আমাদের সকলেরই মনের ভাব আছে যে, আমাদের কেমন দেখায়। এই মনের ছবি হচ্ছে আমাদের মনের কল্পনার অংশবিশেষ এবং এটায় রয়েছে আমাদের শারীরিক মিলন, শারীরিক মিলনুয়ালিটি এবং যৌন জীবনের উপরে অনেক বড় প্রভাব। আমাদের শরীর সম্বন্ধে আমাদের অনুভবসমূহ দেহ কল্পনার অন্যান্য অংশের সংগঠক।
একটি ভালো শরীরের প্রতিবিম্ব হচ্ছে আমাদের পরিবারের এবং বন্ধু-বান্ধবের প্রদত্ত একটি উপহার। এর দ্বারা আমরা নিরাপত্তা অনুভব করতে পারি আমাদের যৌনতা ও যৌনজীবনের বিষয়ে। তাতে আমরা ছোট কিংবা বড় হই, মোটা কিংবা পাতলা হই, পেশিবহুল বা নরমদেহী, সুন্দর অথবা কালো তাতে কিছু এসে-যায় না। একটি দুর্বল শরীরের প্রতিবন্ধকতা আমরা পেতে পারি আমাদের পরিবারের কাছ থেকে, বন্ধুদের কাছ থেকে যারা আমাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, অপমান করে এবং আমাদের হস্তমৈথুন ও যৌনাঙ্গসমূহের জন্য নেতিবাচক অনুভব এনে দেয়। দুর্বল শরীরের কল্পনা আমাদের যৌনতা ও যৌন জীবন সম্বন্ধে অনিশ্চয়তার অনুভব এনে দেয়, তাতে আমরা যতই সুন্দর চেহারার হই না কেন।
যৌনতায় বাধানিষেধের কারণে আমরা আমাদের শরীর সম্বন্ধে খারাপ ধারণায় পৌঁছতে পারি এবং দুর্বল শরীরের কল্পনার কারণে আমাদের যৌনতার বাধানিষেধ আরো প্রবৃদ্ধি লাভ করে। তারা একটা লম্পটবৃত্ত তৈরি করে। প্রত্যেকেই অন্যদের তীব্রতর করে তোলে। যেভাবে আমাদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবেরা আমাদের শরীরের কল্পনার জ্ঞানের প্রাধান্য ঘটায় তাদের সমর্থন অথবা প্রত্যাখ্যান দ্বারা, তেমনি যে সমাজে আমরা বাস করি সেই সমাজও আমাদের সেই জ্ঞানের প্রতি কিছু অবদান রাখে। টেলিভিশন ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম আমাদের বডি ইমেজ সম্বন্ধে একটা সামাজিক আদর্শ গঠন ও প্রতিবিম্বিত করতে একটা প্রামাণিক ভূমিকা পালন করে। এর দ্বারা যে আদর্শ বেঁধে দেয়া হয় নারী ও পুরুষের জন্য, তাতে পৌঁছানো আমাদের বেশিরভাগ লোকের জন্যই সম্ভবপর নয়।
জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোতে দেখানো হয় স্বয়ংসম্পূর্ণ নারী ও পুরুষ এবং রচনা যোগ করে যে, কীভাবে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ শরীর লাভ করা যায়। বিজ্ঞাপন দাতারা আমাদেরকে লক্ষ লক্ষ কল্পনার দ্বারা বাঁধে এবং বুঝিয়ে দেয় যে সুন্দর ও যৌন হওয়ার অর্থ কী? একটি স্বাস্থ্যকর, ফিট এবং ছিমছাম শরীর হচ্ছে একটি আশ্চর্য জিনিস, কিন্তু মিডিয়ার বার্তা হচ্ছে এই যে, অসামর্থø ব্যক্তিদের সৌন্দর্যের আওতায় ধরা হয় না। অযাচিত মুখের চুল, মুখব্রণ, নরম পেট অথবা ছোট স্তন ওয়ালিদের সুন্দরের তালিকায় নাম নেই। প্রকৃতপক্ষে হাজার হাজার সুন্দরী, যৌনকামী এবং ভালোবাসার মতো নারী ও পুরুষ আছেন পৃথিবীতে যারা অসামর্থø, যাদের মুখে চুল আছে, ব্রণ আছে, নরম পেট আছে এবং ছোট স্তন রয়েছে।
সম্ভবত আমরা সেই সত্যকে ভুলে গিয়ে থাকব যে, যখন আমরা ছায়াছবির ইমেজের সাথে নিজেদের তুলনা করি অথবা টেলিভিশনে যাদের দেখি বা ম্যাগাজিনে যাদের ছবি ছাপা হয়। আমরা নিজেদের শরীর সম্বন্ধে যেভাবে আপদযুক্ত ধারণা করি তার দ্বারাই বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের লাভজনক ব্যবসার জন্য একটা আদর্শিক ছবির প্রচার চালায়। আমাদের নিজেদের চেহারা সম্বন্ধে যতটাই বেশি অনিশ্চিত হই ততটাই বেশি করে আমাদের সমস্যা দূর করার জন্য বিজ্ঞাপিত উৎপাদনগুলো কিনতে থাকি। এর দ্বারা আমাদের যৌনতার বাধানিষেধ আসার সম্ভাবনাই বেশি।
যদিও একটি মাত্র কারণ নয়, যৌনতায় বাধানিষেধ এবং দুর্বল শরীরের চেহারার কারণে জটিল ধরনের পেটের সমস্যা, অ্যানোরেক্সিয়া, বুলিমিয়া এবং বিনজ ইটিং ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে। এই গোলযোগের কারণে তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয়। বিশেষ করে তাদের যৌনতাকে। যদিও ইটিং ডিসঅর্ডার নারীদের মধ্যে অতি সাধারণ। ইটিং ডিসঅর্ডার অল্পবয়সী ছেলেদের মধ্যেও বাড়ন্ত আকারে দেখা যাচ্ছে। যেসব নারীর স্নায়বিক ক্ষুধামন্দা আছে তারা শরীর পাতলা করার জন্য উপবাস করে। দুর্ভাগ্যবশত তারা বিশ্বাস করে যে, তারা না খেয়ে থেকেও শরীরকে যথেষ্ট পাতলা করতে পারবে না। পাঁচজনের মধ্যে একজন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় অথবা মারা যায় মেল নাইট্রেশনের সাথে জড়িত জটিলতার জন্য। নারীরা স্নায়বিক ক্ষুধামন্দায় আক্রান্ত হলে তাদের আরো অনেকগুলো কঠিন জীবন বিপন্নকারী রোগ আক্রমণ করে। এ সময়ে তাদের রজঃস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে, উর্বরতা, স্তনের টিস্যু, যোনির পিচ্ছিলতা এবং যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে।
পাতলা হওয়ার জন্য বুলেমিক নারী এবং পুরুষ অনেক খাবার ভক্ষণ করেন এবং বিরেচনমূলক খাবার দ্বারা দীর্ঘ সময়ের জন্য উপবাস করেন, জুলাপ নেন অথবা ইচ্ছা করে বমি করেন। বিজন ইটিং হচ্ছে জবরদস্তি করে বেশি খাওয়া। এটা করা হয় চাপ ও দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য, তার সাথে যৌনতার দুশ্চিন্তাও জড়িত আছে। মানুষ চর্বিযুক্ত হয়ে গেলে যৌনতার বাধানিষেধ চলে আসে এবং তারা যৌনমিলন পরিহার করার জন্য একটা বাহানা খুঁজে পায়।
ক্ষুধামন্দাকে সাইকোথেরাপি ও পেশাদারি ডাক্তারি পরামর্শ দ্বারা ভালো করা যেতে পারে। এমনকি খাদ্য খাবারের গোলযোগ ঠিক হওয়ার পরেও যাই হোক একজন লোক তার ফলাফলের জন্য সারা জীবন চেষ্টা করে যেতে পারে।
যখন আমাদের বেশিরভাগ লোকই কঠিন ক্ষুধামন্দা রোগে আক্রান্ত হব না, তার পরেও আমাদের শরীর নিয়ে দুর্ভাবনা কম নয় এবং এর কারণে যৌনতায় বাধানিষেধ আসতে পারে এবং দ্বন্দ্বেরও উপস্থিতি হতে পারে। আমরা যে সঙ্গীদের পেতে আশা করি তাদের জন্য কি যথেষ্ট সুন্দর? আমরা কি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম? আমরা কি সঠিক লম্বা চাওড়া গঠনের? আমরা কি যথেষ্ট দীর্ঘ? আমরা কি অত্যধিক দীর্ঘ? আমরা কি সঠিক রঙের? আমরা কি যৌনতায় আকর্ষণীয়? এসব বিষয়ে চিন্তা করে আমরা খুব অসুখী হয়ে উঠতে পারি। তারা আমাদের মনের মধ্যে বেশি সময় ধরে যৌন কাজকর্মের মধ্যে একঘেয়েভাবে কাটায় তাতেও আমাদের যৌন আনন্দের মধ্যে বাধা আসতে পারে।
Leave a Reply