“থাকবো না তোদের দেশে। আমরা রাগ করেছি। চললাম সবাই। তোরা হিংসা আর কুচুটে বুদ্ধি নিয়েই থাক।”
এক রাশ অভিমান নিয়ে ছানা-পোনা, ঠানদি, নপিসি, ফুলকাকুদের নিয়ে আর ‘মিসেস’-দের নিয়ে ঘর (জঙ্গল) ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে ওরা। দলের হর্তাকর্তা অবশ্য বাবামশাই। তাঁর পিছনে নেই নেই করে ১৪ জন। মানে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ১৫। এদের মধ্যে তিনটে আবার একদমই কুচো। সারাদিন বাঁদরামি করেই চলেছে। নাতিগুলোকে আবার বেশি বকা দিতে পারেন না দলের নেতা। তবে মায়েদের একটা ডাকেই সুর সুর করে দলে ফিরে আসে তিনটে দস্যি।
হাঁটছি মোরা হাঁটছি দেখো
প্রায় একমাস হতে চলল ওরা হাঁটছে। খাবার, স্নান, ঘুমোনো প্রাতঃকৃত্য নিয়ে ওরা ভাবে না। সেটা সময় সুযোগ বুঝে যেখানে সেখানে সেরে নিলেই হল। কিন্তু, ঘুমের জন্য চাই একটা নিরাপদ জায়গা। না হলে বদলোকের তো আর অভাব নেই। হিংস্র পশুগুলো ছানাকে কামড় কুমড়ে খেয়ে ফেলতে পারে। আর মিনসেগুলো তো বলেই বেড়ায় যে, “মড়া হাতি লাখ টাকা।”
“তাহলে আর কি? কটা বুলেট ছুঁড়ে মারো, আর আমরাও পটাপট পটল তুলি।”
“হুঁ হুঁ বাবা সেসব হচ্ছে না। আমরা বেজায় সজাগ। একদল ঘুমোই তো অন্য দল জাগি। জেগে জেগে ঘুমন্তদের সুন্দর শান্ত মুখগুলো দেখে মুগ্ধ হই। এক পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু আমাদের বউ মেয়েদের অকাতরে ঘুমোনোর সুন্দর ছবি এভাবে ফাঁস করা কি উচিত হল? ঘুমের সময় তো কারও খেয়াল থাকে না। যে যেভাবে খুশি ঘুমোয়। আর সেই সুযোগেই টুক করে ক্যামেরায় সেসব ছবি তুলে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার কোনও মানে হয়। বলি পশু অধিকার রক্ষা কমিটিগুলোরও কি করোনা হল? আরে তোদের দুর্দশার প্রতিবাদ করেই তো চিনের ইউহান এলাকা ছেড়ে চলে এলাম। তাও তোরা এরকম অসভ্যতামি করলি? শেষে মেয়ে-বউদের ঘুমিয়ে থাকার ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলি, হাতি বলে কি মানুষ না?
গল্প হলেও সত্যি
উপরের কথাগুলো সবওওওব কল্পনা। কী কী হতে পারত তারই একটা মনগড়া গল্প। তবে হ্যাঁ, এই গল্পটিও কিন্তু সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।
আসলে সোশ্যাল মিডিয়া এবং মিডিয়াতে কয়েকটা ছবি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। একদল হাতি জঙ্গলের মধ্যে একটি ঘাস জমিতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। সঙ্গে আবার তাদের ছোট্টো ছানা। সত্যি বলতে কি চারদিকে এত খারাপ খবর আর অভিজ্ঞতার মাঝে এই ছবিটি মানুষের মনকে হঠাৎ করে ভালো করে দিয়েছে। আর হ্যাঁ, এই মন ভালো করা ছবিটি কিন্তু বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে চিন-ই।
চিনের ইউহান প্রদেশ সংলগ্ন এলাকা থেকে তিনটে বাচ্চা হাতি সহ ১৫ হাতির একটি দল বছর দেড়েক আগে রওনা দিয়েছিল। তাদের গন্তব্যস্থল কোথায় কেউ জানে না। তবে এই প্রায় দেড় বছরের মধ্যে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা তার পার করে ফেলেছে। আর এই হাতিদের উপর নজর রাখছেন চিনা বিশেষজ্ঞরা। হাতির দলকে কড়া নজরে রেখেছ চিন সরকারও। ১৪ টি ড্রোন এবং প্রায় ৫০০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে হাতিগুলোকে নিরাপদ রাখতে। এঁরাই প্রতিদিন হাতিদের গতিবিধি জানাচ্ছেন।
ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংএর জিননিং এলাকার কাছে হাতির পালের অকাতরে ঘুমোনোর ছবি এখন আন্তর্জাতির সংবাদমাধ্যমগুলির পোর্টালে পোর্টালে ঘুরছে।
ওরা যে শুধু শান্তভাবে হেঁটে চলেছে তাই-ই নয়, রাস্তায় যেতে যেতে কুর্কীতিরও শেষ নেই তাদের। এদের কাণ্ড দেখে পাড়ার ছেনো মস্তানও লজ্জা পাবে। হাঁটতে হাঁটতে দুটো হাতি তো এমনতিই দলছুট হয়ে গেছে। কোন চুলোয় কার ঘরে গিয়ে ঢুকেছে কেউ জানে না। গ্রামের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে খেতের ফসল নষ্ট করেছে। আবার শহরের পিচ ঠালা রাস্তা দিয়ে গজগামিনী চালে র্যাম্প ওয়াকও করেছে।
কী যে তাদের উদ্দেশ্য কেউ জানে না। পশু বিজ্ঞানীরা তো রীতি মতো অবাক। এমন ধারা ঘটনা আগে কেউ দেখেছে বা শুনেছে বলে তো কেউ শোনেনি। তাই হাতির হাঁটাহাঁটি নিয়ে গবেষণার নতুন বিষয়ও পেয়ে গেছেন তাঁরা।
আপাতত চিন সরকারের দাবি এই এশিয় হাতিগুলি তাদের সম্পত্তি। যদিও চিনাম্যানদের কথায় কেউ লোকজন আজকাল ভরসা করা ছেড়ে দিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপাতত এই হাতিগুলি বেশ জনপ্রিয়। ওরা যেন সুস্থ থাকে সেটাই এখন প্রার্থনা সকলের।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-18 15:44:52
Source link
Leave a Reply