হাইলাইটস
- কলকাতায় রবিবারের ফ্লুরিসের ব্রেকফাস্ট আমার একটা অপেক্ষার দিন।
- চারজন আসি এক এক সানডে এক একজনের খরচ। খেতে খেতে ঠিক করলাম আগামী কালের সন্ধ্যা স্ন্যাকস হবে গ্লেনারিসে।
- সবাই রাজি। এটা ২০১৮ নভেম্বর মাসের গল্প। তখনও জানতাম না যে খুব শীঘ্রই আমাদের জীবনে এক বন্দি সময় আসছে। সন্ধ্যা ছটায় কলকাতা ছাড়লাম।
কলকাতায় রবিবারের ফ্লুরিসের ব্রেকফাস্ট আমার একটা অপেক্ষার দিন। চারজন আসি এক এক সানডে এক একজনের খরচ। খেতে খেতে ঠিক করলাম আগামী কালের সন্ধ্যা স্ন্যাকস হবে গ্লেনারিসে। সবাই রাজি। এটা ২০১৮ নভেম্বর মাসের গল্প। তখনও জানতাম না যে খুব শীঘ্রই আমাদের জীবনে এক বন্দি সময় আসছে। সন্ধ্যা ছটায় কলকাতা ছাড়লাম। বাহন, সুইফ্ট। তিন চারদিনের ভ্রমণ তাই বিশেষ কিছু সঙ্গে নিলাম না শুধু গরম জামা ছাড়া। রুট ধরলাম জাতীয় সড়ক দুই ধরে পানাগর, থেকে মোরগ্রাম ফারাক্কা, মালদা, কিষাণগঞ্জ হয়ে সকাল দশটা নাগাদ শিলিগুড়ি, সেখান থেকে রোহিণীর রাস্তা ধরলাম।
রোহিণীতে ভালো করে ম্যাগী খেয়ে ওখান থেকে সোজা কর্শিয়াং, টুং, সোনাডা, ঘুম পেরিয়ে বাতাসিয়া লুপ থামলাম মাঝে অবশ্য মার্গারেট ডেক রেটুরেন্টে চা খেলাম। চারটে নাগাদ বিগ বাজারের পাশে আমাদের বহু পরিচিত হোটেলে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যায় গ্লেনারিসে কুকিস অার হট কেক নিয়ে চললো টানা আড্ডা। এরপর ওর নিচতলায় রেষ্টুরান্ট কাম বার, সেখানে লাইভ মিউজিক আর তার সঙ্গে ওদের বিখ্যাত চিকেন এবং বারবিকিউ এই খাওয়া-দাওয়া চললো সাথে লোকাল সিঙ্গারের গান, ইংলিশ হিন্দি নেপালি সব রকমের গান গাইছিল।
ডিনার করে আমরা রাত এগারোটার সময় আমাদের হোটেলে পৌঁছালম। আমরা চাইলে সরাসরি দাওয়াইপানী পৌঁছে যেতে পারতাম জোড়বাংলো থেকে রাস্তা গেছে। কিন্তু একটা দিনের জন্য গ্লেনারিসে আড্ডা দেবো বলে দার্জিলিং আসা।
পরদিন সকালে বেরিয়ে পরলাম দাওয়াইপানীর পথে। জায়গাটাকে চোখে না দেখেও আমি অল্প অল্প তার প্রেমে পড়ে গেছিলাম।দাওয়াইপানী হচ্ছে পাখিদের স্বর্গ ভূমি। এই পাহাড়ের যত পাখি আছে তাদের মিলন ক্ষেত্র মানে প্রজনন ভূমি এই দাওয়াইপানী।শুনলাম এটাই নাকি পৃথিবীর মধ্যে এক অন্যতম স্নো লেপার্ড এর প্রজনন কেন্দ্র। জায়গাটা এতটাই রোমান্টিক। আমার মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দার্জিলিং কে স্বামী রূপে গ্রহণ করে তার সব সৌন্দর্য দার্জিলিং কে উন্মুক্ত করেছে আর প্রেমিক রূপী দাওয়াইপানী কে দিয়েছে তার নিবিড় ভালোবাসা, তার না বলা কত কথা,তার শীতল নিশ্বাস এর স্পর্শ।
দার্জিলিং থেকে ২২ কিমি এই পথ, জোড়বাংলো টপকে এই রাস্তা। লামাহাটা যাবার পথে ৬ মাইল এর আগে থেকে এই পথ ওপরের দিকে উঠে গেছে। উঠেই চোখে পড়বে প্রথম হোমস্টে টা বাঁদিকে বেঁকেই ডানদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার বুক জুড়ে বসে আছে। মালকিন এর নাম মনিতা পান্ডি লেপ্চা। খুব হাসি খুশি এই মনিতা দিদি টি। তিন ঘরের এই হোমস্টে টি । ৯ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। তবে ঘর গুলো এতটাই বড় যে অনাসে ১২, ১৫ জন থাকতে পারবে। প্রতিটা ঘরেই কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান। এটাকে নয়া বস্তি বলে । এটা আপার দাওয়াইপানী। এটাকে টপকে লোয়ার দাওয়াইপানী যেতে হয় আর সেখানে বেশ অনেক গুলো হোমস্টে আছে। মেইন রোডে উঠে ডান দিকে রাস্তা গেছে আর একটি হোমস্টের দিকে, ওখানে প্রায় দেড় একর জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে জিগমে শেরপার রিসর্ট। এর ভিউ পয়েন্ট থেকে দার্জিলিং শহর ছবির মত লাগে। নামচি,নথাং ভ্যালি, সিকিমের চার ধাম ও টাইগার হিল দেখা যায়। এই রেসর্টির অবস্থান এক অদ্ভুত স্থানে, যেনো একটা ঝুলন্ত খামার বাড়ি, প্রায় ৪০০০ ফুট নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে রঙ্গীত নদী। এর ওয়াচ টাওয়ার এ উঠে আপনি বাঁদিকের কাঁধ থেকে দৃষ্টি ডান দিকের কাঁধ পর্যন্ত্ চোখ ঘুরালে পুরোটাই শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ পাবেন। এই দাওয়াইপানীর অবস্থান সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ৭৫০০ উচ্চতায়। সানরাইজ ও সানসেট দুটোই পাহাড়ের গায়ে হয় আর সেই ঠিকরে পড়া আলোর ছটায় কাঞ্চনজঙ্ঘা যেনো আরো সুন্দরী হয়ে ওঠে।
দার্জিলিং এ বরফ পড়লে এখানে আগে পরে। তবে বরফ না পরলেও জনুয়ারী ফেব্রুয়ারী তে জলের পাইপ লাইন গুলো জমে যায়। মনিতা দিদির হোমস্টের পাশ ঘেঁষে দাওয়াইপানীর জঙ্গল , আর এই জঙ্গলে দিনের বেলায়ও ঘুরে বেড়ায় লেপার্ড,হরিণ,পান্ডা ও অসংখ্য পাখি।
খুব ছোট্ট এই গ্রামটি,দুটো স্কুল আছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ডাক্তার নেই, নার্স দের হাতেই চিকিৎসা ব্যবস্থা। পর্যটন শিল্পের খুব সম্ভবনা আছে।
এখানকার জল খুবই ভালো, পেটের সমস্যায় খুবই উপকারী।
লামাহাটা এখান থেকে ৭ কিমি আর আছে তাকদা চা বাগান। সেবক ভিউ পয়েন্ট। আছে হোমস্টে ঘিরে অসংখ্য গুরাস ফুল। আছে পাইন গাছ। পাইন গাছের সাথে গুরাস আর চাপ ফুল নিজ নিজ সৌন্দর্য্যে মত্ত। দুই দিনের জন্য এই স্থানে থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত দেখুন।
কী ভাবে যাবেন?
দার্জিলিং থেকে যাতায়াত ভাড়া ১৫০০/-
njp থেকে সেবক বাজার হয়ে ভাড়া ২২০০ টাকা
সেবক বাজার থেকে ১৮ কিমি এই পথ।
(লেখক পরিচিতি: পেশা ভিন্ন হলেই ভ্রমণের টানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বছরভর ভ্রমণেই কেটে যায় তাঁর। ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালেখি প্রায় ১০ বছর।)
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-03 18:53:19
Source link
Leave a Reply