হাইলাইটস
- অনেক কর্মরত অভিভাবকরা লক্ষ্য করেছেন যে, অফিসের কাজের চাপের কারণে প্রায়ই তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া হয়ে যায়।
- সে সবই দেখে থাকে তাঁদের সন্তানরা।
- পরে ভাই-বোন নিজেদের মধ্যেও ঠিক সেই ভাবে ঝগড়া, চেঁচামিচি করে।
১. চেঁচানো বা চেঁচিয়ে কথা বলা
অফিসের কাজের চাপ, পরিবারের চিন্তা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদির কারণে বর্তমানের অভিভাবকদেরও কাজের চাপ বেড়েছে। এই চাপই তাঁদের করে তুলছে অবসাদগ্রস্ত। এমন সময় সন্তান কোনও দুষ্টুমি করে বসলে, সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে তাদের ওপর। বাচ্চারা মা-বাবার এমন ব্যবহারকে খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করেন এবং পরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটান। অনেক কর্মরত অভিভাবকরা লক্ষ্য করেছেন যে, অফিসের কাজের চাপের কারণে প্রায়ই তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া হয়ে যায়। সে সবই দেখে থাকে তাঁদের সন্তানরা। পরে ভাই-বোন নিজেদের মধ্যেও ঠিক সেই ভাবে ঝগড়া, চেঁচামিচি করে। আসলে বাচ্চাদের ধারণা, মা-বাবা যা করছেন তা ঠিক এবং তেমন করা যেতেই পারে।
কী ভাবে সংশোধন করবেন
সন্তান ভালো কাজ করলে তার প্রশংসা করুন। ভুল কাজ করলে, আলাদা ঘরে নিয়ে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন। সকলের সামনে বাচ্চাদের ওপর চেঁচালে তারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। অফিসের চিন্তা অফিসেই ছেড়ে আসুন। বাড়িতে সেই চিন্তা বয়ে আনলে এবং তার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে, এর কুপ্রভাব গিয়ে পড়বে সন্তানের ওপর। তাই কোনও মা-বাবারই বাচ্চাদের সামনে পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া, লড়াই করা উচিত নয়। পারস্পরিক মতভেদ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
২. সেলফোন অ্যাডিকশান
প্রয়োজনে হোক বা অপ্রয়োজনে বর্তমানে অধিকাংশ সময় অভিভাবকরা ফোনে ব্যস্ত থাকেন। বাচ্চারাও তাঁদের মা-বাবার কাছে এ বিষয় নালিশ জানায় যে, তাঁরা সবসময় ফোনেই ব্যস্ত থাকে। কিছু কিছু বাচ্চা আবার কম বয়সেই নিজের জন্য ফোন চাইতে শুরু করে। আবার মা-বাবার দেখা-দেখি তারাও বাড়ির কোনও না-কোনও সদস্যের ফোন নিয়ে মেতে থাকেন। শুধু ফোনই নয়, মা-বাবার দেখাদেখি বাচ্চাদের মধ্যে টিভির নেশাও জাঁকিয়ে বসে। টিভি চালিয়ে রেখে অনেকেই বাচ্চাকে পড়ায়। কিন্তু এতে বাচ্চাদেরই ক্ষতি হয়। কারণ তাঁরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না।
কী ভাবে সংশোধন করবেন
আধ-এক ঘণ্টা টিভি দেখাই যায়। কিন্তু অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে, টিভিতে তাঁরা যে অনুষ্ঠান দেখছেন, তা যেন বাচ্চাদের ওপর কুপ্রভাব বিস্তার না-করে। আবার পড়াশোনার পরই যাতে বাচ্চাদের সামনে টিভি চালানো হয়, সে বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। আবার মোবাইল ফোনেও দীর্ঘ সময় কথা বলা এড়িয়ে চলা উচিত অভিভাবকদের। সন্তানের স্বার্থে অপ্রয়োজনে মোবাইল ফোন ঘাটাঘাটিও বন্ধ করা উচিত।
৩. ফিটনেসের ওপর নজর দিন
অস্বাস্থ্যকর অভিভাবকদের বাচ্চারাও অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। সন্তান যদি নিজের অভিভাবককে এক্সারসাইজ বা আউটডোর অ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করতে না-দেখে, তা হলে তারাও শরীর সুস্থ রাখতে শারীরিক কসরতের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারবে না। তাই মা-বাবা দুজনই অথবা যে কোনও একজনকে বাচ্চাদের ব্যায়ামের উপকারীতা সম্পর্কে বোঝানো এবং ব্যায়াম করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত।
কী ভাবে সংশোধন করবেন
বাচ্চাদের স্কুল অ্যাক্টিভিটি বা হোমওয়ার্কের পাশাপাশি তাদের ফিটনেসকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অভিভাবকরা নিজের ডায়েট এবং ফিটনেসের বিষয়টির প্রতি নজর দিন। কারণ বাচ্চারা তাঁদের দেখেই শিখবে। প্রত্যহ প্রায় ১ ঘণ্টার শারীরিক কসরৎ জরুরি। আবার ইন্ডোর গেমসের পরিবর্তে বাচ্চাদের আউটডোর গেমসের প্রতি উৎসাহিত করা উচিত।
৪. জাঙ্ক ফুডের অভ্যাস
কর্মরত অভিভাবকরা নিজেদের জাঙ্কফুডে অভ্যস্ত করে তোলার পাশাপাশি বাচ্চাদেরও এ ধরণের খাবার-দাবার খাইয়ে থাকেন। স্কুলের টিফিনে বার্গার, প্যাটিস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি খাবার দিয়ে তাদের অভ্যাস ও স্বাস্থ্য দুই-ই নষ্ট করছেন। এমনকি বাড়িতেও স্ন্যাক্স হিসেবে এই জাঙ্ক ফুড খাইয়ে থাকেন তাদের। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চারা জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবে না। অনেক অভিভাবকই পুরস্কার স্বরূপ বাচ্চাদের পিৎজা, বার্গার, ফ্রেঞ্চফ্রাই খাইয়ে থাকেন। যা এক্কেবারে করা উচিত নয়।
কী ভাবে সংশোধন করবেন
বাচ্চাদের শুধু জাঙ্কফুড খেতে বারণ করে দিলেই হবে না। বরং তাঁদের খাদ্য তালিকায় ফল, সবজিও অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। বাচ্চাদের খাদ্যতালিকা পুরোপুরি জাঙ্কফুড মুক্ত করা যাবে না, তবে স্বাস্থ্যকর খাবার দাবার অন্তর্ভূক্ত করে ব্যালেন্স করতে পারবেন। যেমন বাচ্চারা বার্গার বা পিৎজা খেতে চাইলে, তার সঙ্গে এক বাটি স্যালাড বা ফল দিয়ে দিন। মা-বাবাকেও স্বাস্থ্যকর খাবার-দাবার খাওয়া উচিত। মা-বাবার দেখাদেখি বাচ্চারা তা খেতে শুরু করবে।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম না-হওয়া
অনেক অভিভাবকই রাত জেগে টিভি দেখে থাকেন। অনেকে আবার লেট নাইট পার্টিতে অভ্যস্ত। মা-বাবার দেখাদেখি বাচ্চারাও কোনও না-কোনও অছিলায় বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। এর ফলে তাঁদের ঘুম পুরো হয় না এবং তাঁরা সকালে সময় মতো উঠতে পারে না। আবার উঠে গেলে ঘুমের ঘোরেই থাকে।
কী ভাবে সংশোধন করবেন
সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। বিশেষত বাচ্চাদের সঠিক সময় ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠা উচিত। মা-বাবার দেখাদেখি তারা এমন করতে পারবে। ৭-৮ বছরের বাচ্চাদের অন্তত পক্ষে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার ঘুম জরুরি। টিন এজার বাচ্চাদের ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার ঘুম দরকার। বাচ্চাদের ঘুমানোর সময় ফিক্স রাখুন। সপ্তাহান্তে তাঁদের বাইরে ঘোরাতে নিয়ে যান। এতে তাঁদের মুড ফ্রেশ হবে। তবে বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে থাকবেন না।
বলা বাহুল্য, বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্য ও ভালো অভ্যাসের জন্য অভিভাবকদের নিজের কিছু কিছু অভ্যাস পাল্টে ফেলতে হবে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-05-31 14:40:54
Source link
Leave a Reply