অনুলোম বিলোমের উপকারিতা
সচেতনতার সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের পর ব্যক্তি নিজেকে স্থির ও শান্ত রাখতে পারে। সকালে এই প্রাণায়ামের সাহায্যে দিন শুরু করা একটি ভালো উপায়। এমনকি এর ফলে ব্যক্তি স্বস্তিতে থাকে এবং ভালো ঘুমও আসে।
অনুলোম বিলোমের কিছু উপকারীতা সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। আবার কিছু কিছু উপকারীতার বিষয় গবেষণা চলছে। প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে প্রাণায়ামের ফলে মস্তিষ্ক উপকৃত হয়। এর পাশাপাশি শ্বাস ও হৃদযন্ত্রও উন্নত হয়। এর ফলে অবসাদ কমতেও দেখা গিয়েছে।
শ্বাস যন্ত্রের ওপর প্রভাব
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যোগাসনে এই শ্বাস প্রশ্বাসের অভ্যাস ফুসফুসের কার্যকরীতা বৃদ্ধি করে।
সাঁতারুদের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। এঁরা অনুলোম বিলোম-সহ আরও দুটি ব্রিদিং প্র্যাকটিস করতেন। এক মাস ধরে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিটের ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতেন প্রতিযোগীরা।
২০১৯-এর একটি রিভিউ আর্টিকেল থেকে জানা যায় যে, যোগে বর্ণিত ব্রিদিং ফুসফুসের কার্যকরীতা বৃদ্ধিতে করতে সাহায্য করে।
অন্য একটি সমীক্ষায় জানা যায় যে দিনে ৩০ মিনিট অনুলোম বিলোম করলে সাইনাস ইলফ্লেমেশান কম করতে সাহায্য পাওয়া যায়।
মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব
এ ক্ষেত্রে ৯৬ জন মেডিক্যাল ছাত্রদের দুটি দলে ভাগ করে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। একটি দল ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ভাসত্রিকা ও অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম করেন। অন্য একটি দল সূর্য নমস্কার এবং সূর্য নমস্কারের নানান যোগেরই একাধিক আসন করেন।
দুই দলরে সদস্যদের সাধারণ সুস্থতায় উন্নতি হলেও, যে দলের সদস্যরা প্রাণায়াম করেছিলেন, তাঁদের চেতনা ও উত্তেজনায় তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
২০১৮ সালের একটি রিভিউয়ে ব্রিদিং এক্সারসাইজের ফলে নিউরোকগনিটিভ, সাইকোফিসিওলজিক্যাল, বায়োকেমিক্যাল এবং মেটাবলিক কার্যপ্রণালীর ক্ষেত্রে একাধিক উপকারীতা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
কার্ডিওভাসকিউলার সিস্টেমের ওপর প্রভাব
২০১১ ও ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষায় জানা যায় যে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, কার্ডিওভাসকিউলার কার্যপ্রক্রিয়া এবং হৃদগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও অনুলোম বিলোমের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ত্বকের ওপর প্রভাব
একাধিক দাবী অনুযায়ী অনুলোম বিলোম ত্বকের পক্ষে উপকারী। অবসাদের কারণে শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি ত্বকও প্রভাবিত হতে পারে। তবে এই দাবীকে প্রমাণ করতে পারে এমন সমীক্ষার অভাব থাকলেও, এই প্রাণায়ামের ফলে ত্বকও কিছুটা উপকার পেতেই পারে।
চোখের ওপর প্রভাব
অনুলোম বিলোম দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। তবে এ বিষয় খুব কম সমীক্ষা করা হয়েছে। যদিও অক্সিজেনের যথাযথ সরবরাহের ওপর উন্নত দৃষ্টিশক্তি নির্ভর করে, তা সকলেরই জানা।
এই প্রাণায়াম শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে। অতএব এর ফলে কিছুটা হলেও চোখ উপকৃত হতে পারে।
অনুলোম বিলোমের কী কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ঝুঁকি রয়েছে?
অধিকাংশ সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনুলোম বিলোমের কোনও জানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ঝুঁকি নেই। ২০১৯ সালের ৬৮টি সমীক্ষার রিভিউ থেকে জানা যায় যে, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এই প্রাণায়াম করলে তা নিরাপদ।
প্রথম প্রথম ১ বা ২ মিনিট থেকে অনুলোম বিলোম করা শুরু করা উচিত। তার পর ধীরে ধীরে এর সময় বাড়িয়ে নিন। তবে এটি করার পর শ্বাসকষ্ট হলে, তা করবেন না। কারও ক্রনিক রেসপিরেটরি বা কার্ডিওভাসকিউলার কনডিশান থাকলে অনুলোম বিলোম করার আগে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন।
কী ভাবে করবেন অনুলোম বিলোম
খালিপেটে এই প্রাণায়াম করা উচিত। আবার খাবার খাওয়ার ৪ ঘণ্টা পর করা যেতে পারে এটি। এর জন্য শান্ত পরিবেশ বেছে নিন।
১. ধ্যান মুদ্রায় বসুন। স্পাইন ও গলা সোজা রাখুন। এবার ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করুন।
২. বহির্জগতের সমস্ত ঘটনাবলী থেকে নিজেকে পৃথক করে নিন।
৩. দুই হাতের কব্জি হাঁটুর ওপর রাখুন।
৪. ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমাকে মুড়ে নিন।
৪. বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে ডান নাকের ছিদ্র বন্ধ করুন এবং বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের ওপর লক্ষ্য রাখুন।
৫. ডান নাকের ওপর থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ সরান এবং ডান হাতের অনামিকা আঙুল দিয়ে বাম নাক বন্ধ করুন। এর পর আস্তে আস্তে ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
৬. ঠিক এই পদ্ধতিতেই ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে গভীর শ্বাস নিন। এ সময় অনামিকা আঙুল দিয়ে বাম নাকের ছিদ্র বন্ধ করে রাখতে হবে। তার পর বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়বেন।
এই পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি সচেতন থাকুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন যে এটি কী ভাবে আপনার শরীরকে প্রভাবিত করছে। নিজের কমফর্ট জোনের বাইরে গিয়ে এই প্রাণায়াম করবেন না।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-05-20 14:39:37
Source link
Leave a Reply