হাইলাইটস
- ‘স্পর্শহীন স্নায়ুরোগ’। সাধারণভাবে Non-Communicable Neurological Disorders নামে পরিচিত।
- মানে চিকিৎসকরা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই নামটাই ব্যবহার করে থাকেন। এই রোগই এখন কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের।
- আমাদের দেশে এই সমস্যা অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলছেন গবেষণা।
রোগের পরিচয়
স্নায়ুঘটির রোগ নিয়ে ১৯৯০-২০১৯ সাল পর্যন্ত একটি সমীক্ষার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে দ্য ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে। তাতে দাবি করা হযেছে যে আমাদের দেশে স্পর্শহীন স্নায়ুরোগের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। তুলনায় আঘাতজনিত স্নায়ুরোগের পরিমাণ অনেকটাই কম। স্পর্শহীন স্নায়ুরোগের মধ্যে পড়ছে স্ট্রোক, মাথাব্যথা, এপিলেপ্সি, সেরিব্রাল পালসি, অ্যালঝাইমা, ব্রেন এবং CNS ক্যানসার, পার্কিনসন্স, মাল্টিপল স্কেরোসিস এবং মোটোর লিউরন ডিজিস্। স্পর্শজনিত স্নায়ুরোগের মধ্যে পড়ে এনসেফেলাইটিস, মেনেনজাইটিস, টিটেনাস এবং ব্রেন, শিড়দাঁড়ায় আঘাতজনিত কোনও স্নায়ুরোগ।
গবেষণার ফল
গবেষকদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল নাগাদ আমাদের দেশে স্পর্শহীন স্নায়ুরোগের হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৮.২ শতাংশ। সেখানে স্পর্শজনিত রোগের হার ১৯৯০ সালে ০.২ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়ে মাত্র ০.৬ শতাংশ। অর্থাৎ ভারতে স্ট্রোক, মাথাব্যথা, এপিলেপ্সি, সেরিব্রাল পালসি, অ্যালঝাইমা, ব্রেন এবং CNS ক্যান্সার, পার্কিনসন্স, মাল্টিপল স্কেরোসিস এবং মোটোর লিউরন ডিজিস্ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। স্পর্শহীন রোগের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত শুধুমাত্র স্ট্রোকেই প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬,৯৯,০০০ মানুষ।
চিন্তা বাড়ছে
দ্য ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে স্নায়ুরোগজনিত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে গত ১৩ জুলাই। আর সেই রিপোর্টকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিয়ে গোটা দুনিয়া ব্যস্ত। ব্যস্ত ভারতীয় চিকিৎসক এবং নাগরিকরা। এদিকে দ্বিতীয় ঢেউ কাটিয়ে তৃতীয়কে আহ্বান করছে করোনা ভাইরাস। অবস্থা আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। ওদিকে আবার রোগ প্রতিরোধে টীকাকরণ চলছে পাল্লা দিয়ে। এই সময় অন্য কোনও রোগকে যেন বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ সাধারণ মানুষ। এদিকে যে কোনও রোগ হতে দেখলে সকলেই করোনা ভেবে আশঙ্কা করছেন।
এমনকি সেই রোগীকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরাও। আর এর জেরে অনেক সময়ই ভুল চিকিৎসার কবলে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে রোগীদের। অন্য রোগের প্রতি অবহেলার মনোভাব রোগের আশঙ্কা বাড়াতে পারে বলে একদল চিকিৎসক চিন্তিত। স্পর্শহীন স্নায়ুরোগকে অবহেলা করতে নারাজ তাঁরা। সমীক্ষা বলছে দক্ষিণ ভারতে এই রোগের কবলে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তুলনায় উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডে বেশি দেখা যায় আঘাতের ফলে স্নায়ুজনিত রোগের। জম্মু ও কাশ্মীরেও স্পর্শহীন স্নায়ু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাদ নেই বাংলাও। তালিকায় রয়েছে ত্রিপুরার মতো রাজ্যও। এই তথ্যই জানা গেছে India State-Level Disease Burden Initiative-এর রিপোর্টে।
সচেতনতার অভাব
এমনিতেই রোগ নিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের সচেতনতা কম। তার উপর যে সব রোগ নিয়ে প্রচার বেশি হয় সেই রোগ নিয়েই সামান্য সচেতনতা দেখা যায়, আক্ষেপ চিকিৎসকদের। বর্তমানে করোনা এবং অতীতে এইডস্, পোলিও, ডেঙ্গু নিয়ে সরকারি প্রচার ছিল যথেষ্ট। ফেল সংখ্যায় কম হলেও কিছু মানুষে রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসার ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন। কিন্তু স্নায়ুরোগ বিশেষ করে যেগুলি স্পর্শহীন স্নায়ু রোগ সেগুলি প্রতিরোধ বা চিকিৎসা সম্পর্কে প্রচার একেবারেই হয় না। ফলে তা নিয়ে সচেতনতাও কম। সঠিক সময় চিকিৎসা হলে রোগী রোগমুক্ত হতে পারেন। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি হযে যায়। দিন দিন এই প্রবণতা বাড়ছে। এবং বলাবাহুল্য অসচেতনতার কারণে রোগের আশঙ্কা এবং তা থেকে বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে।
রোগের কারণ
স্পর্শহীন স্নায়ুরোগের কারণ হিসেবে প্রধাণত আধুনিক জীবনযাত্রাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন গবেষকরা। আধুনিক অস্বাস্থ্যকর এবং দ্রুত জীবনযাত্রার কারণে স্ট্রোক, হাই সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশারের আশঙ্কা বেড়েছে ৫৫.৩ শতাংশ। বায়ুদূষণের কারণে আশঙ্কা বেড়েছে ৪২.২ শতাংশ। পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে ফাস্ট ফুডের আসক্তির কারণে স্পর্শহীন স্নায়ুরোগের সম্ভাবনা বেড়ে প্রায় ২৮.১ শতাংশ।
আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা যেভাবে রোগের হার বাড়ছে তাতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এখনই কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের জনসংখ্যা পাঁচ ভাগের এক ভাগই স্পর্শহীন স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যার প্রধান বলি হবেন ৬০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরা। তাই সাবধান হতে হবে এখন থেকেই।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-07-20 09:26:52
Source link
Leave a Reply