্যে বাতকর্ম করেন না। অতিরিক্ত গ্যাস জমে গেলেই এমন হয়ে থাকে। অসুস্থতা, হজমে সমস্যা, কোনও খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা, অবসাদ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, হরমোনাল শিফ্টের কারণে এমন হয়ে থাকে।
অন্য দিকে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা এর তুলনায় অনেক বেশি সাধারণ। ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধার মুখে পড়লে নাক ডাকার মতো বিকট আওয়াজ উৎপন্ন হয়। এটি পাচনতন্ত্রের গ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।
আপনার নাকডাকা আপনার সঙ্গীর সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি কোনও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। নাকডাকা যে বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে—
লিঙ্গ- মহিলাদের তুলনায় পুরুষ বেশি নাক ডাকে।
ওজন- ওবেস বা অতিরিক্ত ওজন হলে নাকডাকার প্রবণতা বাড়তে পারে।
অ্যানাটমি- মুখের লম্বা ও মোটা সফ্ট টপ, নাকের বিচ্যুত সেপটাম বা বেড়ে থাকা টনসিলের কারণে এয়ারওয়ে পথ সরু হয়ে যাওয়ায় নাকডাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
পানের অভ্যাস- মদ গলার পেশীগুলিকে স্বস্তি দেয়, যার ফলে নাকডাকার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)- ওএসএ থাকলে গলার পেশী মাঝে মাঝে স্বস্তি পায়। যার ফলে এয়ারওয়ে সঙ্কুচিত ও বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ কারণে কোনও ব্যক্তি ঘুমের সময় ক্রমাগত শ্বাস নেন ও শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে থাকেন।
গড় সংখ্যক ব্যক্তি দিনে ৫ থেকে ১৫ বার বাতকর্ম করে থাকেন। আবার যাঁদের হজমের সমস্যা থাকে, তাঁদের বাতকর্মের সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হয়। ক্রোনস ডিসিস, ল্যাকটোস অসহিষ্ণুতার মতো কিছু কিছু খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা, সিলিয়ার ডিসিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাওয়েল ব্যাক্টিরিয়ায় পরিবর্তন, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের মতো সমস্যা অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
আবার হরমোনাল চেঞ্জ, গর্ভধারণ বা ঋতুস্রাবের কারণেও মহিলাদের অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। নিরামিষাসী বা ভেগানদের মধ্যেও অধিক গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যবস্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি গ্যাস সৃষ্টি করে থাকে।
ঘুমের সময় বাতকর্ম প্রতিরোধের উপায়
জীবনযাপন প্রণালীতে সামান্য পরিবর্তন করে ঘুমের মধ্যের বাতকর্মকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন—
১. ফাইবার সমৃদ্ধ, চিনির বিকল্প, দুগ্ধজাত, ভাজা বা মেদবহুল খাবার-দাবার কয়েক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখুন। তার পর ঘুমানোর সময় বাতকর্মের প্রবণতা কমলে ধীরে ধীরে এগুলি নিজের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করুন।
২. কার্বোনেটেড পানীয় বন্ধ করে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।
৩. ফাইবার সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকলে নিজের চিকিৎসককে বলে তার পরিমাণ কম করান বা কম গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে এমন কোনও ফাইবার সাপ্লিমেন্ট দিতে বলুন।
৪. ঘুমোতে যাওয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে রাতের শেষ খাবার খান। রাতের শেষ খাবার ও ঘুমের মধ্যে সময়ের ব্যবধান থাকলে শরীর ঘুমের মধ্যে কম পরিমাণ গ্যাস উৎপন্ন করবে।
৫. ধূমপান বন্ধ করুন। ধূমপানের ফলে শরীরে অধিক পরিমাণে বায়ু প্রবেশ করে, যার ফলে গ্যাস উৎপন্ন হয়।
৬. এমন কিছু ওষুধ আছে যা বিনস বা সবজির কার্বোহাইড্রেট ভেঙে সহজপাচ্য করে তুলতে পারে, আবার কিছু কিছু এমন ওষুধও আছে যা গ্যাসের বুদবুদ ভেঙে দেয়। এগুলির সাহায্যে পাচনতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়ে যায় এবং বাতকর্মের প্রয়োজনীয়তা পড়ে না।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-08-08 12:52:43
Source link
Leave a Reply