হাইলাইটস
- ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকের পুঁচকি একটা দেশ। আচ্ছা ভারত নয়, আরও সহজ করে বলা যাক।
- পশ্চিমবঙ্গের মাথার দিকের ছোট্টো দেশ। নাম তার ভুটান।
- আকারে এতই ছোটো যে ভারতের মানচিত্রে তাকে রাখলে হারিয়ে যাবে।
সেই পুচকে গুরুত্বহীন দেশটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ। রাম-শ্যাম-যদু-মধু নয় এমন দাবি করছে স্বয়ং রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাদের বাছাই করা সুখী দেশের তালিকায় সবার উপরে নাম আছে ভুটানের। কিন্তু বিশ্বের তাবর তাবর দেশ থাকতে ভুটান কেন? উন্নত দেশগুলির মতো অর্থ, প্রযুক্তি, সামরিক বাহিনী, লোকবল কিছুই তো নেই ভুটানের। দেশবাসীর জীবনযাত্রার মান একদম সাধারণ। তাহলে?
কারণটা শুনলে তাজ্জব হয়ে যাবেন। মনে হবে যে, এই ছোট্টো গুরুত্বহীন অনুন্নত দেশের বাসিন্দা এবং সরকারের কাছ থেকে বিশ্বের প্রতিটি দেশের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
মহামারিকে ধরে মারি
ভুটানের মাথার উপর রয়েছে চিন, আর নীচে ভারত। উপরের জন করোনার আঁতুরঘর আর দ্বিতীয় জন বিশ্বের প্রথম সারির করোনা ভাইরাসবহনকারী রাষ্ট্র। মাঝখানে ছোট্টো ভুটান কিন্তু করোনাকে কাঁচকলা দেখিয়ে দিয়েছে। যেখানে গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন সেখান ভুটানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মাত্র একজন। গোটা বিশ্ব অবাক। রোগীর সংখ্যাও হাতে গোনা। দেশের সরকার এবং মানুষ যেভাবে সন্তর্পণে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে রোগ প্রতিরেধর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে সেটাই স্বাভাবিক। গরিব দেশ হয়েও তাই বিশ্বের তাবর তাবর দেশকে মহামারির প্রতিরোধের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিয়েছে ভুটান।
দূষণমুক্ত দেশ
বিশ্বের একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ হওয়ার তকমা পেয়েছে ভুটান। হিমালয়ের বুকে অবস্থানকারী এই দেশ দেশের ৭০ শতাংশ অরণ্যে। তাই বিষাক্ত গ্যাস পরিবেশে মেশার আগেই গায়েব হয়ে যায়। দেশবাসী এবং সরকার উভয়েই পরিবেশ সচেতন। তাঁরা জানেন যে নিজের থেকেও বেশি যদি প্রকৃতির যত্ন নেওয়া হয় তাহলে প্রকৃতিও পালটা তাঁদের যত্ন নেবে। তাই এখানে প্রকৃতি দেবী যখন আনন্দের হাসি হাসেন তেমনই ভুটানিদের মুখে সদাই লেগে থাকে মিষ্টি হাসি।
সবুজে সবুজ দেশ
হিমালয় প্রদেশের শেষ রাজতন্ত্রের দেশ ভুটানের চারদিকে শুধুই সবুজ গাছপালা। রাজধানী পারো আধুনিক শহর হলেও সবুজ প্রকৃতি তার আশীর্বাদ সেখানেও প্রদান করেছে। পারো ছাড়াও পুনাখা, ওয়াঙ্গুড়ে সবুজ পাহাড়ে মোড়া। চারদিকে ঘাসের জমি, ধানের খেত, নদী এবং হ্রদ। প্রকৃতির এই শোভা ভুটানবাসীকে যেমনই সুখী রাখে তেমনই রাখে সুস্থ।
ট্যাফির জ্যাম বিহীন দেশ
লকডাউনের সময়টা বাদ দিলে বাকি সময় বাংলা তো বটেই গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে রাস্তায় এক দণ্ডও শান্তি মেলে না। ট্র্যাফিক জ্যাম। গাড়ির হর্ণের বিকট শব্দ, কালো বিষাক্ত ধোঁয়া, অধৈর্য লোকজনের চিৎকার চেঁচামিচি যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। কিন্তু ভুটানে গেলে এই দৃশ্য খুঁজে পাবেন না। এদেশের ট্র্যাফিক নিয়ম খুব কঠোর। নাগরিকরাও সচেতন। রাস্তায় কোনও ট্র্যাফিক সিগন্যাল নেই। ট্র্যাফিক পুলিশরাই গাড়ি রাস্তার সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই ট্র্যাফিক পুলিশের নির্দেশ বা জেবরা ক্রসিং এলে গাড়ি আপনা থেকেই থামিয়ে দেবেন গাড়ির চালক। জেবরা ক্রসিং দিয়ে নিশ্চিন্তে রাস্তা পারাপার করবেন পথচারী। গাড়ি ওভারটেকের কোনও বালাই নেই। চলন্ত গাড়িকে হাত দেখিয়ে রাস্তা পারাপারের বদ অভ্যাসও নেই ভুটানবাসীর। এখানে এতটাই নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা হয় যে সেখানে কাউকে কখনও ট্র্যাফিক জ্যামের মুখে পড়তে হয় না। এরকম দেশে বসবাস করার আনন্দই আলাদা।
উৎসবের দেশ
দেশের বেশিরভাগ মানুষই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছর ভর তাঁদের উৎসব চলে। শেচুস (Tshechus) ভুটানিদের জাতীয় উৎসব। তিব্বতি চান্দ্রমাসের দশম দিনে ভুটানের প্রতিটি জেলায় জাঁকজমক করে এই উৎসব পালিত হয়। শেচুস ছাড়াও স্থানীয় আদিবাসীদের পরব তো আছেই। রয়েছে খাদ্য উৎসব, বিজয়ের উৎসব, স্থানীয় দেবদেবীর পুজো। সব মিলিয়ে সারা বছরই আনন্দে থাকেন ভুটানিরা। সেদেশে যে কোনও সময়ই বেড়াতে যান না কেন যে কোনও ভুটানি পরবের দেখা পাবেনই পাবেন।
আধ্যাত্মিক আবহ
দেশের প্রধান ধর্ম বৌদ্ধ হওয়ায় দেশজুড়ে শান্তির বাতাবরণ থাকাটাই স্বাভাবিক। ভুটানের বৌদ্ধ মঠগুলিতে প্রবেশ করলে মন এমনিই শান্ত হয়ে যায়। ভুটানে এখনও পুরোনো রীতি মেনেই বৌদ্ধধর্ম পালন হয়। আধ্যাত্মিক ভাবনা গোটা দেশকে যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সেই আচ্ছন্নতায় মিলেমিশে যান পর্যটকরাও। ফলে ভুটানিদের মতো সেদেশে বসবাসের সময় পর্যটকরাও বেজায় সুখবোধ করেন।
খাবার দাবার
ভুটানের জিভে জল আনা খাবারের খবর খুব কম লোকেই রাখেন। এখানকার যে কোনও মাংসের পদ একবার খেলে কেউ ভুলতে পারবেন না। আর বলাবাহুল্য সুস্বাদু খাবার খেলে মনে আনন্দ এমনিই থাকে। ভুটানের জাতীয় খাবার এমা দাতশি। এটি ভুটানি লাল এবং সাদা চাল দিয়ে তৈরি হয়। মুর্গির মাংসের জাসুয়া মারু, শুকরের শুকনো মাংসের ফাকশা পা, থুকপা, বাথুপ, গরুর দুধের তৈরি পনীর ডাটসি, নুডলস্, মোমো, থুকপার স্বাদ নিয়মিত চাখতে শুরু করুন। আপনিও বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষে পরিণত হবেন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-28 16:54:15
Source link
Leave a Reply