রান্নাঘরের প্রয়োজনীয়তাটা সবচেয়ে বেশী বোঝে গৃহিনী, কারণ এখানেই কাটে তার ব্যস্ত সময়গুলোর এক অংশ। আর তাই এই ঘর প্রসঙ্গে কর্তাদের নজরদারিটা একটু কম থাকে। কিন্তু মনে রাখা উচিৎ এখানেই কিন্তু তৈরি হয় পুরো পরিবারের সু-স্বাস্থ্যের রসদ। আর তাই রান্নাঘরটা একটু গুছিয়ে রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। সেই প্রয়োজনটা আরো জরুরি হয়ে পড়ে যখন সামনে থাকে কোনো উৎসব। আসছে কোরবানী ঈদ এমনই একটা আয়োজন যেখানে পুরো যজ্ঞটাই এই রান্নাঘরকে ঘিরে। তাই নিয়ে কড়চার এই বিশেষ প্রতিবেদন, লিখেছেন এমএইচ মিশু
কোরবানীর ঈদটা একটু বেশীই ভোজ বিলাসিতার একটি উৎসব। এসময় পুরো চাপটাই থাকে রান্নাঘরকে জুড়ে। আর তাই এসময় গৃহিনীর উচিৎ একটু আগে ভাগেই রসুই ঘরকে নিজের মতো করে সাজিয়ে রাখা যেন কোনো কাজেই বাধা না পড়ে। নিচে এর জন্য কিছু কার্যকর টিপস্ দেয়া হলো যা আপনার রান্নাঘরকে উপযোগী করে রাখবে এই ঈদে পরিবারের সবার পূর্ণ রসনা বিলাস আয়োজন করতে।
১. রান্নাঘরটা তৈরির সময়ই এর আয়তন ও ব্যাপ্তি সম্পর্কে ভেবে নেয়া উচিৎ। এখন অনেকেই ছোট অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলোতেও রান্নাঘরকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আয়তনে খুব ছোট হয়ে গেলে তখন তা রান্না-বান্নায় প্রভাব ফেলবে। যদি নিজের বাড়ি হয় তাহলে এই ঈদকে সামনে রেখে রান্নাঘরটাকে আর একটু প্রশস্ত করার চিন্তাভাবনা করতে পারেন।
২. রান্নাঘরে আলো-বাতাসের যোগাযোগটা খুব বেশী প্রয়োজনীয়। নইলে ঘরে ভ্যাপসা ভাব চলে আসবে। আর রান্না করার সময় ধোঁয়া আটকে দম-বন্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ঈদের সময়টাতে যেহেতু একটি বেশী সময় এই ঘরটাতে কাটাতে হবে তাই চেষ্টা করুন এগজস্ট ফ্যান বসাতে। এতে ঘরের মধ্যে জমে যাওয়া বাতাস দ্রুত বাইরে চলে যাবে।
৩. রান্নাঘরের স্টোরেজ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই এ বিষয়টি বিবেচনায় আনুন। কিচেন ক্যাবিনেট যদি লাগানো থাকে আর পুরানো হয়ে যায় তাহলে ঈদের আগেই ঠিকঠাক করে নিন। নচেৎ জরুরী মুহুর্তে কেবিনেটের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে রান্নাবান্না সব ভেস্তে যাবে। ঢাকাতে এখন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কিচেন কেবিনেট তৈরি ও বিক্রি করে থাকে। এছাড়া পুরানো জাহাজে ব্যবহৃত কিচেন কেবিনেট কিনতে পারেন পান্থপথ জাহাজের ফার্নিচার বিক্রির দোকান থেকে।
৪. খুব ভাল হয় যদি ফ্রিজটাকে রান্নাঘরেই জায়গা দিতে পারেন। এতে রান্না করার সময় সব উপকরণ হাতের কাছে পাবেন। যদি জায়গা না হয় তবে কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করুন। আর ফ্রিজের সামনে একটু ফাঁকা জায়গা রাখবেন। এতে সবজি, মাংস সব ঢোকাতে কিংবা বের করতে সহজ হবে।
এতো গেলো রান্নাঘরের ভেতরটা রান্নার উপযোগী করে গুছিয়ে রাখার টিপস্। পাশাপাশি মসলাপাতি, রান্নার বিভিন্ন উপকরণ এসবকিছুও গুছিয়ে রাখতে হবে। কোরবানীর ঈদের রান্নাগুলো যেহেতু এক একটা এক এক রকম হয় তাই সব উপকরণগুলো একটু বেশী পরিমাণে প্রয়োজন হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন সবকিছুই হাতের কাছাকাছি গুছিয়ে রাখতে। এখানে থাকছে রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় তৈজস গোছানোর কিছু প্রয়োজনীয় টিপস্:
১. গরম মশলা আর জিরা বেশী আলোতে না রাখা ভাল। এতে গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়।
২. আটা, ময়দা বা বেসন প্রয়োজন হবে রুটি, পরটা কিংবা চাপ-কাটলেট তৈরিতে। এসব উপকরণ পোকা থেকে বাঁচাতে কয়েকটি মেথি পাতা দিয়ে রাখুন।
৩. আগে থেকে পোলাও এর চাল কিনে রাখতে পারেন যেন দাম বাড়লেও পরিমাণমত প্রয়োজনীয় সময়ে হাতের কাছে পান। তার জন্য চালে কয়েকটা নিম পাতা ফেলে রাখুন।
৪. বিস্কুটের গুড়া বা ব্রেড-ক্রাম প্রয়োজন হবে ফ্রাইড চিকেন তৈরির জন্য। আর তাই চেষ্টা করুন বিস্কুটের গুড়ার কৌটায় ব্লটিং পেপার দিয়ে রাখতে।
৫. এক ছুড়ি দিয়ে সব কিছু কাটতে ব্যবহার করুন এক টুকরা লেবু। কাটা হয়ে গেলে সাথে সাথে ছুড়ির দু পাশে ঘষে নিন লেবু।
ঈদকে সামনে রেখে রান্না ঘরের পাশাপাশি রান্নার সাথে সম্পৃক্ত এমন উপকরণগুলোও একটু গুছিয়ে রাখুন।
মিক্সার গ্রাইন্ডার
গ্রাইন্ডারের সবচেয়ে বড় জারটিকে বলে লিকুইডাইজার। এটি পরিষ্কার রাখতে ঈষদুষ্ণ পানি ব্যবহার করুন। যদি পানি গরম করে পরিষ্কার করার সময় না থাকে তাহলে পাউরুটির একটা ছোট টুকরা ফেলে গ্রাইন্ডার চালু করে দিন, দেখবেন গ্রাইন্ডারের ভেতর পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ননস্টিক পাত্র
এগুলো পরিষ্কার করতে কখনই জাল ব্যবহার করবেন না। কারণ, ঘষে ঘষে এর উপরে এনামেল যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এটা সাধারণ পাত্রের পর্যায়ে পড়বে। আর এসব পাত্রে রান্না করার সময়ই অবশ্যই কাঠের চামচ ব্যবহার করুন।
প্রেসার কুকার
কুকার সবসময় পরিষ্কার রাখুন। পুড়ে গেলে পরিষ্কার করতে সোডা দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। হুইসল পাইপ পরিষ্কার করতে সেফটিপিন দিয়ে পরিষ্কার করুন। কুকারের ভেতর পরিষ্কার করতে লেবুর খোসা পানিতে দিয়ে ফোটাতে থাকুন। খোসা ফুটতে থাকলে আপনাতেই কুকার পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মডেল শারমীন লাকি ছবি ইকবাল আহমেদ
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, নভেম্বর ১৭, ২০০৯
Leave a Reply