ত্বকের যত্ন নেবার প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আপনি নারী হন বা পুরুষ, দিনে একবার নিশ্চয়ই আয়নার দিকে তাকানো হয় আপনার? আর আয়নাতে যদি দেখেন আপনার ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক এবং দাগযুক্ত তবে মন খারাপ হবে বই কি? আর তাই ত্বকের যত্ন নিতে আমরা বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করে থাকি। প্রাচীনকালের হলুদ, লেবু, নিমপাতা, মুলতানি মাটি আর ফুলের নির্যাসের স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রোডাক্ট। ফেয়ারনেস ক্রিম থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের মেকআপ পণ্য ছাড়া আমাদের সৌন্দর্য অপূর্ণ থেকে যায় বলে মনে করি আমরা! কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, এসব পণ্য ব্যবহারে আপনার ত্বক যে আরও খারাপ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে?
সঠিক পণ্য ব্যবহার করছেন তো?
সৌন্দর্যচর্চায় শ্রেষ্ঠ পণ্য তৈরি করার দাবি করে থাকে অনেক নামীদামী ব্র্যান্ড আর আমরাও অন্ধের মতো এসব চটকদার লেবেল দেখেই তা কিনে ফেলি। অনেকে আবার কোনও একটি বিশেষ ব্র্যান্ড থেকে সবরকম পণ্য কিনে থাকেন। কিন্তু এগুলো কেনার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিৎ এগুলো কিভাবে আমাদের ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের ত্বকের সাথে মানানসই এমন পণ্যই ব্যবহার করা উচিৎ সেটা যেই ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন।
ফেসিয়াল ও স্পা কী আদৌ উপকারে আসছে?
বিভিন্ন পার্লারে ইদানিং ফেসিয়াল এবং স্পা ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ত্বকের তারুন্য এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির কথা বলা হলেও এগুলো কি আসলেই এত উপকারী? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত তাদের ত্বকের জন্য ফেসিয়াল এবং স্পা ব্যবহার করেন তাদের কমপক্ষে তিন-চতুর্থাংশের ত্বকে কোনও উপকার তো হয়ই না বরং ত্বকের স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়।
বাকি এক চতুর্থাংশের ত্বকে আসলেই উন্নতি হয় কিন্তু সেক্ষেত্রে দেখা যায় যথেষ্ট খরচ করতে হয়। ফেসিয়াল ও স্পা ট্রিটমেন্টে আসলে যা করা হয় তা হল, বিভিন্ন রকম ক্রিমের ব্যবহার আপনার ত্বকের উপরিভাগের স্তর উঠিয়ে ফেলা হয় যাতে আপনার রোমকূপ খুলে যায় এবং বাতাসের সংস্পর্শে আসে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে এই প্রক্রিয়ার ফলে আগের চাইতে অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে আপনার রোমকূপে আর ত্বক খারাপ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ টাকার শ্রাদ্ধ ছাড়া আর কিছুই হয় না।
ফেসওয়াশ যখন ক্ষতির কারণ!
এভাবে পার্লারে গিয়ে সৌন্দর্য চর্চা করা ছাড়াও, বাসায় ফেসওয়াশ ব্যবহার করা আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস হয়ে গেছে। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা এমন ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন যাতে স্ক্রাবিং করার উপাদান থাকে কারণ তারা মনে করেন স্ক্রাবিং করলে ব্রন দূর হয়। আসলে কিন্তু বেশি স্ক্রাবার ব্যবহার করলে ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল চলে যায় যেগুলো ক্ষতিকর পদার্থ থেকে ত্বককে সুস্থ রাখে। তাই এসব ফেসওয়াশের বদলে কোমল ক্লিনজার ব্যবহার করুন এবং মুখ ধোয়ার পর ময়শ্চারাইজার প্রয়োগ করুন।
হারবাল উপাদান কি আসলেই নিরাপদ?
ত্বক সুস্থ রাখতে অনেকেই প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত পণ্য কিনে থাকেন। এগুলো কেনার আগে আপনাকে জানতে হবে যে এই পণ্যগুলোতে প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়াও রয়েছে অনেক রকমের রাসায়নিক পদার্থ যেগুলো এই প্রাকৃতিক উপাদানকে কার্যকর রাখে দীর্ঘ সময় ধরে। তাই “প্রাকৃতিক” উপাদানে তৈরি সৌন্দর্যচর্চার উপাদানেও যথেষ্ট পরিমাণে রাসায়নিক থাকে যা আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। এগুলো পুরো মুখে ব্যবহার করার আগে ত্বকের অল্প কিছু অংশে প্রয়োগ করে পরীক্ষা করে নিন সেটা আপনার ত্বকের জন্য মানানসই কিনা।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি এড়াতে আমরা অনেকেই উচ্চমাত্রার SPF যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করি। কিন্তু SPF যতই বেশি হোক না কেন, বেশিরভাগ সানস্ক্রিন অতিবেগুনী রশ্মি এড়াতে পারে না। ব্যবহার করুন এমন সানস্ক্রিন যা অন্যান্য রশ্মি থেকেও আপনার ত্বককে রক্ষা করে। বাইরে বের হবার সময়ে SPF 15 সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ভুল উপাদানের প্রসাধন
সৌন্দর্যচর্চার জন্য যে কোনও পণ্য কেনার সময় তাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের তালিকা দেখে নিন। অনেক পদার্থ আছে যেগুলো ত্বকের উপকার করার চাইতে ক্ষতি করে থাকে। এগুলোর মাঝে রয়েছে ফরমালডিহাইড, পেট্রোলিয়াম, বিসফেনল এ (BPA), ফথ্যালেট, মিনারেল অয়েল ইত্যাদি।
নিজের সুন্দর ত্বকের ক্ষতি আমরা কেউ ই চাই না, বিশেষ করে তা যদি হয় আমাদের মুখের ত্বক। এ কারনেই নিজের বয়স এবং ত্বকের ধরণ বুঝে সৌন্দর্যচর্চা করুন আর এড়িয়ে চলুন ত্বকের অযাচিত ক্ষতি।
এস সি
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-06-21 17:24:07
Source link
Leave a Reply