মনে রাখতে হবে, এই তিনটি ফাঙ্গাসের সংক্রমণের উপসর্গ, প্রতিরোধ ক্ষমতা-সবই আলাদা। আলোচনা তাই নিয়েই–
ইয়েলো ফাঙ্গাস (Yellow Fungus) কী?
যদিও এটি নতুন কোনও রোগ নয়। তবে এটি হোয়াইট ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের তুলনায় অধিক ক্ষতিকর। এ বিষয় সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। কারণ শরীরের অভ্যন্তরের অঙ্গকে প্রভাবিত করছে এই ফাঙ্গাস। গাজিয়াবাদে ইয়েলো ফাঙ্গাসের একটি ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের কারণ
অন্য সংক্রমণের মতো এটিও প্রাথমিক ভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণেই হয়ে থাকে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেমন, দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি, নোংরা খাবার এই ফাঙ্গাসের জন্য দায়ী। এমনকী স্টেরয়েডের অত্যধিক ব্যবহার ও অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল মেডিকেশনকেও এই সংক্রমণের কারণ বলা হচ্ছে। আবার যে সমস্ত রোগীদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল, তাঁদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণ
- এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে, শরীরের অভ্যন্তরে পুঁজ বা পাস বেরোতে শুরু করে। ঘা সাড়তে সময় লাগা, অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যাকিউট নেক্রোসিস পর্যন্ত হতে পারে ইয়েলো ফাঙ্গাসের কারণে।
- সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে রোগীরা আলস্য, ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গে আক্রমণ হানে বলে অঙ্গগুলি প্রভাবিত হয় এবং ব্যক্তি তাঁর সমস্ত শক্তি হারাতে শুরু করেন। আবার খিদে না পাওয়া, খাওয়া-দাওয়া ভালোভাবে না করাও এর অন্যতম লক্ষণ। এর ফলে অপ্রত্যাশিত ভাবে ওজন কমতে শুরু করে, মেটাবলিজমও দুর্বল হয়ে পড়ে।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাস চোখেও আক্রমণ হানে। লাল বা বসে যাওয়া চোখ ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
মিউকোরমাইকোসিস আবার ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামেও পরিচিত। এটি এক ধরনের মোল্ড থেকে এর জন্ম। আমাদের পরিবেশের এটি ছড়িয়ে থাকে। এই রোগটি বিরল। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এবং ডায়বিটিসের মতো কো-মোর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের প্রভাবিত করে এই ফাঙ্গাস। বায়ুর মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এই ফাঙ্গাসের হাত থেকে নিরাপদ বলা যেতে পারে। এমনই জানিয়েছেন AIIMS অধ্যাপক এবং এন্ডোক্রিনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগের প্রধান ড: নিখিল টন্ডন।
কালো ছত্রাকের কারণ
করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অনেক সময় স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয়। যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কম করতে সাহায্য করে। এই স্টেরয়েড সংক্রমণের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতাকেও কমিয়ে আনে। তাই এমন রোগীদের মধ্যে মিউকোরমাইকোসিসের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। আবার যাঁদের ডায়বিটিস, ক্যানসার রয়েছে বা যাঁদের কিডনি ভালো ভাবে কাজ করে না তাঁরাও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে যাঁদের রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, তাঁরাও এই ছত্রাকের দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
কালো ছত্রাকের লক্ষণ
- এটি ব্যক্তির সাইনাস ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। এর ফলে মুখের একদিক ফুলে যেতে পারে। তীব্র মাথা ব্যথা, নাক ও মুখের উপরের অংশে কালো ক্ষত, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। AIIMS-এর চিকিৎসকদের মতে, এর ফলে পরবর্তীকালে খাবার খেতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার সহজে মুখ খোলাও যায় না। শুধু তাই নয়, এই ফাঙ্গাসের কারণে দাঁত দুর্বল হয়ে তা পড়ে যেতে পারে।
- তবে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে স্টেরয়েডের ব্যবহার এবং বারংবার রক্তে শর্করার পরিমাণ চেক করতে পারলে এই ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করা যাবে বলে চিকিৎসকদের মতামত।
হোয়াইট ফাঙ্গাস কী?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, হোয়াইট ফাঙ্গাস বা অ্যাসপারগিলোসিস ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের তুলনায় অধিক ভয়াবহ। কারণ এটি শরীরের একাধিক অংশকে প্রভাবিত করে। হোয়াইট ফাঙ্গাসে ত্বক, পেট, কিডনি, মস্তিষ্ক, গোপনাঙ্গ ইত্যাদিতে সংক্রমিত হতে পারে।
হোয়াইট ফাঙ্গাসের কারণ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মতোই হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। আবার ডায়াবিটিস, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরাও ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করেছেন বা ICU-তে ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
হোয়াইট ফাঙ্গাসের লক্ষণ
AIIMS-এর অধ্যাপক ড. কৌশল ভার্মা জানান, মানবদেহে জিহ্বা বা গোপনাঙ্গ থেকে এই ছত্রাকের সংক্রমণ প্রথম ছড়ায়। এ কারণে জিহ্বা সাদা বর্ণের হয়ে যায়।
চিকিৎসকদের মতে, এই বিরল ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষণ সার্স-কোভ ২ সংক্রমণের মতোই। এটি ফুসফুসেও আক্রমণ করতে পারে। সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে একে চিহ্নিত করা যাবে।
তবে কাশি, জ্বর, ডাইরিয়া, ফুসফুসে কালো ছোপ, অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এই রোগের অন্যতম ও সাধারণ লক্ষণ।
রোগটি কি সংক্রামক?
- ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রামক নয়। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। AIIMS-এর ডিরেক্টর ড: রণদীপ গুলেরিয়া আগেই জানিয়েছিলেন যে, এটি সংক্রামক নয়। তবে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘৯০-৯৫ শতাংশ ব্যক্তিদের ডায়াবিটিস ছিল, এমনকী স্টেরয়েডও দেওয়া হয়েছিল।’
- পরিবেশে ব্যপ্ত মোল্ড শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। অত্যধিক আর্দ্রতা, দুর্গন্ধযুক্ত ও দূষিত খাবার-দাবার, অপরিচ্ছন্নতা এই সংক্রমণের জন্য দায়ী।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-05-25 17:37:02
Source link
Leave a Reply