হাইলাইটস
- শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনেশে। সেই দেশে পিছলে পড়ে গেলে ২১ টাকা দণ্ড দিতে হয়।
- কেউ যদি টিকিট না কেটে হেঁচে ফেলে তাহলে তাঁকে ২১ বার হাঁচিয়ে মারা হয়।
- কারও দাঁত নড়ে বা গোঁফ গজায় তাঁকে দিয়ে ২১ বার সেলাম ঠোকানো হয়।
- একুশে আইনের অত্যাচারে নাকাল হন শিবঠাকুরের দেশের লোকেরা। খবরটি দিয়েছিলেন স্বয়ং সুকুমার রায়।
শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনেশে। সেই দেশে পিছলে পড়ে গেলে ২১ টাকা দণ্ড দিতে হয়। কেউ যদি টিকিট না কেটে হেঁচে ফেলে তাহলে তাঁকে ২১ বার হাঁচিয়ে মারা হয়। কারও দাঁত নড়ে বা গোঁফ গজায় তাঁকে দিয়ে ২১ বার সেলাম ঠোকানো হয়। একুশে আইনের অত্যাচারে নাকাল হন শিবঠাকুরের দেশের লোকেরা। খবরটি দিয়েছিলেন স্বয়ং সুকুমার রায়।
তাঁরা ছেলে সত্যজিৎ রায় তো আবার বাবার থেকেও পাঁচ কাঠি ওপরে। ২১ নয় তাঁর সংখ্যা ছিল ২৬। লালমোহন বাবুর প্রশ্নে ফেলুদা বলেছিল যে তাঁর কাঁধ, বুকের ছাতি আর কোমড়ের মাপ সবই ছাব্বিশ। তখন হাসিমুখে জটায়ুর সটান কটাক্ষ, “আপনি কি শুয়োর?”
বাবা ছেলে নম্বর নিয়ে খেলতে ভালোই বাসতেন। তবে এই নম্বরের গেঁরোয় যে একটা গোটা শহর আটকে পড়ে রয়েছে তা কিছুদিন আগেও বুঝি কেউ জানতেন না। শহরের নাম সোলোথার্ন এবং সংখ্যাটা হল ১১। সোলোথার্ন শহর না হয়ে যদি মানুষ হত তাহলে হয়তো সে বলে উঠত, ‘আমি ১১ নম্বরের কয়েদি’।
গোড়ার কথা
অনেক পায়তাড়া হল এবার আসল কথায় আসি। সোলোথান হল বিশ্বের অন্যতম সুন্দর দেশ সুইৎজারল্যান্ডের একটি ছোট্টো শহর। বিশ্বের অভিজাত, প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক কাছে এবং বলিউডের রোম্যান্টিক গানের শ্যুটিং স্পট হিসেবে সুইৎজারল্যান্ড আদর্শ জায়গা। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক সেদেশে ভিড় জমান। ছবির মতো সুন্দর এই শহরের প্রায় ৭০ শতাংশই ঘিরে রেখেছে আল্পস্ পর্বত। পর্যটনকেন্দ্র তো বটেই আইনশৃঙ্খলা, সভ্যতা-ভদ্রতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, শান্তি, শিক্ষা, যোগাযোগ সব কিছুর বিচারেই এই দেশ শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পেয়েছে। আর এই দেশেরই উত্তর পশ্চিম দিকে রয়েছে বিশ্বের ‘একাদশ আশ্চর্য’। আর তার নামই সোলোথার্ন।
নাম রহস্য
সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ, জেনেভা কিংবা বার্ন থেকে ট্রেনে টেপে সোলোথার্ন পৌঁছোনো যায়। শহরে ঢুকেই প্রথমে থমকে যান পর্যটকরা। কারণ সোলোথার্নের টাউন স্কোয়্যারে যে ঘড়িটি হয়েছে সেটি থেকেই শুরু হয় শহরের ‘একাদশ রহস্য’। শহরের মূল কেন্দ্রের ঘড়িটিতে রয়েছে মাত্র ১১টি সংখ্যা। ১২ সংখ্যা বিশিষ্ট ঘড়ির থেকে এই ঘড়ির একটি সংখ্যা কম। মানে এই ঘড়িতে কখনও ১২টা বাজে না।
আরও রহস্য
ঘড়ি দিয়ে শহরের একাদশ রহস্যের শুরু। এরপর আরও আছে। সোলোথার্ন শহরটিতে আছে ১১টি জাদুঘর, ১১টি গির্জা, ১১ খানা ঝরণা সহ আরও অনেক কিছু। মানে শহর জোড়া শুধুই এগারো গেঁরো।
শহরের ইতিহাস
একাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই শহরে ইলভ নামে এক জার্মান নাগরিক আসেন। তিনিই এই নগরের প্রতিষ্ঠাতা। ইলভকে পছন্দ করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শহর পত্তনে ইলভের প্রধান ভূমিকা সকলের মন জয় করে। এবং সেই কারণেই নাকি ইলভের নামের সঙ্গে মিলিয়ে ইলেভেন বা এগারো সংখ্যার বিভিন্ন নিদর্শন তৈরি করা হয়। সেই থেকে এই ধারা চলছে। লোকমুখে ইলভের গল্প বেশ প্রচলিত। যদিও এই গল্পের বাস্তবতা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। বরং রোমানদের হাতেই এই শহরের পত্তন হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদরা দাবি অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
লোকগাঁথা বা ইতিহাস যাই বলুনক না কেন ১১ সংখ্যাটি কিন্তু সোলোথার্নের ইতিহাসের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে জড়িয়ে গেছে।
– ১২১৫ সালে সোলোথার্ন শহরে কাউন্সিলর নির্বাচনে ১১ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
– আবার ১৪৮১ সালে সোলোথার্নকে সুইস কনফেডারেশনের ১১ তম প্রদেশ হিসেবে যুক্ত করা হয়। এবং সেই সময় শহরের রক্ষাকর্তা হিসেবে ১১ জনকে নিয়োগ করা হয়।
– এরপর ১৫ শতকের শুরুতে নির্মাণ করা হয় সেইন্ট আরসু গির্জা। গির্জাটিতে ছিল ১১টি দরজা, ১১টি জানালা, ১১টি রো, ১১টি ঘণ্টা এবং ১১ ধরনের পাথরের ব্যবহার।
এত এগারো আর যায় কোথায়? সোজা জায়গা করে নেয় শহরবাসীর মনে। ১১ সংখ্যাকেই নিজেদের বৈশিষ্ট্য বলে ধরে নেন তাঁরা।
উপসংহার
ভেবে দেখুন কেউ যদি নিজেদের ১১ বছরের বিবাহবার্ষিকী এই একাদশ আশ্চর্যের শহর সোলোথার্নে কাটাতে পারেন তাহলে তা কতটা রোম্যান্টিক হতে পারে। চাইলে এখনই প্ল্যান করে নিতে পারেন। খরচটা একটু বেশিই পড়ে।
এই বেলা বলে রাখি সোলোথার্নে বিলাসবহুল হোটেলের অভাব নেই। লোকজন সেখানে কম যান বলে ভিড়ও কম হয়। এখানকার স্পেশাল মিষ্টি সোলোথার্নার তর্তের স্বাদ অসাধারণ। আরে নদীর ধারে রয়েছে বিয়ার বার এবং রেস্তোরাঁ। সেখানে প্রিয়জনের সঙ্গে সময়টা ভালোই কাটবে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-05 16:19:35
Source link
Leave a Reply