হাইলাইটস
- ‘পর্যাপ্ত ঘুম’-এর জন্য সকলে নানান প্রচেষ্টা করে থাকেন।
- Insomnia-র রোগী হলে তো করেনই। এখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও Insomnia-র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ পান, প্রতিদিন এক্সারসাইজ করা, গান শোনা ইত্যাদি নানান চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনেকেই।
কেউ কেউ জানিয়েছেন যে, Covid থেকে সেরে ওঠার পর তাঁরা কোনও রাতে ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে পারছেন, আবার কোনও রাতে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় দুচোখের পাতা এক করতে পারেন না। এ কারণে আবার অফিস কামাই করতে হচ্ছে অনেককে। কারণ ঘুম পুরো না-হওয়ায় সারাদিন ক্লান্তি ও অবসাদে কাটছে, সঙ্গে দেখা দিচ্ছে মাথা ও শরীরে ব্যথা। এই কোনও সমস্যাই তাঁদের আগে ছিল না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কেউ কেউ তো আবার সারা রাত জেগে কাটাচ্ছেন। দিনের বেলায় কোনও ক্রমে ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমাতে পারছেন।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যোগাসন, গান শোনা থেকে শুরু করে মোবাইল বা যে কোনও গ্যাজেট থেকে নিজেকে দূর করেও লাভ হয়নি। পরে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললে, জানা যায় ইনসমনিয়ায় ভুগছেন তাঁরা। নিদ্রার অভাবে মেজাজ খিটখিটে থাকছে, আবার কোনও কাজে মনোনিবেশ করতেও পারছ না। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালীতেও। এর ফলে সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য প্রভাবিত হচ্ছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদে মতে করোনা শুধু ব্যক্তির শরীরেই আক্রমণ করেনি, বরং মানসিক দিক দিয়েও প্রভাবিত করেছে। Corona-র কারণে চাকরি হারানোর ফলে অনেকে অবসাদ, চাপ, ব্যাগ্রতা, বিরক্তির সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন, এমনকি দেখা যাচ্ছে ইনসমনিয়াও। সুস্থ হয়ে ওঠার পরও অনেকে ইনসমনিয়া থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
Insomnia কী?
এটি এক ধরনের স্লিপ ডিসঅর্ডার। যা হলে ব্যক্তি রাতে ভালো ভাবে ঘুমাতে পারেন না। এর ফলে সেই ব্যক্তির নিয়মিত স্লিপ সাইকেলে পরিবর্তন ঘটে। এতে ব্যক্তির সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া বাধা পায় এবং অন্যান্য নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে করোনাকালে অনিদ্রা বা নিদ্রাভাবের সঙ্গে জড়িত যে কোনও সমস্যার নামকরণ করা হয়েছে করোনাসমনিয়া নামে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, গড়ে ৭০ শতাংশ করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীরা নিদ্রার অভাবের অভিযোগ করছেন। করোনা-উত্তর স্ট্রেস বা স্টেরয়েডের অযৌক্তিক ব্যবহারকে এই সমস্যার জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা।
Insomnia-র লক্ষণ
অপর্যাপ্ত ঘুম, দিনের বেলায় ক্লান্তি, খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়া, রাতে একাধিক বার ঘুম ভাঙা, অবসাদ, ব্যাগ্রতা, মনোযোগের অভাব, বিরক্তি, মুডি হওয়া, নিদ্রাভাবের কারণে কোনও কিছু স্মরণ করতে সমস্যা হওয়া ইনসমনিয়ার কারণ।
এবার প্রশ্ন অতিমারীর সময় কেউ ঘুমাতে পারছে না কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাকরি হারানো-সহ নানান কারণে সকলের স্ট্রেস বেড়েছে, এ ছাড়াও কোয়ারেনন্টাইনে থাকার কারণে সৃষ্ট একাকীত্ব, হাসপাতালে থাকা, আর্থিক অনটন, ক্যান্সার, হৃদযন্ত্রের বা লিভারের সমস্যা ইনসমনিয়ার জন্য দায়ী।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের কাছেও অনেকে অনিদ্রার অভিযোগ নিয়ে আসছেন। তাঁদের মতে প্যানিক অ্যাটাক, আপনজনদের হারানোর দুঃখ ও অবসাদ এই অনিদ্রার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ভাইরাসটি যে শুধু ফুসফুসেই আঘাত হেনেছে, তা নয়, বরং স্নায়ুতন্ত্রকে এতটাই দুর্বল করে দিয়েছে যে সামান্য সমস্যাও মস্তিষ্ককে ত্রস্ত করে দিচ্ছে। আয়ুর্বেদে একে বাত উত্তেজনা বলা হয়। শরীরে বাত বা বায়ু বৃদ্ধি আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, যা ইনসমনিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। করোনার পর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী ওজাস ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতাকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। ওজাসের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, যা মানসিক সুস্থতায় ব্যাঘাত ঘটায়।
কী করা যেতে পারে?
কাউন্সিলিং ও লাইফস্টাইলে পরিবর্তন করে ব্যক্তি ইনসমনিয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন। পরিস্থিতি গুরুতর হলে সাময়িক কালের জন্য ঘুমের ওষুধও দিতে পারেন চিকিৎসকরা। যে ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বিটিসের সঙ্গে সঙ্গে ইনসমনিয়া হয়, তাঁদেরই ওষুধ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসরা।
ক্যানাবিস বা সিবিডি তেল দিয়ে কী ইনসমনিয়ার চিকিৎসা করা যায়?
ক্যানাবিস উদ্ভিদ থেকে তেল নিষ্কাশিত করে ক্যানাবিডিওল বা সিবিডি অয়েল তৈরি করা হয়। এটিকে স্ট্রেস ও ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জনপ্রিয় ও প্রাকৃতিক উপায় মনে করা হয়। তবে আয়ুর্বেদ মতে এমন কেসের সিবিডি অয়েল কার্যকরী নয়। ইনমনিয়ার ক্ষেত্রে ক্যানাবিসের নিয়মিত ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় না। এটি সাধারণত ব্যাথা কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে কেউ যদি ইনসমনিয়ার চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করে থাকেন, তা হলে তাঁদের অত্যধিক সতর্ক হতে হবে, কারণ এটি আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আবার কয়েকটি ঘরোয়া উপায়েরও সন্ধান দিয়েছেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা—
১. ৭-৮টি আমন্ড, ৩-৪টি খেজুর, ২-৩টি আখরোট সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। সকালে এর পেস্ট বানিয়ে এক কপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। দারচিনি গুঁড়ো বা ছোট এলাচও মেশাতে পারেন।
২. সুগন্ধ, মিউজিক বা কোনও মন্ত্রও মস্তিষ্ককে শান্ত করতে পারবে।
৩. মাথা ও পায়ের ম্যাসাজের ফলেও ভালো ঘুম আসবে।
৪. ব্রাহ্মী ও শঙ্খপুষ্পী ইনসমনিয়া সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৫. গ্যাজেটের ব্যবহার, কফি এবং মদ্যপান কম করুন।
৬. যোগ ও প্রাণায়ামের পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া উন্নত হয়। শ্বাস প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। যত ধীরে ধীরে শ্বাস নেবেন, মস্তিষ্ক তত শান্ত হবে।
৭. আবার সাত্বিক জীবনযাপনের ফলে শুধু ইনসমনিয়াই নয়, বরং নানান ক্রনিক রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। করোনার পর পঞ্চকর্মও ইনসমনিয়ার চিকিৎসায় কার্যকরী।
৮. ব্রাহ্মী, অশ্বগন্ধা, অর্জুন, ক্যামোমাইল, পুদিনার চা পান করলেও সাহায্য লাভ করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে ইনসমনিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রুটিন মেনে ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের মতে একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠার রুটিন থাকলে গ্যাজেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্মার্টফোনের ব্যবহার থেকে বিরত থাকার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। আবার ক্যাফিন জাতীয় পানীয় বাতিল করাই ভালো, যাতে তা আপনার ঘুমের প্যাটার্নে ব্যাঘাত না-ঘটাতে পারে। এক্সারসাইজ করলে ঘুম ভালো আসবে বলে তাঁদের অভিমত। আবার ঘুমের উপযুক্ত তাপমাত্রা থাকাও জরুরি। ভালো বালিশ ও গদি ব্যবহার করুন এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে অধিক পরিমাণে জল পান না-করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকদের মতে
১. ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও মেডিটেশন,
২. ডেলি রুটিন মেনে চলুন,
৩. সন্ধেবেলা ক্যাফিন জাতীয় পানীয় পান করবেন না,
৪. নিজের শয়নকক্ষকে অফিস বানাবেন না,
৫. পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের রশ্মি গ্রহণ করুন,
৬. দিনের বেলা ঘুমাবেন না,
৭. সন্ধেবেলা সংবাদ ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন
৮. বেশি রাত করে ঘুমাবেন না। — এ সব মেনে চললেও ইনসমনিয়া থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য পাবেন।
চিকিৎসকদের মতে ২ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে যোগ ও ধ্যান করলে তা এ ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ কার্যকরী প্রমাণিত হবে।
তবে এর মধ্যে কোনওটিতেই লাভ না-হলে কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপির জন্য স্লিপ থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকদের মতে ঘুম না-এলে নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া বা অতিরিক্ত মদপান করবেন না। কারণ এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিপরীত ফলাফল দেখা দিতে পারে। এক-দুই রাত ঘুমোতে না-পারলে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে পরিস্থিতি গুরুতর হলে যথাযথ চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের জন্য কোভিড কেয়ার স্পেশ্যালিস্টের সঙ্গে দেখা করুন। সঠিক ওষুধ ও ধ্যান এই সমস্যা থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-07-26 16:51:10
Source link
Leave a Reply