আমি যখন এইচএসসিতে পড়ি তখন একদিন মজা করে ফুপাতো বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিই। তখন সে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কারণ সে ধনী পরিবারের সন্তান। এরপর থেকে আমি তার পিছু নিই। আমার জেদ ছিল, তার সঙ্গে এক দিনের জন্য হলেও প্রেম করব। মোবাইল ফোনে অনেক কথা বলি, কিন্তু সে রাজি হয়নি বরং আমিই তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। অবশেষে রাগ করে আমার খালাতো বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিই। সে রাজি হয়ে যায় এবং তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলি। কিন্তু মন থেকে আমি তাকে পছন্দ করি না। এখন আমি আমার পড়াশোনার জন্য তার সঙ্গে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সে আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে চায় এবং আমাকে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে বলে জানায়। আমার পক্ষে তাকে গ্রহণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এসব চিন্তাভাবনায় আমার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এখন আমি কী করব।
রাতুল
ময়মনসিংহ
একটি মেয়েকে না পেয়ে আরেকজনকে প্রেম নিবেদন করে প্রেমের ভান করাটা একেবারেই ঠিক হয়নি। ভুল যখন করেছেন, তখন আর কী করা। আপনি মেয়েটিকে আর কষ্ট দেবেন না। তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না। এতে শুধু তার কষ্ট বাড়বে।
——————
ছেলেটির বয়স ২৬ বছর। আমার ২৩ বছর। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় আমার ছোট ভাইকে পড়ানোর জন্য লজিং রাখা হয় তাকে। আমার বিয়ে হয়েছে দুই বছর। পরিবারের চাপেই অসম বয়সের একজন পুরুষকে বিয়ে করতে বাধ্য হই স্নাতক পড়ার মাঝামাঝি সময়ে। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় ভালো চাকরির সুবাদে আমার স্বামী অস্ট্রেলিয়া চলে যান। বিয়েটা মানসিকভাবে মেনে নিতে না পারায় মনে মনে খুশিই হই এবং নিজের লেখাপড়ায় মন দিই। তখনই লজিং থাকা ওই ছেলের কাছ থেকে ভালোবাসা এবং পরে বিয়ের প্রস্তাব পাই। প্রথমে রাজি হইনি। কিন্তু তার কথাবার্তা, চালচলন এবং রাত হলেই মোবাইল ফোনের এসএমএস দেখতে দেখতে নিজেকে তার কাছ থেকে বেশি দিন দূরে রাখতে পারিনি। একসময় আমাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্কও হয়। সাত মাস পর আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গোপনে তা থেকে মুক্তি পাই। এদিকে আমার স্বামী অস্ট্রেলিয়ায় নেওয়ার জন্য ভিসা পাঠালে ছেলেটিকে বিয়ের কথা বলি, কিন্তু সে সরাসরি নিষেধ করে দেয়। সে নাকি আমার দেহটাকে পাওয়ার জন্যই ভালোবাসার অভিনয় করেছে। আমি এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। পড়াশোনা একরকম বাদই বলা যায়। মাঝেমধ্যে মনে হয়, স্বামীকে তালাক দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাই। যেখানে কেউ আমাকে চিনবে না; না হয় এই নষ্ট শরীরটাকে শেষ করে ফেলি।
তৃণা (ছদ্মনাম)
উত্তরা, ঢাকা।
এসব ব্যাপারে খোলাখুলি কথাবার্তা বলা ভালো। ওই ছেলেটি একজন প্রতারক। তার অসদাচরণের জন্য নিজেকে নষ্ট ভাবার কোনো কারণ নেই।
তবে আপনার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। এখন আপনার কর্তব্য, স্বামীকে সব খুলে বলা। এরপর যদি তিনি আপনাকে গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি তাঁর কাছে চলে যান। ভিন্ন দেশ ও ভিন্ন সমাজে ভালো লাগতেও পারে। যদি স্বামী এই অবস্থায় গ্রহণ না করেন, তবে নতুন করে জীবন তৈরি করুন। ভুল যখন করেছেন, তখন সবটাই মেনে নিয়ে নতুনভাবে শুরু করতে হবে।
—————————
আমি বিএসএস শেষ বর্ষের ছাত্র। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। আমি বিএসএস পরীক্ষায় পাস করার পর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাকে বিয়ে করব বলে সিদ্ধান্ত নিই। সমস্যা হলো, আমার সহপাঠী একটি মেয়ে আমাকে খুব ভালোবাসে। প্রথমে আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে আমি অন্য একটি মেয়েকে ভালোবাসি। কিন্তু সে বুঝতে নারাজ। এমনকি আমি তার ভালোবাসা অস্বীকার করলে সে আত্মহত্যা করবে বলে জানায়। আমি এ কথাগুলো আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে বলি। পরে আমাদের দুজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী কলেজের বান্ধবীকে বলি, আমরা অনেক আগেই বিয়ে করে ফেলেছি। এ কথা শুনে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় বেশ কয়েকজন বান্ধবী ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বেশ কয়েক দিন পর কলেজে এসে আমাকে খুব মিনতি করে বলে, আমি তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী হতেও রাজি। যদি এর পরও তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি তাহলে নাকি সে সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করবে। এখন আমি কী করব বুঝতে পারছি না।
শৌখিলুর রহমান
ফরিদপুর
কোনো মেয়ের কাছে যদি আপনি কথা দিয়ে থাকেন, তবে আরেক জায়গায় আপনার সম্পর্ক তৈরি হওয়া অসম্ভব।
আপনি নিজের কাছে প্রশ্ন রাখুন, আপনি কি এক জায়গায় স্থির? আপনার নিশ্চিত অবস্থান বলে দেবে, আপনি কোথায় কথা দিয়েছেন।
———————-
আমি স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমার চাচাতো বোনের দেবরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। আমাদের সম্পর্কের কথা এক বছরের মধ্যেই দুই পরিবারে জানাজানি হয়ে যায়। আমাদের পরিবার এটা কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না। আমার মা-বাবা বলেন, একই পরিবারে দুই বোনের বিয়ে হতে পারে না। আমার বোন ও তার স্বামী এই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না। ছেলেটি কোনো দিক থেকেই অযোগ্য নয়। সামাজিকভাবে ও বৈধভাবেই আমি ওকে পেতে চাই। আমি মা-বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় তাঁদের কষ্ট দিয়ে কিছু করতে পারছি না। এর মধ্যে ও আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছে। সে বলেছে, কেউ যখন রাজি হচ্ছে না, তাহলে আমরা বিয়ে করে ফেলি। আপা, আমি কি খুব অসামাজিক কাজ করেছি? আমি এখন খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
পুষ্পিতা
চট্টগ্রাম।
মা-বাবা ও পরিবারের সবার সম্মতি নিয়ে বিয়ে করলে ভালো হয়। এখন যদি ছেলে যোগ্য হয়, আপনাদের মধ্যে ভালোবাসা-ভালো লাগা থাকে, তাহলে একটা সুন্দর সম্পর্ক কেন বিয়েতে পূর্ণতা পাবে না।
সমাজের সব বাধাই কাটিয়ে ওঠা যায়। আপনারা চেষ্টা করুন, নিশ্চয়ই পারবেন।
সারা যাকের
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২২, ২০০৯
————————–
এমন অনেক সমস্যা আছে যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
Leave a Reply