এসেনশিয়াল অয়েল কী?
উদ্ভিদ থেকে নিষ্কাশিত একটি যৌগিক উপাদান হল এই এসেনশিয়াল অয়েল। এই তেলগুলির মধ্যে উদ্ভিদের সুগন্ধ, স্বাদ বা এসেন্স থেকে যায়। এই সুগন্ধি যৌগগুলি প্রতিটি এসেনশিয়াল অয়েলের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। পাতন প্রক্রিয়া অথবা কোল্ড প্রেসিংয়ের মতো মেক্যানিক্যাল প্রক্রিয়ায় এসেনশিয়াল অয়েল নিষ্কাষিত করা যায়। উদ্ভিদ থেকে সুগন্ধযুক্ত রাসায়নিক নিষ্কাশিত করার পর একটি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। তবে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসেনশিয়াল অয়েল তৈরি করা হয় বলে, এটিকে আসল এসেনশিয়াল অয়েল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।
এসেনশিয়াল অয়েল কী ভাবে কাজ করে
সাধারণত অ্যারোমাথেরাপিতে এসেনশিলায়ল অয়েল ব্যবহৃত হয়। এটি খাওয়া উচিত নয়। নানান পদ্ধতিতে ঘ্রাণ নেওযার মাধ্যমে এই তেল কাজে লাগানো হয়। এসেনশিয়াল অয়েলে উপস্থিত রাসায়নিক উপাদান শরীরের সঙ্গে নানান ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে। যেমন- ত্বকে লাগানোর ফলে কিছু উদ্ভিজ রাসায়নিক অবশোষিত হয়ে যায়। আবার এসেনশিয়াল অয়েলের সুগন্ধ ঘ্রাণ নিলে মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমকে উদ্দীপিত করা যায়। মস্তিষ্কের এই অংশটি আবেগ, ব্যবহার, সুগন্ধের ধারণা, স্থায়ী স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের উপকারিতা
দেখা গিয়েছে, অবসাদ ও অ্যাংজাইটিতে গ্রস্ত প্রায় ৪৩ শতাংশ ব্যক্তি কোনও না-কোনও ধরণের থেরাপি ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে স্বস্তি পেয়েছেন। অ্যারোমাথেরাপি সংক্রান্ত প্রাথমিক সমীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল লাভ করা গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, প্রথাগত থেরাপির পাশাপাশি কিছু কিছু এসেনশিয়াল অয়েল অবসাদ ও অ্যাংজাইটি সাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। তবে অবসাদ ও অ্যাংজাইটি থেকে মুক্তিতে এসেনশিয়াল অয়েলের ভূমিকার ওপর যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তা এখনও অসম্পূর্ণ। তবে ম্যাসাজের সময় এই তেল ব্যবহার করলে অবসাদ মুক্ত হওয়া যায়। যদিও যতক্ষণ ম্যাসাজ করা হয়, তত ক্ষণই এটি কার্যকরী হয়। আবার একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, অ্যারোমাথেরাপি অ্যাংজাইটি ঠিক করতে খুব একটা কার্যকরী নয়।
ইনফ্ল্যামেশন কমাতে
কিছু টেস্ট টিউব স্টাডির মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে, এসেনশিয়াল অয়েলের অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি প্রভাব রয়েছে। ইনফ্ল্যামেশান কমানোর ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল অয়েল কতটা কার্যকরী, সে সম্পর্কে ইঁদুরের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে ইতিবাচক ফলাফল লাভ করা গেলেও, মানবশরীরে এ বিষয় খুব কমই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাই ইনফ্ল্যামেটারি রোগের ওপর এসেনশিয়াল অয়েলের কার্যকরীতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে এখনও শক্তপোক্ত কোনও তথ্য উঠে আসেনি।
অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ল
পেপারমিন্ট ও টি ট্রি-র মতো এসেনশিয়াল অয়েলের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়ল প্রভাবের কারণে এদের ওপর নানান টেস্ট টিউব সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এর কিছু ইতিবাচক ফলাফলও প্রকাশ্যে এসেছে। নির্দিষ্ট কোনও এসেনশিয়াল অয়েল মানবশরীরের ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করেছে কী না, তা এখনও এই সমীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয়নি।
অন্যান্য ব্যবহার
অ্যারোমাথেরাপি ছাড়াও নানান কাজে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহৃত হয়। অনেকেই নিজের বাড়িকে সুগন্ধে ভরিয়ে রাখতে এটি ব্যবহার করেন। আবার ঘরোয়া উপায় তৈরি ফেস প্যাক বা মাস্ক, হেয়ার মাস্ক ইত্যাদিকে সুগন্ধী করার জন্যও এই তেল ব্যবহৃত হয়। আবার মসকিউটো রেপিলেন্ট হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল অয়েলের কার্যকরিতা প্রশ্নাতীত নয়।
নিরাপত্তা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রাকৃতিক হলেই যে তা নিরাপদ, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। উদ্ভিদ-জাত ও হার্বাল প্রোডাক্টে এমন অনেক বায়োইঅ্যাক্টিভ যৌগ থাকে, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। এসেনশিয়াল অয়েলও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে কোনও তেলের সঙ্গে এই এসেন্সের মিশ্রণ ঘটিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে বা এসেনশিয়াল অয়েলের ঘ্রাণ নিলে তা বিশেষ কোনও ক্ষতির কারণ হয় না।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-04 17:36:53
Source link
Leave a Reply