মানুষের অঙ্গ বিন্যাসে সবার কাছেই খুব সহজে আলোকিত অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় হাত। আর সেই মোলায়েম হাতের আঙ্গুলের নানা ভেদে ফুটে উঠে সৌন্দর্যের ভিন্ন ব্যাকরণ। হাতের আঙ্গুলকে যেমন নিয়মিত পরিচর্যায় সুন্দর রাখা যায় তেমনি সেই আঙ্গুলে ধারণ করা যায় সৌন্দর্যবর্ধনকারী নানা অনুষঙ্গ। এমনি এক জনপ্রিয় অনুষঙ্গ আংটি। এই জনপ্রিয় অলংকারটি মানুষের সৌন্দর্য বিকাশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। শুধু সৌন্দর্যের প্রকাশে নয়, বরং আংটির ব্যবহার ঘটে সম্পর্কের নতুন স্তর স্থাপনে। বিয়েতে বন্ধনের সূচনায় আংটি অনেক বেশি মানুষের কাছে পরিচিত অলংকার। সময়ের ধারাবাহিকতায় আংটির ব্যবহার যেমন বেড়েছে তেমনি মানুষের কাছে আংটির গ্রহণযোগ্যতাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। শুধু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করতেও নানা উপকরণের আংটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর আংটির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দেখা যায় নানা বৈচিত্র্য। বিয়ের নিদর্শন হিসেবে নির্দিষ্ট আঙ্গুলে আংটি পরার রেওয়াজ থাকলেও এখন কিন্তু ফ্যাশনের চর্চা হিসেবে সব আঙ্গুলে আংটি পরা হয়। অনামিকাতে আংটি পরা সাধারণ রেওয়াজ হলেও কড়ে আঙ্গুল কিংবা বুড়ো আঙ্গুলেও আংটির ব্যবহার এখন অনেকের নজর কাড়ে। হাতের ত্বকের যথার্থ যত্ন নিলে সঙ্গে আংটি আপনাকে দিতে পারে বাড়তি সৌন্দর্যের সংযোগ। আংটির উপকরণগত ভিন্নতাও সৌন্দর্য নির্ধারণে বাড়তি ভূমিকা রাখে। পিতলের আংটি, রুপার আংটি, স্বর্ণের আংটি, হিরার আংটি, হোয়াইট গোল্ড, মাটির আংটি, সিরামিকের আংটি এমনকি কাঠের আংটির মতোও বৈচিত্র্যময় উপকরণে এই অলংকারটিতে নতুনত্ব আর আভিজাত্যের ছোঁয়া দেয়া হয়।
সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান নিজে যেমন হাতে আংটি পরতে ভালোবাসেন তেমনি অন্যদেরও পরামর্শ দেন ফ্যাশন বৈচিত্র্য তৈরিতে আংটির ব্যবহারে। তার মতে, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই শুধু আংটির প্রয়োগ নয়, বরং বয়সের ভারিক্কি, ব্যক্তিত্বের প্রকাশ আর তারুণ্য ফুটিয়ে তুলতে আংটির বহুমাত্রিক ব্যবহার আছে। যেমন- হালকা ফ্লোরাল নকশার আংটি আপনার সৌন্দর্য দেবে প্রাকৃতিক অনুভুতি তেমনি রাফ এন্ড টাফ আংটিতে আপনি হয়ে উঠবেন তারুণ্যের প্রতিনিধি। আবার শুধু প্রায়োগিক বিচারে আংটির ব্যবহার নয়, বরং বিশ্বাস থেকেও আংটির ব্যবহার অনেকের কাছে ভিন্নতা আনে। যেমন, সৌন্দর্য প্রকাশের পাশাপাশি ভাগ্য ফিরিয়ে আনতেও অনেকে নানারকম পাথরের আংটি ব্যবহারে করেন। পোখরাজ, ফিরোজা, গোমেদ, নীলা, ক্যাটসআই, রুবি, পান্না, হিরা, অ্যাকোয়া মেরিন, রক্ত প্রবাল ইত্যাদি নানা পাথরের আংটি ধারণ করে আপনি আপনার ভাগ্য পরিবর্তনেরও চেষ্টা করতে পারেন। আংটির ডিজাইনেও আছে নানারকমের ভিন্নতা। ফুল লতা পাতা যেমন প্রাধান্য পায় তেমনি জ্যামিতিক নকশা কিংবা নানা প্রতিকৃতি বর্ণমালা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আংটির ডিজাইনে ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায়। অনেকে আবার হাতের সঙ্গে পায়ের নখেরও সৌন্দর্য প্রকাশে আংটি ব্যবহার করেন। আর কেউ কেউ গলার চেইনের সঙ্গে লকেটের মতো করে আংটির ব্যবহার শুরু করেছেন অনেকদিন থেকেই।
নানাধরনের আংটি যেমন আছে তেমনি নানা ডিজাইনের আংটি কিনতে আপনি যেতে পারেন নিউ মার্কেটে। এখানের অলংকারের দোকানগুলোতে নানা বাজেটে খুঁজে পাবেন আপনার পছন্দের আংটি। গিফটশপগুলোতেও আজকাল নানা উপকরণের আংটি পাওয়া যায়। এছাড়া জেমস গ্যালারিতে পাবেন কোরিয়ান নকশায় ফুটিয়ে তোলা পাথরের আংটি যা আপনাকে পার্টি ইমেজ দেবে। জেমস্ গ্যালারির শো’রুম আছে বসুন্ধরা, পিংক সিটিসহ অভিজাত বিপনী বিতানগুলোতে। মূল্যসীমা ২৫০-৮৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও এ বাজেটে আপনি পাবেন আমেরিকান ডায়মন্ডের আংটি। আড়ং-এর শোরুমগুলোতে পাবেন রুপা, রুবি, পান্না, টোপাজ ও পার্লের আংটি ৬০০-১০০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ক্রিয়েশনস, এরাবিয়ানস ইত্যাদির শোরুমগুলোতে নানা ডিজাইনের আংটি স্থান পেতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়। আর ডিজাইনার আংটি খুঁজতে হলে চলে যেতে পারেন মায়াসিরে। এখানে ১৫০০ টাকা বাজেটেই মিলবে আপনার পছন্দের বস্তুটি।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ২২, ২০০৯
Leave a Reply