অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের সুযোগ নিয়ে যে সব মানব পাচারকারী সীমান্তে বাণিজ্য করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাদেরকে এই কাজ থেকে বিরত করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদ দাতা সেলিয়া মেন্ডোজা তার এই প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে প্রবেশ করা মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার একটি বড় ব্যবসা। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নিজের দেশে সহিংসতা ও দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচতে, সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার জন্য তাদের অর্থ এবং জীবনকে বিপজ্জনক মানুষদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
গুয়াতেমালার অভিবাসী রোনাল্ডো গ্যালিসিয়া বলেন “এখানে আসার সময় আমার সম্পত্তি জমা রেখে আসতে হয়েছে এবং এর জন্য আমাকে কুড়ি হাজার অর্থাৎ ২0,000 ডলার দিতে হয়েছে”। ৩৯ বছর বয়সী গুয়াতেমালান অভিবাসী রোনাল্ডো গ্যালিসিয়া অ্যারিজোনা রাজ্যের টুসানে অভিবাসীদের আশ্রয় কাসা অ্যালিটাসে অবস্থানকালে তাঁর এই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন। অভিবাসী রোনাল্ডো গ্যালিসিয়া বলেন “যে লোকেরা আমাদের তুলে নিয়ে এসেছিল তাদের আমি বিশ্বাস করি না। তারা আমাকে এমন একটি ট্রাঙ্কে রেখেছিল যেখানে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না তবে আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই যে আমি বেঁচে আছি, কারণ ট্রাঙ্কে করে যাদেরকে পাঠানো হয় তাদের সকলেই মারা যান।”
ইউ এস বর্ডার প্যাট্রোল অর্থাৎ যুক্তরাষ্টের সীমান্ত টহলদারী সংস্থা বলছে যে, এই ধরণের অবৈধ কার্যকলাপ কোটি কোটি ডলারের মানব পাচার ব্যবসারই অংশ।বর্ডার পেট্রোলের মুখপাত্র এবং এজেন্ট মারিও এসকালান্ট বলেন, “অবৈধ পারাপারের সাথে অনেক বিপদ যুক্ত রয়েছে। স্পষ্টতই, বেশ কয়েক বছর ধরে, আমরা যা দেখেছি তা হ’ল তারা এই সব লোকদের কাছ থেকে সবরকম সুবিধা নেয়, তাদের যেখানে সেখানে ছেড়ে দেয়, এমনকি তাদের কাছ থেকে চুরিও করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা অল্প বয়সী মেয়েদের ধর্ষণ করে এবং অনেক সময় আরও অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে”।
গুয়াতেমালার অভিবাসী রোনাল্ড গ্যালিসিয়া আরও বলেন, “তারা প্রচুর অর্থ দাবি করে এবং তাদের বলা সময় ও তারিখ অনুযায়ী যদি তারা সেই অর্থ না পায়, তারা আপনাকে মেরে ফেলবে। এবং তারা আপনাকে আস্তে আস্তে মেরে ফেলবে; প্রথমে তারা আপনার হাত কেটে দেবে, জিহ্বা কেটে দেবে, তারপরে তারা আপনার কান কেটে নেবে, এটাই তাদের আইন।”
যুক্তরাষ্টের ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস সদস্য হেনরি কুয়েলার যে জেলাটির দায়িত্বে রয়েছেন, সেটি সান আন্তোনিও থেকে দক্ষিণ টেক্সাসের সীমান্তবর্তী শহর ম্যাকলেন পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত ভালভাবেই জানি যে এই অপরাধী গোষ্ঠীগুলি মাদকদ্রব্য চোরাচালান করে অর্থোপার্জন করে, মানুষকে পাচার করে তারা অর্থ উপার্জন করে।”
যুক্তরাষ্টের শুল্ক এবং সীমান্ত সুরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে যে, ২০২১ অর্থবছরের সময় যুক্তরাষ্টের সীমান্ত অবৈধভাবে অতিক্রম করার চেষ্টা করছে এমন পাঁচ হাজারেরও বেশি লোককে তারা গ্রেপ্তার করেছে, এবং এদের পূর্ববর্তী অর্থাৎ অতীতে অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপের রেকর্ড রয়েছে অথবা আইনের চোখে যারা অপরাধী এবং তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছে যে, যারা অভিবাসীদের আর্থিক ও শারীরিক সুবিধা গ্রহণ করছে, এরকম সব অপরাধীদের দিকেই তারা বেশী মনোনিবেশ করছেন।
দক্ষিণ সীমান্তের সমন্বয়কারী রবার্টা জ্যাকবসন বলেন, “আমরা গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে কাজ করছি এবং নিশ্চিত করতে চাইছি যে, আমরা প্রকৃতপক্ষে সেই সব অপরাধীদের দিকে মনোনিবেশ করি, যারা অপরাধজনিত এবং অর্থনৈতিক কারণে সীমান্ত পার করে দেবার নাম করে এই সব অভিবাসীদের শোষণ করছে।”
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে, তাঁর প্রশাসন কংগ্রেসকে একটি বিস্তৃত অভিবাসন কৌশল প্রেরণ করেছে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত অতিক্রম করার থেকে মানুষদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য – ভয়েস অব আমেরিকা
2021-05-16 02:38:22
Source link
Leave a Reply