সমস্যা: অনেক পরিবারে দেখেছি, ভাইবোন সমান আদর-মমতা পায়। কিন্তু আমাদের পরিবারে বোনই সবকিছুর দাবিদার। আমার বোন কোনো ক্ষতি করলে সেটা সহজভাবে দেখা হয়। আর আমি ওরকম কিছু করলে গালাগাল শুরু হয়ে যায়। আমি চাই না বোনকে বাদ দিয়ে আমাকে কিছু দেওয়া হোক। তবু… আমার আচরণ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারি না। সবাই আমাকে তিরস্কার করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শ: তোমার বয়স কত তা জানাওনি। যদি বয়ঃসন্ধিকালে থাক তাহলে বলব, এই বয়সে মান-অভিমান একটু বেশি কাজ করে। আর তোমার যে শারীরিক সমস্যাগুলো হচ্ছে, তা এ বয়সের কারণে হচ্ছে কি না, তাও একটু ভেবে দেখা দরকার। এ বয়সে হঠাত্ করেই শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে, কিন্তু বাবা-মা, পরিবারের বড় কেউ বা শিক্ষকেরা এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা শিশুদের দেন না বলে শিশুরা এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে। তারা এটিকে অসুস্থতা হিসেবে দেখে বলে একে শারীরিক সমস্যা হিসেবেও চিহ্নিত করে। আমি বুঝতে পারছি, এ বিষয়গুলো নিয়ে তুমি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছ না বলে তোমার আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়িতে ভাইবোনের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে বলেও তোমার অনেক মন খারাপ হচ্ছে। তবে যে ব্যাপারটি ইতিবাচক তা হচ্ছে, তুমি বুঝতে সক্ষম হয়েছ যে বাড়ির লোকের নেতিবাচক আচরণের প্রভাব তোমার আচরণগুলোর ওপর পড়ছে। তোমাকে যখন গালাগাল করা হয়, তখন কি তুমি সেই স্থানটি ছেড়ে কিছুক্ষণের জন্য অন্য কোথাও চলে যেতে পার? এতে করে বাড়ির লোকের সঙ্গে বারবার সংঘর্ষ হবে না। পরে ওদের রাগ কমে গেলে, ওদের বুঝিয়ে বলো, এতে তুমি কতটা কষ্ট পাও, কেমন? বাবা-মা নিশ্চয়ই তোমাকে বোনের চেয়ে একটুও কম ভালোবাসেন না, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসার প্রকাশটি তুমি হয়তো অনুভব করছ না। তাঁরাই কিন্তু তোমার সবচেয়ে বড় মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী—এ কথাটি অবশ্যই মনে রাখবে। তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর দেখবে, তোমার মতামতগুলো আর আগের মতো নেই, অনেকাংশে বদলে গেছে। আশা করি মনের এই কষ্ট সামলে নিয়ে জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
সমস্যা: আমি সম্মান তৃতীয় বর্ষে পড়ি। আমি সারাক্ষণই দুশ্চিন্তা করি। যেকোনো সাধারণ ভুল করলে আমার অনুশোচনার সীমা থাকে না। সে ব্যাপারটি নিয়ে সারাক্ষণই ভাবতে থাকি। আমি প্রায়ই হীনম্মন্যতায় ভুগি। আমার চেয়ে ওপরের অবস্থানে কাউকে দেখলে আমার দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। আমার এ চিন্তাগুলো বেশির ভাগই নেতিবাচক। এসব নেতিবাচক চিন্তা করার কারণে পরে আবার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। এসব চিন্তার কারণে আমি স্বাভাবিক কাজকর্ম ও পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করতে পারি না। আমি তিন বছর ধরে এ সমস্যায় ভুগছি। আগে আমি খুব উচ্ছল ছিলাম। এখন কোনো ব্যাপারেই আনন্দ খুঁজে পাই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: সারাক্ষণ একই চিন্তা করার অর্থ হচ্ছে, তুমি অবসেশনে ভুগছ। বিশেষ করে নেতিবাচক চিন্তাগুলো তোমার প্রাণশক্তি অনেক কমিয়ে দিচ্ছে। এই দুশ্চিন্তা করার কারণে নিজেকে ছোট না ভাবলে বা অপরাধবোধে না ভুগলে ভালো হয়। তুমি তো ইচ্ছে করে এটি করছ না। ছোটবেলায় তুমি যে ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ, এর সঙ্গে জেনেটিক কারণ যোগ হয়ে এই অসুবিধা তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছে তোমাকে ছোটবেলা থেকে কোনো ভালো কাজের জন্য খুব বেশি উত্সাহ দেওয়া হয়নি।
কোনো ভুল করলে হয়তো বা একটু বেশিই দোষারোপ করা হয়েছে। কাজেই নিজেকে কোনোভাবেই অপরাধী করাটা ঠিক হবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তুমি কখনো কোনো অবস্থায় কারও সঙ্গে নিজের তুলনা করবে না। তুমি তোমার মতো এবং সেভাবেই নিজেকে শ্রদ্ধা করবে। এ ছাড়া তুমি যেহেতু অনেক দিন ধরেই কষ্ট পাচ্ছ, তাই আমার অনুরোধ, তুমি দেরি না করে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল (ফোন নম্বর: ৯৩৫১১৯০-৯১) বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ফোন নম্বর: ৯৬৬১০৫১-৫৬) সাইকোথেরাপি বিভাগে যাও এবং সেখানকার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে থেরাপি গ্রহণ করো।
অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
কাউন্সেলিং সাইকোলজি
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০০৯
Leave a Reply