এমন হয়, গিন্নি যে জিনিসটা কিনতে বলে দিয়েছিলেন, বেমালুম ভুলে গেছেন তার নাম। সবারই হয় এ রকম মাঝেমধ্যে। মস্তিষ্ককে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। তবু এর ভুল হয়। এ জন্য মস্তিষ্ককে দোষ দেওয়া কেন? সারা জীবন মস্তিষ্কে এত কিছু ভরে দিচ্ছি আমরা। এমন তো হতেই পারে।
মস্তিষ্ককে চনমনে রাখতে সময় সময় প্রয়োজন হয় শাণ দেওয়া, টিউনিং করা আর-কি! আছে কিছু পরামর্শ।
বাদাম খান
স্মৃতির উন্নতির জন্য বাদাম। বাদামতেল ও দুধ একত্রে খেলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা সকালে উঠে ্নৃতি খুব উন্নত হয়। বাদামের খোসা খুলে বাদাম পিষে এর সঙ্গে পানি ও চিনি মেশালে তৈরি হয় বাদামদুধ।
পান করুন আপেলের রস
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস লওয়েলের গবেষণা থেকে বোঝা যায়, আপেলের রস খেলে মগজে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার এসিটিলকোলিনের উৎপাদন বেড়ে যায়, এতে বাড়ে মস্তিষ্কের শক্তি।
সুনিদ্রা যান
গবেষকেরা দেখেছেন, দিনের অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি ফিরে ফিরে আসে নিদ্রার সময় স্বপ্নের মধ্যে, এভাবে দীর্ঘস্থায়ী ্নৃতি হয় সংহত। পুনঃ পুনঃ এ ধরনের প্লেব্যাক অবচেতনমনকে এসব প্রতিচ্ছবি সংরক্ষণের জন্য প্রোগ্রাম করে দেয়।
সহজ-সরল আনন্দ উপভোগ করুন
মানসিক চাপ শুষে নেয় মগজের শক্তি। তাপগ্রস্ত মন আমাদের ্নৃতিভাণ্ডারের অনেকটাই গ্রাস করে ফেলে, মন হয়ে যায় রুগ্ণ, ভঙ্গুর। তাই মন থেকে চাপ দূর করার জন্য প্রতিদিন সহজ-সরল আনন্দ উপভোগে নিজেকে নিয়োজিত করুন। মন, শরীর ও আত্মার আনন্দের জন্য এমন কিছু সহজ আনন্দের কথা-
–যিনি সংগীত ভালোবাসেন একে উপভোগ করুন।
–শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করুন।
–অন্যকে প্রশংসা করুন।
–কয়েক মাইল দৌড়ান, বা সাইকেল চালান অথবা সাঁতার কাটুন।
–ইয়োগা ক্লাসে ঢুকে যান। করতে পারেন প্রাণায়াম।
খেলায় মেতে যান
মজবুত শরীরের জন্য যেমন প্রয়োজন ব্যায়াম, তবে মনকে ধারালো ও চটপটে রাখার জন্য চাই মানসিক ব্যায়াম। বড়দের চেয়ে শিশুরা অনেক বেশি চৌকস, মগজের শক্তি অনেক বেশি। শিশুদের রয়েছে আমোদপ্রিয়, ক্রীড়াশীল মন। খেলাপ্রিয় মন যাদের, এদের ্নৃতিশক্তি বেশি। তাই এমন কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হয়, মাঝেমধ্যে যাতে মন থাকে সক্রিয় ও আমোদ-প্রমোদে মত্ত।
–খেলতে পারেন স্ক্র্যাবল বা শব্দজট।
–স্বেচ্ছাসেবী কাজে লেগে যান।
–অন্যদের সঙ্গে আলাপ করুন, একত্রে কাজ করুন।
–নতুন কোনো শখ নিয়ে মাতুন, যেমন লেখাপড়া, ছবি আঁকা, পাখি দেখা।
–নতুন কোনো কৌশল আয়ত্ত করুন অথবা ভাষা শিখুন।
যোগ বা ধ্যানচর্চা করুন
যোগব্যায়াম বা ধ্যানচর্চা চাপ উপশম করে। ্নৃতিশক্তির জন্য মানসিক চাপ অনেকটা দায়ী। চাপ কম হলে রক্তচাপ কমে, শ্বাসক্রিয়া ধীর হয়, বিপাক ধীর হয়, পেশি শিথিল হয়। সবকিছুর উপাদান মগজের শক্তি বাড়াতে অনেকটা সাহায্য করে।
চিনি খাওয়া কমান
চিনি কোনো খাদ্য নয়। এটি এমন এক ধরনের শর্করা, যা এমন শক্তি জোগায়, যা মেকি, সত্যি শক্তি নয়, প্রথমে শক্তির স্কুরণ, এরপর কমে আসে নিচের সীমায়। চিনি খুব বেশি খেলে স্মায়বিক রোগ হতে পারে, আবদ্ধ স্থান সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্ক হতে পারে। তাই চিনি না নিয়ে খাবার খান। মিষ্টি শবরত, কোমল পানীয় পান বা চিনি বেশি দিয়ে চা পান থেকে বিরত থাকুন।
রাতে খাবেন হালকা খাবার
রাতে ভরপেট খেলে শরীর টলমল করতে থাকে, ঘুমালে হয় লম্বা মানসিক চাপ। দিনে আমাদের শরীর থাকে দুরন্ত, সবল, ভরাপেট খাওয়া তখনই ভালো। রাতে হালকা খাবার, ফলাহার করলে ঘুমও ভালো হয়। রাতে সুনিদ্রা হলে মগজের শক্তি আরও জোরদার হয়।
ভাবনার ডানা মেলে দিন
গ্রিকরা সবকিছু ্নৃতিতে ধরে রাখার জন্য কল্পনা ও সবকিছু একত্র করার সূত্র আবিষ্কার করেছিল। এই কৌশল অবলম্বন করলে স্পষ্ট ও বর্ণিল কল্পনার জাল বিস্তার করা যেত, যা কোনো পরিচিত বস্তুর সঙ্গেও মেলানো যেত। মনের চিন্তা ও চেতনা স্পর্শ, অনুভব, গন্ধ, শ্রবণ, দর্শন-সবকিছুকে কল্পনায় জড়ানো গেলে যেকোনো ঘটনা বিশদভাবে ্নরণ করা সম্ভব।
মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ঝলসানো খাবার, বেশি শর্করা বা মিষ্টি খাবার, ময়দার রুটি, এসব খেলে স্মায়ু উত্তেজিত হয়। অনেক সময় আচরণ হয় আক্রমণাত্মক অথবা বিষণ্ন। খাবেন তাজা সবজি। প্রচুর পানি পান করুন। ধ্যানচর্চা করুন। করুন যোগব্যায়াম। প্রাণায়াম। মেজাজ ভালো থাকবে। মন-মেজাজের চড়াই-উতরাই আর থাকবে না।
–খেতে পারেন ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। শর্করা খাবার, ময়দার রুটি যত কম খাবেন ভালো। সবজি-ফল বেশি খাবেন। এসব কাজ কি খুব কঠিন? মনে হয় না। চেষ্টা করে দেখুন না!
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্রঃ প্রথম আলো, নভেম্বর ১৯, ২০০৮
Leave a Reply