সমস্যাঃ আমার বয়স ৩০ বছর। ওজন ৫৬ কেজি। অবিবাহিত। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে আমার যক্ষ্মা ধরা পড়ে। চিকিৎসকের প্রথম পরামর্শে দুই মাস আমি একটি ট্যাবলেট প্রতিদিন চারটি করে সেবন করি। চিকিৎসক পরে আরেকটি ট্যাবলেট দুটি করে চার মাস খেতে বলেন। পরের ট্যাবলেটটি তিন মাস খাওয়ার পর আমার জন্ডিস ধরা পড়ে। চিকিৎসক আমাকে যক্ষ্মার ওষুধ খেতে নিষেধ করেন। জন্ডিস ভালো হওয়ার পর আবার যক্ষ্মার ওষুধ সেবন করে কোর্স সম্পন্ন করি। যক্ষ্মার ওষুধ সেবনের শুরুতে আমার কাশি, জ্বর ও খাওয়ায় অরুচি ছিল। তখন আমার ওজন ছিল ৫০ কেজি। যক্ষ্মার চিকিৎসা নেওয়ার পর আমার শারীরিক উন্নতি হয়। জ্বর চলে যায়, কাশি কমে যায়, খাওয়ায় রুচি আসে এবং আমার ওজন বাড়তে থাকে। তিন মাস পর আমাকে আর যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে চিকিৎসক জানান। দুই মাস পর আমার মাঝেমধ্যেই কাশি হয়। শ্বাসকষ্ট ও বুকে চাপ অনুভব করি। চিকিৎসকের পরামর্শে আমি একটি ইনহেলার দিনে দুবার ব্যবহার করতে থাকি। দুই মাস ব্যবহারের পর আমার কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমে যায়। তারপর তিন মাস আমি নিয়মিত দুই ঘণ্টা করে ফুটবল খেলেছি। তাতে আমার বুকের কোনো অসুবিধা বা শ্বাসকষ্ট হয়নি। তারপর আমি ইনহেলারটি বন্ধ করে দিই এবং বন্ধ করার পর এক মাস আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। তারপর আবার আমার প্রায় প্রতি রাতেই কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাশির সঙ্গে শক্ত দানা দানা কফ বের হয়। উল্লেখ্য, গত রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের সময় ঠান্ডা শরবত খেতাম। এর পরপরই আমার কাশি, শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। এ সমস্যা নিয়ে আমি আরেকজন চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আমাকে কিছু ওষুধ ও ইনহেলার দেন। তা ব্যবহারের পর আমার সমস্যার কিছুটা উন্নতি হয়, কিন্তু পুরোপুরি ভালো হয়নি। তারপর আবারও তাঁর কাছে গেলে তিনি আমাকে ওষুধ পরিবর্তন করে দেন।
ওষুধ ব্যবহার করলে ভালো থাকি, আর বন্ধ করলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। এখন লক্ষ করছি, আমার ঘন ঘন হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে। উল্লেখ্য, আমার দুই মামার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। তিন মাস ধরে আমি কোনো ওষুধ ব্যবহার করছি না। ফলে আমার কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। এখন মাঝেমধ্যে আমর কাশির জন্য রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়। আমার এমনটা কেন হচ্ছে? এবং আমি কি সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ আপনি সম্ভবত হাঁপানি রোগে ভুগছেন। হাঁপানি বা অ্যাজমা হলো শ্বাসনালির প্রদাহজনিত একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এই প্রদাহের জন্য শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং বুকে চাপ অনুভূত হয়। অ্যাজমা চিকিৎসার একটি মূল উপাদান হলো নিয়মিত, অবিরামভাবে শ্বাসনালির প্রদাহ কমানোর ওষুধ বা অ্যান্টি ইনফেলামেটরি বা স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করা। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে শ্বাসনালির প্রদাহ কমে যায়। ফলে কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ অ্যাজমার অন্য উপসর্গগুলোর উন্নতি হয়। স্টেরয়েড ইনহেলার ছাড়াও হাঁপানির অন্যান্য ওষুধ, যেমন মনটিলুকাস্ট, লং অ্যাকটিং থিওফাইলিন, অ্যান্টি হিস্টামিন এবং প্রয়োজনমতো অ্যাজমা উপসর্গ উপশমকারী ওষুধ সালবিউটামল ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়।
অ্যাজমার ওষুধগুলো কখনোই হঠাৎ বন্ধ করা উচিত নয়। অ্যাজমার উপসর্গগুলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে ওষুধ বন্ধ করতে হয়। আপনি রোগনিয়ন্ত্রণের আগেই হঠাৎ সব ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছেন, যা কখনোই করা উচিত নয়।
ওষুধ ছাড়াও একজন হাঁপানির রোগীকে তার রোগের উত্তেজন বা ট্রিগার ফ্যাকটর জানা দরকার। যেমন-ধুলাবালি, ঠান্ডা পানি পান করা, বায়ুর তাপমাত্রা পরিবর্তন, শ্বাসনালির ইনজেকশন ইত্যাদি। তবে সবার ট্রিগার ফ্যাকটর এক নাও হতে পারে। তাই আপনার বা যেকোনো হাঁপানি রোগীর উচিত হবে, তার রোগের জন্য ট্রিগার ফ্যাকটর চিহ্নিত করা এবং যতদূর সম্ভব তা এড়িয়ে চলা। আপনি নিয়মিত সঠিক ওষুধ, ওষুধের সঠিক মাত্রা এবং পদ্ধতির মাধ্যমে হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনে অবশ্যই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। তবে একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিলে ভালো।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা· মো· দেলোয়ার হোসেন
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৩, ২০০৮
Leave a Reply