শরীরে ব্যথা অনুভব করেন না; বিশেষ করে বয়স্ক নারী-পুরুষের মধ্যে এমন কাউকেই পাওয়া যাবে না। চিকিৎসকের চেম্বারে যত রোগী আসা-যাওয়া করে তাদের কমবেশি সকলেরই অভিযোগ-শরীরের কোথাও না কোথাও ব্যথা। এদের মধ্যে যারা অসহনীয় ব্যথায় আক্রান্ত তাদের পেইন কিলার বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ব্যবস্থাপত্র চিকিৎসকই দিয়ে থাকেন। আর এমনও লোক আছে ভুরি ভুরি যারা সামান্য ব্যথা অনুভূত হলেই নিজে উদ্যোগী হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই সেবন করে থাকেন ব্যথানাশক ওষুধ। তাতে আপাত সমস্যার সমাধান মিললেও আখেরে পস্তাতে হয় বড় রকমে। বস্তুত উভয় শ্রেণীর ব্যথার রোগীদের জন্য সুখবর হলো-ব্যথানাশে ধম্বন্তরি চিকিৎসা হচ্ছে শরীর চর্চা বা ব্যায়াম।
জন হপকিন্স মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাওয়ার্ড লেভির ভাষায়, ব্যথায় আক্রান্ত এমন লোকও আছেন- যারা বিছানা থেকে বাথরুমে হেঁটে যেতেও কষ্ট পান তাদের জনই বলছি আপাত আশ্চর্যজনক ও অসম্ভব বলে মনে হলেও সত্য এই যে ব্যায়ামের সাহায্যে তেমন ধরনের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ব্যায়ামের সাহায্যে দীর্ঘদিনের ব্যথাও আরোগ্য লাভ হয়। ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে গিয়ে শরীরের মাংসপেশীগুলো অধিক পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণের পাশাপাশি পুঞ্জিভূত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। যা মূলতঃ ব্যথা-বেদনার জন্য দায়ী। তাছাড়া ব্যায়াম করলে হ্নদপিণ্ড পাম্প (সংকোচন-সম্প্রসারণ) করতে পারে অধিকতর কার্যকরভাবে। ফলে সহসা ক্লান্তি আসে না। একই কারণে মাংসপেশীতে খিঁচুনিজনিত ব্যথার আশংকাও থাকে কম। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের বাড়তি ক্যালোরি দহনের ফলে ওজন কমে গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা ব্যথার অন্যতম কারণও বটে। সবচেয়ে বড় কথা প্রাকৃতিক পেইন কিলার হলো এন্ডরফিন (ব্রেনের এক প্রকার হরমোন)। ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে আপনা-আপনিই এ জাতীয় হরমোন উৎপন্ন হয়ে থাকে। ফলে ব্যথানাশের জন্য বাড়তি ঝামেলার কোন দরকার পড়ে না। সর্বশেষে ব্যায়ামের ফলে সহজেই গভীরভাবে ঘুম আসে এবং ঘুম থেকে উঠলে প্রশান্তি অনুভূত হয়। পক্ষান্তরে নির্ঘুম বা উৎপাতের ঘুমে একদিকে শরীর ও মন অবসন্ন হয়ে পড়ে অন্যদিকে বেড়ে যায় ব্যথার ঝুঁকি। প্রশ্ন হচ্ছে কী ধরনের ব্যায়াম করা যেতে পারে? বিশেষ করে ব্যথানাশে কোন্ ধরনের ব্যায়াম অধিক কার্যকর?
সাধারণ হাল্কা ধরনের ব্যায়ামই মাংসপেশী গঠন ও ব্যথা নিবারণে বেশি কার্যকর। এ-জন্য হাঁটা যেতে পারে। চালানো যেতে পারে বাইসাইকেল। সাঁতার কাটা এমনকি বাথটাবে শুয়ে ওয়াটার এক্সারসাইজ বা জলকেলিও করা যেতে পারে। যাদের জন্য এসবের কোনটিই সহজ নয় তারা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাত ও পা উপরে রেখে বাইসাইকেল চালানোর ভঙ্গিতে দুই পা নাড়াতে পারেন। এছাড়াও দুই হাত ও পায়ের কনুই এবং হাঁটু ক্রমাগতভাবে ভাঁজ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অস্থি জোড়ার রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে পারেন। হাতের ব্যায়ামে ব্যবহার করতে পারেন দুটি রাবার বল। বল দুটি হাতের মুঠোয় রেখে ক্রমাগতভাবে চেপে এবং ছেড়ে দিয়ে হাতের আঙুল তথা সমস্ত শিরা-উপশিরা ও ধমনীতে বাড়ানো যায় রক্তসঞ্চালন। তবে মনে রাখতে হবে সহনীয় পর্যায়ে থেকেই ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া উচিত। প্রয়োজনে শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের।
লেখকঃ জাকিরুল ইসলাম
উৎসঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০২ ডিসেম্বর ২০০৭
Leave a Reply