সেই প্রাচীন কাল থেকে নারীরা নিজেকে সাজাতে ব্যবহার করেন নানান প্রসাধণীদ্রব্য। চোখে, ঠোটে, ত্বকে কোথায় না লাগাই আমরা এসব রাসায়নিক। ক্ষতিকর জেনেও নিজেকে অপরের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে আমরা যেন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। অথচ এগুলোর নিয়মিত ব্যবহার আপনার মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। জেনে নিই ৮টি বিষাক্ত সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধনীর কথা যা অতীতে একসময় ব্যবহার হত এবং এখনও ভিন্ন ঢঙে ব্যবহার হয়।
লেড বেসড চোখের রং
ইজিপশিয়ান আমলে নারী পুরুষ উভয়েই নাটকীয়ভাবে তাদের চোখ রং করত। মোটা করে চোখের চারপাশ আঁকত তারা, এমনভাবে সাজাত যা আজকে আমাদের চোখে খুবই অদ্ভুত লাগবে। দীর্ঘসময় এই লেড বা সীসাযুক্ত রং ব্যবহারের কারণে তাদের চোখে অস্বস্বস্তি হত। আর এই লেড রং সর্বক্ষণ ব্যবহারে মানসিক রোগ এমনকি মৃত্যুও হত। এটা স্মরণকালের সবচেয়ে বিষাক্ত বিউটি প্রডাক্ট। এখনও আমরা লেড আইলাইনার, কাজল ব্যবহার করি যা আমাদের চোখের ক্ষতি করে যাচ্ছে নিরবে।
লেড বেসড ফেস ক্রিম
রোম সাম্রাজ্যে ত্বকের যেকোন দাগ বা ত্রুটি লুকাতে ব্যবহার করা হত লেড বেসড ফেস ক্রিম। লেড বেসড ক্রিম এখনও অনেক জনপ্রিয়। ত্বকের খুঁত ঢাকতে এখনও আমরা মুখে এই সব ক্রিম মাখি। জ্বী, বাজারে যত ফাউন্ডেশন, কনসিলার পাওয়া যায় অনেকগুলোই বিষাক্ত লেড সমৃদ্ধ।
সাদা লেড বেসড ফেস পাউডার
১৭ শতকে নারীপুরুষ উভয়েই মুখে সাদা পাউডারের প্রলেপ দিত। তারা মনে করত এতে তাদের আরও তরুণ এবং সুন্দর লাগে। আরও ভাল ফিনিশিং পেতে পাউডারের নীচে তারা লেড বেসড ক্রিমও ব্যবহার করত। এই ক্রিম রোমানদের মত না হলেও সেরকমই বিষাক্ত ছিল। ক্রিমটি হত কেক আকৃতির, সেটি ভেঙ্গে গুঁড়ো করে তরল কিছুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হত। এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতেন লেডি কভারটি। ১৭ শতকের বিখ্যাত সুন্দরী ছিলেন তিনি। মুখে লেড ক্রীম আর পাউডারের প্রলেপ ছাড়া কখনো দেখা যায় নি তাকে। এই বিষাক্ত প্রসাধণ মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তার মৃত্যুর কারণ হয়।
আর্সেনিক ওয়েফার
১৮ শতকে আর্সেনিক বিক্রী করা হত ত্বকের ব্লেমিশ পরিষ্কার করার জন্য কার্যকরি পণ্য হিসেবে। এমনকি বলা হত, এটি ত্বকে সেই তারুণ্য এনে দিতে পারে যা আমরা সবাই ধরে রাখতে চাই আজীবন। বিজ্ঞাপণ কোম্পানিগুলো একে যাদুকরি বিউটি প্রডাক্ট হিসেবে প্রচার করত। কিন্তু এটি আসলে আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাকে ধ্বংস করে ফেলে। যার কারণেই ত্বকের রেখা কমে আসে। কেউ যদি আর্সেনিক পানি ব্যবহার বন্ধ করে দেয় তাহলে তার মুখের ব্রণ এবং অন্যান্য সমস্যা দ্বিগুণ হারে দেখা দিত। ফলে সে আবার এটি ব্যবহার শুরু করত। অনেকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও নানানভাবে নিরাপদ বলে আর্সেনিকের মার্কেটিং করা হয়েছে ১৯২০ সাল পর্যন্ত!
রেডিয়াম ক্রিম
মেরি এবং পেরি কুরির ১৮৯৮ সালে রেডিয়াম আবিষ্কারের পর রেডিয়াম সকল রোগের ওষুধ হিসেবে গণ্য হতে থাকে। আরথ্রাইটিস থেকে ইনসোমনিয়া পর্যন্ত সব রোগের ছিল এই এক দাওয়াই। রেডিয়ামের জনপ্রিয়তা দাবনলের মত ছড়িয়ে পড়ে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খেলনায় পর্যন্ত যত কিছুতে সম্ভব ব্যবহার করা হতে থাকে এই রাসায়নিক। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, দাগ কমাতে, তারুণ্য ধরে রাখতেও কর্যকরি পণ্য হিসেবে বাজার দখল করে রেডিয়াম। শুধু ক্রিম নয়, ছিল রেডিয়াম নাইট ক্রিম, ব্যবস্থা ছিল রেডিয়াম স্পা এর যেখানে রেডিয়ামের তরলে সারা গা ডুবিয়ে বসে থাকত নারীরা তারুণ্য লাভের আশায়। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আত্মহননের উপায় আর কি আছে!
বেলাডোনা পাতা
তীব্র ক্ষারীয় আর বিষাক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করা হত এই পাতা। ইতালির ১৬ শতকের জনপ্রিয় বিউটি প্রডাক্ট ছিল এটি। নারীরা এই পাতার নাম দেয় বেলাডোনা, যার অর্থ সুন্দরী নারী। একটি বিষাক্ত মারণাত্মক জিনিসের নির্দোষ একটি নাম দিয়ে এর ব্যবহার চলতে থাকে। প্রতিদিন এর ব্যবহার মানুষকে অন্ধ করে দিত এমনকি তার মৃত্যুর কারণ ও হত।
চোখে বড় পাপড়ি সেলাই
১৮ শতকের নারীরা চোখের পাপড়ি বড় করার প্রতি আসক্ত ছিলেন। ১৮৯৯ সালে একটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায় স্থায়ীভাবে চোখের পাপড়ি বড় করার পদ্ধতি এসে গেছে। নিরাপদ উপায়ে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া চোখের পাপড়ি বড় করে দেওয়ার প্রচারণা ছিল এতে। প্রকৃতপক্ষে একটি সাধারণ সুচ দিয়ে চুল সেলাই করে বসিয়ে দেওয়া হত। কোন মৃত্যুর ঘটনা না থাকলেও পদ্ধতিটি যে ইনফেকশন সংক্রমণসহ অন্ধত্ব এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে তা তো বুঝতেই পারছেন।
লাল লিপস্টিক
সব নারীর ড্রেসিং টেবিলেই নিশ্চই আছে এটি? বিশ্বাস করুন আর নাই করুন প্রায় সব লাল লিপস্টিকে এখনও ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত লেড। এই ২০০৭ সালেও শত শত কোম্পানির লাল লিপস্টিক বাজেয়াপ্ত করা হয় উচ্চ মাত্রার লিড থাকার কারণে। লেড শারীরিক মারাত্মক ক্ষতি করে আমরা সবাই জানি। তাই বলে কি আজ থেকে ব্যবহার বন্ধ করে দেবেন প্রিয় লাল লিপস্টিকটি?
এস সি
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-07-11 23:34:10
Source link
Leave a Reply