সুন্দর এই পৃথিবীতে সুন্দর পরিবেশ কে না চায়! কিন্তু এই পরিবেশ সুন্দর রাখতে আমরা কতটুকু আন্তরিক? দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনেকটা নিজেদের অজান্তে আমাদের অনেকেই এই পরিবেশকে কলুষিত করে চলেছি। আমাদের চারপাশের বায়ু, জল, মাটি আমরাই দূষিত করছি অনবরত।
মুখে একটু থুথু জমলেই ওয়াক থু। কোথায় ফেললাম ঠিক নেই। এই থুথুতে থাকতে পারে হাজারো জীবাণু, যা দূষিত করবে ধুলো আর বাতাসকে। আমাদেরই আরেক স্বজাতি ওই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, পরবর্তী যেকোনো সময়। খক খক কেশে কাশ ফেলি যত্রতত্র। এতে যে দূষিত হয় পরিবেশ, আমরা সে খেয়াল কি তখন রাখি? পান খাওয়ার অভ্যাস যাদের, মজা করে মুখ রাঙিয়ে প্রথম দিকের একটু পিক ফিক করে ফেলে দেয় ঘরের কোণে কিংবা দেয়ালের গোড়ায়। বড্ড বিশ্রী দেখায়-এতে জীবাণুও থাকতে পারে অজস্র।
ঠান্ডা লাগতেই পারে যে-কারও। হাঁচিও আসতেই পারে। তাই বলে যেখানে-সেখানে যেনতেন প্রকারে হাঁচি দেওয়া! বাতাসে ছড়াবে অসংখ্য জীবাণু। অন্যে হবে সংক্রমিত। রুমাল দিয়ে, নিদেনপক্ষে হাত দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচিটা দিলে ঠেকিয়ে দিতে পারেন অন্যের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা। নাক ঝেড়ে যেখানে-সেখানে না ফেলে রুমালে নাক ঝাড়লে বাতাসটা হবে না দূষিত। রুমালটা ধুয়ে নেওয়া যাবে পরে।
রাস্তার পাশে নিজেকে একটু আড়াল করার চেষ্টা করে প্রস্রাব করার দৃশ্য চোখে পড়ে প্রায়ই। এমনকি মলত্যাগের দৃশ্যও। দূষিত হয় মাটি, বাতাস আর পানি। এভাবেই রোগ ছড়ায় হাজারো মানুষে।
হাঁটতে হাঁটতে কিংবা গাড়িতে বসে কলা খেয়ে খোসাটি ফেলে দেওয়া হচ্ছে অবলীলায় রাস্তায়। তাতে পা পিছলে পড়ে যেতে পারে যে-কেউ। খোসা ফেলার সময় সে খেয়াল আমরা করি না। শুধু কলার খোসাই নয়, ফেলি বাদামের খোসা, চকলেটের মোড়ক, বিস্কুট-চিপসের মোড়ক, আরও কত কি! আমাদেরই ফেলে দেওয়া পলিথিনের জন্য বন্ধ হচ্ছে রাস্তার পাশের ড্রেন। জলাবদ্ধতা অনিবার্য।
বাসাবাড়িতে কিংবা অন্য যেকোনো কর্মস্থলে উৎপন্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলি যত্রতত্র। ‘দয়া করে আমাকে ব্যবহার করুন’-ডাস্টবিনের গায়ের লেখা পড়েও আমরা তা দয়া করে ব্যবহার করি না। ফেলি তার বাইরে। ডাস্টবিনের অবস্থাও শোচনীয়। খোলা, ভাঙা। কাক, কুকুর আর ইঁদুরের অবাধ বিচরণ। জীবাণু ছড়াচ্ছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
আমরা যখন রাস্তায় গাড়ি চালাই, তখন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হর্ন বাজাই। অপ্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে শব্দদূষণ না করলে যে চলে না তা কিন্তু নয়। কিন্তু সে কথা আমরা একেবারেই ভুলে যাই।
‘ধূমপানে বিষপান’ কথাটা খুবই জানা। ধূমপান যাদের অভ্যাস, কোথায় ধূমপান করছে, হয়তো সে খেয়াল নেই। হতে পারে বাড়িতে, হতে পারে গাড়িতে, হতে পারে অফিসে। পাশে থাকতে পারে অধূমপায়ী, পাশে থাকতে পারে শিশু। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে তারা। সেটা সরাসরি ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর।
আমরা কি পারি না আমাদের এই ভুলগুলো শোধরাতে? আমরা কি পারি না আমাদের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে? চলুন, বদলে ফেলি অভ্যাস, বদলে দিই পরিবেশ।
ডা· মো· শহীদুল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্রঃ প্রথম আলো, নভেম্বর ১৯, ২০০৮
Leave a Reply