সমস্যাঃ আমার বয়স ১৩ বছর। ওজন ৪৬ কেজি। আমি আট বছর ধরে হৃদরোগে ভুগছি। আমার হৃৎস্পন্দন সব সময় বেশি থাকে। আমি বিভিন্ন সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছি। আমি ইকোকার্ডিওগ্রাফি করি। ডাক্তার বলেন, আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমার এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে কেন? আমি অল্প পরিশ্রম করলেই হৃৎস্পন্দন আরও বাড়ে এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এ অবস্থা কেন? পরামর্শ পেলে উপকৃত হব।
মো· নুরুজ্জামান শিশির
ঢাকা।
পরামর্শঃ ‘আমার বুকের মধ্যে কেমন যেন লাগে’-এ কথাটি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের শুনতে হয় প্রায়ই। এই ‘কেমন লাগে’ গ্রুপে যেমন খাঁটি হৃদরোগীরা আছে, তেমনি সুস্থ হৃদ্যন্ত্রের কিন্তু ‘ভীরু হৃদয়ের’ মানুষও আছে। তাদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ কিন্তু খুব সহজ ও প্রত্যক্ষ-তাদের হার্টবিট বেশি থাকে। সব সময় যেন মনে হয় ঘোড়দৌড় চলছে। আমাদের বিশেষজ্ঞ পরিভাষায় এসব রোগীর ডায়াগনোসিস হলো ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়া। ব্যাখ্যা করলে যা দাঁড়ায়, অনুচিত, দ্রুত হৃৎকম্পন। অনেক সময় অতিরিক্ত চা, কফি, সফট ড্রিংকস বা ধূমপান করলে এবং কিছু ওষুধ, যেমন হাঁপানির জন্য ভেনটোলিন-জাতীয় ট্যাবলেট খেলে হার্টবিট বেশি হয়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ, অতিরিক্ত হৃৎকম্পের কারণটি দূর করলেই হলো। অর্থাৎ চা-কফি, সফট ড্রিংকস, ধূমপান বর্জন আর হাঁপানির জন্য মুখের ওষুধের পরিবর্তে ইনহেলার ব্যবহার করলেই হলো। থাইরয়েড গ্লান্ডের অতিরিক্ত নিঃসরণে (হাইপারথাইরয়েডিজম) রোগীরা ওজন হারাতে থাকে এবং তাদের হার্টবিট, এমনকি ঘুমের সময়ও বেশি থাকে। অনেক সময় হার্ট-ভাল্বের সমস্যা ও হার্ট-ফেইলিওর রোগীদেরও হৃৎকম্পন ক্রমাগত বেশি থাকে। কিন্তু যখন এ রকম কোনো কারণ থাকে না, আর ইকোকার্ডিওগ্রাফিতেও হার্টের গঠন স্বাভাবিক পাওয়া যায় অথচ হার্টবিট বেশি থাকে, তখনই আপনার মতো সমস্যা হয়।
এসব ক্ষেত্রেই অনুচিত হৃৎকম্পের ডায়াগনোসিস করা হয়। তাদের ক্ষেত্রে বিটা ব্লকার-জাতীয় ওষুধ হার্টবিট কমায়, অনেকখানি স্বস্তি দিতে পারে। তবে এসব রোগীর অবশ্যই চা-কফি বা ধূমপান এড়িয়ে চলা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম করলে বা সাঁতার কাটলেও তাদের উপকার হয়। তবে সবচেয়ে বড় কথা, দীর্ঘ মেয়াদে তাদের বড় কোনো অসুবিধা হয় না।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা· আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী
সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্রঃ প্রথম আলো, নভেম্বর ১৯, ২০০৮
Leave a Reply