হাইলাইটস
- হাওড়া স্টেশনে ব্যান্ডেল লোকাল থামতেই এক তরুণী কানে ফোন ধরে বেজায় ব্যস্ত হয়ে কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছেন।
- পিছনে তাঁর এক রত্তি ছেলেটি গুরগুর পায়ে মা-কে ধরার চেষ্টা করছে।
- মায়ের অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই। তিনি কথায় মশগুল।
শিশু প্রাণে বাঁচলেও সারা গায়ে তার রক্ত মাখামাখি। আর যিনি তাকে বাঁচালেন তিনিও ভয়ানক জখম। স্নাতক পরীক্ষা দিতে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। পরের ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া হল না তাঁর। একটা বছর নষ্ট। কানে ইয়ারফোন গুঁজে প্রেম করতে করতে ট্রেনে কাটা পড়ার ঘটনা তো শয়ে শয়ে ঘটে চলেছে। রাস্তা পার হতে গিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে প্রাণহানি কিংবা গাড়ি চালকের ফোনে ব্যস্ততার কারণে বড়সড় দুর্ঘটনা আইন করেও বন্ধ করা যায়নি।
ফোনের ইতিকথা আরও আছে। ভোর কিংবা সন্ধেবেলায় স্বাস্থ্যরক্ষার খাতিরে পার্কে হাঁটার সময়ও একদল ‘স্বাস্থ্য সচেতন’ কানে ইয়ার ফোন গুঁজে রাখেন। শরীরচর্চা করার সময়ও তাঁদের এত কথা থাকে যে আশপাশের লোকে মন্তব্য করেই ফেলেন যে, “এর চেয়ে বাড়িতে বসে ফোনে বকবক করলেই হয়।” আর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথায় শরীর চর্চার সময় ফোনে কথা বলার অর্থ শরীরকে আরও অস্বাস্থ্যকর করে তোলা। এমনকি ফোনে কথা বলতে বলতে স্বাস্থ্যচর্চা করলে পেশী এবং হাড়ের ভয়ানক ক্ষতি হতে পারে বলেও দাবি করেন তাঁরা।
পেশীর ক্ষতি
বিশেষজ্ঞদের কথায়, হাঁটা বা স্বাস্থ্য চর্চা শরীরের পেশীগুলিকে দৃঢ় এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে। হাঁটার সময় হাত এবং পায়ের নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট তাল আছে। ডান পা এগোলে স্বাভাবিক নিয়মেই বাঁ হাত এগোয় এবং বাঁ পা এগোলে ডান হাতের এগিয়ে যাওয়াটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। এভাবে ক্রমাগত নির্দিষ্ট গতিতে হাঁটাচলা করলে শরীরের পেশী শক্ত হয়। শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু হাঁটার সময় কানে ফোন ধরে কথা বললে একটি হাতের অবস্থান ভুল থাকে। ফলে পেশীর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়। অসামঞ্জস্য দেখা যায় শরীরের অগ্রবর্তী তির্যক শৃঙ্খল এবং পরবর্তী তির্যক শৃঙ্খলের মধ্যে। এবং এর ফলে শরীরের নানা ব্যথা বেদনা দেখা দেয়। স্বাস্থ্য তৈরি করতে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠেন সকলে।
মাথার বিপদ
কানে ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে মাথার অবস্থানও বদলে যায়। হাঁটার সময় মাথা সোজা রাখা উচিত। সেক্ষেত্রে ফোনে কথা বললে মাথা বা ঘাড়ের নাড়াচাড়া বেড়ে যায়। যা কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ খারাপ। তাই হাঁটার সময় কথা নয়। শুধু হাঁটুন।
মনোযোগ বিচ্ছিন্ন
ফোনে কথা বলতে বলতে বা ইয়ার ফোন কানে গুঁজে রাখতে চারপাশে কী হচ্ছে তার সঙ্গে তাল রেখে চলা যায় না। এর থেকে যে মারাত্মক বিপদ হতে পারে তার উদাহরণ খবরের কাগজ বা টিভি খুললেই জানা যায়। ফোনের ব্যস্ততা যে মানুষকে মৃত্যু মুখেও ঠেলে দেয় তা সকলেই জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি কেউ সচেতন না হল তাহলে আপনার পরিবারকে দেখার যে কেউ থাকবে না তা নিশ্চিত হয়ে যায়।
পরামর্শ
– হাঁটার সময় ফোন একেবারেই ব্যবহার করবেন না। খেয়াল করে দেখবেন আর প্রিয় স্বাস্থ্য সচেতন সেলিব্রিটিরা কিন্তু শরীর চর্চার সময় ফোন ব্যবহার করেন না।
– হাঁটার পাশাপাশি হালকা শরীর চর্চার অভ্যাসও করতে থাকুন।
– একা হাঁটতে বোর লাগলে মনে মনে গান করুন। তবে জোরে নয়।
– হাঁটতে হাঁটতে ভাবুন যে অনেকটা চর্বি ঝরছে। যত হাঁটবেন তত ঝরবে। স্লিম হলে প্রিয় পোশাক পরতে পারবেন। প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে পারবেন।
– ওজন কমলে অনেক রোগও নিজে থেকে কমে যায়। হাঁপ ধরা, ক্লান্তি, শরীর ভারি লাগা, গ্যাস, অম্বল, ডায়বিটিস ত্বকের সমস্যার মতো বহু রোগ নিয়মিত হাঁটলে কমে যায়।
– নিয়মিত হেঁটে ওজন কমালে বয়স দেখবেন অন্তত পক্ষে ১০ বছর কমে গেছে। মন মেজাজ বেশ ফুরফুরে হয়ে যাচ্ছে। আপনার মেজাজ ভালো থাকলে পরিবারের লোকেরাও খুশি থাকেন।
– আপনার ফিটনেস দেখে অনেকেই হয়তো অনুপ্রেরণা পাবেন। আর সেটা অনুভব করার আনন্দ যে কী তা একমাত্র আপনিই বুঝতে পারবেন।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-08-02 17:50:38
Source link
Leave a Reply