হাইলাইটস
- মন দিয়ে কাজু বরফি খাচ্ছে রিঙ্কা। ঠিক খাচ্ছে না, কাজু বরফির উপরে রুপোর তবকগুলো আলতো করে টেনে টেনে তুলে মুখের ভিতর দিচ্ছে। মাঝে মাঝে চোখের কাছ নিয়ে অবাক হয়ে তবকগুলো দেখছেও। কী পাতলা ফিনফিনে রে বাবা?
- রিঙ্কাকে দেখতে দেখতে ঈশিতাও বেশ মজা পাচ্ছে। মেয়ের আগ্রহ মায়ের মতোই।
- ঈশিতাও ছোটোবেলায় এভাবে মিষ্টির গা থেকে রুপোর তবক টেনে টেনে তুলে মুখে দিত। এখনও মাঝে মাঝে দেয়।
রিঙ্কাকে দেখতে দেখতে ঈশিতাও বেশ মজা পাচ্ছে। মেয়ের আগ্রহ মায়ের মতোই। ঈশিতাও ছোটোবেলায় এভাবে মিষ্টির গা থেকে রুপোর তবক টেনে টেনে তুলে মুখে দিত। এখনও মাঝে মাঝে দেয়।
অবাঙালি বাড়িতে বিয়ে হওয়ার সুবাদে আত্মীয় স্বজনের তরফে বাড়িতে বড্ড শুকনো মিষ্টি আসে। কাজু বরফি, গোলাপজাম, লাড্ডু, পেস্তা সন্দেশ, সবকিছুর উপরেই রুপোর তবক। আদ্যোপান্ত বাঙালি ইশিতার কোনও মিষ্টিতেই আপত্তি নেই। মেয়ে রিঙ্কাটাও হয়েছে মায়ের মতো। রসালো রসগোল্লা আর আর শুকনো বরফি সবই চলে ওদের।
রিঙ্কা যেদিন জানতে পারল যে মিষ্টির উপর ওই পাতলা রুপোলি রঙের আস্তরণটি আসলে রুপোর তবক সে তো বেজায় অবাক। মিষ্টির মধ্যে রুপো? সে তো রূপকথার গল্পে শোনা যায়। সোনার থালায় রুপোর খাবার। ঈশিতা হাসতে হাসতে বলে যে এরকম অনেক কিছুর মধ্যেই রুপোর তবক দেওয়া হয়। সৌখিন পান, পান মশলা, মোহনভোগের চেহারা সুন্দর করতে এই তবকের ব্যবহার করা হয়। একে ভারতীয় স্টাইলে গার্নিশিং বলা যেতে পারে। তাছাড়া রুপোর তবক অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল হওয়ায় এর প্রয়োগে খাবার বেশ কিছুদিন ভালো থাকে। কিন্তু ওই যে বলে, কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। অধিক পরিমাণ রুপোর তবক শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
সেকালের পথ্য
রুপোর তবকের প্রধান ব্যবহারকে সম্পূর্ণ ভারতীয় বলে দাবি করা হলেও মোঘল এবং অওধি সংস্কৃতিতেও এর যথেষ্ট ব্যবহার ছিল। এবং সেসব ক্ষেত্রে মিষ্টি ছাড়া অন্য খাবারেও রুপোর তবক ব্যবহার করা হত।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে রুপোর তবকের ব্যবহার দেখা যায়। বরং বলা ভালো সেখান থেকেই এই তবক ব্যবহারের উৎপত্তি। তখন অবশ্য রুপোর সঙ্গে মুক্তো এবং কুঁচের খোলার ভস্মের সমারোহে এই তবক তৈরি হত।
একালের বিপদ
ফিনফিনে পাতলা রুপোর তবকের ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু হাল আমলে এর ব্যবহারে মাত্রা অনেক বেড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাবারের ভ্যারাইটি বৃদ্ধির কারণে সিলভার পেপারের চাহিদাও বেড়েছে। বিশেষ করে উৎসবের মরশুমে এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। আর তখনই এতে ভেজাল মেশাতে শুরু করে একদল অসাধু ব্যবসায়ী।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রুপোর পরিবর্তে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়। শরীরে সরাসরি অ্যালুমিনিয়ামের প্রবেশ কখনওই ভালো নয়। অনেক সময় আবার নিকেল, লেড বা ক্যাডমিয়ামের মতো ভয়ানক ধাতুর তবককেও রুপোর তবক বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। শরীরের পক্ষে এই সমস্ত ধাতু মারাত্মক। এই অসাধু ব্যবসা ভারতের মতো দেশে গজিয়ে ওঠা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। রুপোর তবকে ভেজাল মেশানো হচ্ছে, এ নিয়ে কেউ মাথাো ঘামায় না। কিন্তু এই সমস্ত বিষাক্ত ধাতু ধীরে ধীরে শরীরে জমে জমে ক্যানসারের মতো মারাত্মক অসুখ হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পেটের অসুখ তো আকছাড় হয়ে থাকে।
খাঁটি তবক চেনার উপায়
কিন্তু তা বলে মিষ্টি খাওয়া ছাড়বেন না। তার চেয়ে বরং কৌশলে জেনে নিন রুপোর তবকটি আসল না নকল।
– রুপোর তবক হাতে নিয়ে দুই আঙুলে টিপ দিয়ে ঘঁষে নিন। যদি তবকটি আঠার মতো আঙুলে লেগে থাকে তাহলে বুঝবেন তাতে অ্যালুমিনিয়ামের ভেজাল আছে।
– রুপোলি তবকের খানিকটা অংশ নিয়ে আগুনে পোড়ান। যদি সেটি আগুনের স্পর্শে নিমেষে কুচকে গিয়ে ছোট্ট বলের মতো হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন সেটি খাঁটি। আর যদি দেখেন যে সেটি পুরোপুরি পুড়ে গিয়ে ছাই রং হয়ে গেছে তাহলে তাতে নিশ্চিতভাবে অ্যালুমিনিয়ামের ভেজাল মেশানো আছে।
– রুপোলি তবক হাতের তালুতে ভালো করে ঘঁষুন। যদি দেখেন সেটি হাতে চিপতে যাচ্ছে তাহলে সেটি খাঁটি। আর অ্যালুমিনিয়ামের ভেজাল থাকলে তবকটি গোলাকারভাবে গুটিয়ে যাবে।
– টেস্ট টিউবে রুপোলি তবক নিয়ে তাতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে যদি দেখা যায় তাতে স্বচ্ছ, অস্পষ্ট সাদা রঙের তরল ছিঁটে রয়েছে তাহলে বুঝবেন সেটি খাঁটি রুপো।
তাহলে পরেরবার মিষ্টি খেতে গিয়ে একটু সাবধানে থাকবেন। একবার ভেজাল খেলে কিছু হবে না, এমন মনোভাব থাকলে ভবিষ্যতে বড়সড় রোগ ভোগান্তির জন্য তৈরি হতে থাকুন। নিজেকে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখার ইচ্ছে থাকলে সতর্ক এবং সচেতন হোন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-18 13:34:39
Source link
Leave a Reply