আমি যখন খুব ছোট, তখন আমার মা মারা যান। নিঃসন্তান ফুফু আমার লালন-পালন করেন। আমি এখন স্নাতক (সম্মান) পাস করেছি। সমস্যা হলো, স্নাতকের সনদপত্রে আমার মায়ের নাম হিসেবে ফুফুর নাম রয়েছে। এ ছাড়া অন্য সব দলিলপত্রে আমার প্রকৃত মায়ের নাম রয়েছে। ভোটার পরিচয়পত্রে আমার মায়ের নাম হিসেবে ফুফুর নামটিই আছে। এ কারণে আমার সনদপত্রে কোনো সমস্যা হবে কি না। আমার পৈতৃক সম্পত্তি ভোগ করার ক্ষেত্রে এটা কোনো বাধা হবে কি না। আমরা দুই ভাই, এক বোন। আমার মায়ের নামের এই ত্রুটির কারণে বড় ভাই আমাকে কোনো সমস্যায় ফেলতে পারবে কি? ভবিষ্যতে আমি সমস্যায় পড়লে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব কি না। উল্লেখ্য, আমার বাবা জীবিত নেই।
সজীব
তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
চিঠিতে আপনার সমস্যা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে হলফনামা বা এফিডেভিটের মাধ্যমে আপনার মায়ের প্রকৃত নাম উল্লেখ করতে পারেন। ওই হলফনামা নির্দিষ্ট অঙ্কের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দাখিল করতে হবে। সেই হলফনামাসহ আপনি শিক্ষা বোর্ডে ও নির্বাচন কমিশনে সনদপত্র এবং ভোটার পরিচয়পত্রে আপনার মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। এখনকার পরিস্থিতিতে অনুরূপ আবেদন অনুমোদন কিছুটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু হতাশ না হয়ে ধৈর্য নিয়ে আপনি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এ অবস্থায় আপনার সনদপত্র বাতিল বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এ কাজে আপনার আশু সাফল্য কামনা করছি।
আমি যে মেয়েকে ভালোবাসতাম, ২০০৬ সালে সেই মেয়ের অভিভাবকের চাপে গোপনে বিয়ে করি। তারা আমাকে বলেছে, আমার পড়ালেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের কথা গোপন রাখবে। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই তারা আমাকে তাদের বাড়িতে আটকে আমার মাকে খবর দেয়। আটকে রাখার সময় তারা আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করে যেন আমি চোর। পরে আমার মা ইউনিয়নের মেম্বার, চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েসহ আমাকে বাড়িতে নিয়ে যান। আমাদের বিয়ে হয় মেয়ের নানার বাড়িতে। তখন আমার সঙ্গে শুধু আমার এক বন্ধু ছিল। বিয়েতে দুই লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। কোনো উশুল দেওয়া হয়নি। তাদের বাড়িতে আটকে রাখার ঘটনার কথা মনে হলে এখনো আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। স্ত্রীকে আমি মোটেও সহ্য করতে পারি না। মনে মনে তাকে কয়েকবার তালাক দিয়েছি। এখন আমি স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়ি। আমার আগের ফল ভালো। তাই আশা করি ভালো চাকরি পাব। আমার পড়ালেখা শেষ হলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তালাক দিতে চাই। স্ত্রীপক্ষের মামলা করার আশঙ্কা আছে। মামলা যদি হয়, আমার চাকরি নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে কি না। তাকে কীভাবে আইনের মাধ্যমে তালাক দেব পরামর্শ চাই। দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা কি দেওয়া লাগবে?
মাহমুদ
চাঁদপুর।
মুসলিম আইনে বিয়ে এক ধরনের চুক্তি। বিয়ের ক্ষেত্রে অন্য চুক্তির মতোই ‘প্রস্তাব’ ও ‘গ্রহণ’ এ দুটি উপাদানের প্রয়োজন। এখানে চাপে বিয়ের তেমন সুযোগ নেই। আপনি তালাকের মাধ্যমে এ চুক্তির অবসান ঘটাতে পারেন। এ জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে। ওই নোটিশের একটি কপি আপনার স্ত্রীকেও পাঠাতে হবে। ওই নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান আপনাদের সমঝোতার চেষ্টা করবেন। সমঝোতায় ব্যর্থ হলে ৯০ দিন পর ওই তালাক কার্যকর হবে। দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর এক ধরনের ঋণ। ওই ঋণ চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধযোগ্য। যেহেতু দেনমোহরের কোনো অর্থ আপনার বিয়ের সময় উশুল হয়নি, সেহেতু দেনমোহরের পুরো অর্থ আপনার স্ত্রীর প্রাপ্য।
আমার বয়স ২৫। আমি স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। চার বছর ধরে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তার বয়স ১৮। গত ৭ জুলাই আমরা কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলি। সবার অজান্তে আমি রাতে বাসায় গিয়ে ওর সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হতাম। হঠাত্ এক রাতে ওর মায়ের চোখে ধরা পড়ে গেলাম। তখন আমাদের বিয়ের ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যায়। মেয়েটি দশম শ্রেণীতে পড়ত। ঘটনা জানার পর তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ। আমি খবর পেয়েছি, তার বাবা ও ভাই তাকে অনেক অত্যাচার করছে। আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এখন ভয়ে আমি দিন কাটাচ্ছি। আমাকে তালাক দিতে বাধ্য করবে বলে শুনছি। এখন আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সে অন্তঃসত্ত্বা কি না তাও জানি না। যদি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকে, আমি কী করতে পারি? আমি তাকে ছাড়া বাঁচব না। আমি কীভাবে তাকে নিয়ে সংসার করতে পারি সে ব্যাপারে পরামর্শ চাই।
সালাউদ্দিন কাদের
অক্সিজেন, চট্টগ্রাম।
আপনি পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার স্ত্রীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মা-বাবার কাছে রাখা হয়েছে। যদি প্রমাণ করতে পারেন, তবেই আপনি আপনার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারেন।
আমার বয়স ২৫ বছর। আমার আব্বা দুই বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমি দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। আমরা তিন ভাই, তিন বোন। আমার বাবা ১৯৯৮ সালে তিন বোনের নামে ৭২ শতাংশ জমি দেন। তারপর ২০০৮ সালে ওই জমি খারিজ করে আমার বোনদের নাবালক দেখিয়ে, অর্থাত্ বোনদের বয়স তখন ১৬ বছর, ১২ বছর ও ১০ বছর দেখিয়ে এই জমির ৫৪ শতাংশ আমাদের তিন ভাইয়ের নামে বিক্রি করে দেন। ভবিষ্যতে আমার বোনেরা বিয়ের পর তাদের স্বামীরা এই দলিলের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন কি? আর আমার বাবা আরও বেশ কিছু জমি আমাদের হেবা দলিল করে দেন। এই হেবা দলিলের বিপক্ষে ভবিষ্যতে তাঁর আগের সংসারের ছেলেরা কোনো দাবি করতে পারবে কি?
মো. হাসান
গাজীপুর।
পত্রে আপনি ৭২ শতাংশ জমি তিন বোনকে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওই জমি দান, বিক্রি অথবা অন্য কীভাবে হস্তান্তর করেছিলেন, তা উল্লেখ করেননি। আইনানুগভাবে আপনার বাবা অভিভাবক হিসেবে নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। সুতরাং তিনি আপনার বোনদের পক্ষে ৭২ শতাংশ জমির ৫৪ শতাংশ হস্তান্তরের বিক্রি দলিল সম্পাদন করার অধিকারী। তবে আপনার বোনেরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিন বছরের মধ্যে ওই সম্পাদিত দলিলের বৈধতা সম্পর্কে মামলা করতে পারেন। হেবা দলিলের মাধ্যমে প্রদেয় জমির দখল হস্তান্তর হলে ওই হেবা বাতিলের সুযোগ নেই। সুতরাং আপনার বাবার আগের সংসারের ছেলেরা ওই হেবা করা সম্পত্তির দাবিদার নয়।
আইনি সমস্যার সমাধান: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নাহিদ মাহতাব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৯
Leave a Reply