হাজার হাজার অভিবাসী যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চান তাদের আশ্রয়ের জন্য আবেদনের মামলাগুলি বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায়, আরও হাজার হাজার মানুষ এখনও এই সুযোগটি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ভিওএ’র সংবাদদাতা সেলিয়া মেন্ডোজা টেক্সাসের এল পাসো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তের বিভিন্ন অংশের দুটি ঘটনা নিয়ে তার এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন এবং জানাচ্ছেন যে, এক অত্যন্ত কঠোর এবং শ্রমসাধ্য যাত্রা শেষে, ৪২ বছর বয়েসী মাইকেল আতিস রিভিয়াক্স মেক্সিকো পৌঁছেছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে কিউবা ত্যাগ করেছিলেন,ইংলিশ গায়ানার পার করে ব্রাজিলের ডেরিয়েন জঙ্গল দু’বার পেরিয়েছিলেন, তারপরে তিনি মধ্য আমেরিকা পেরিয়ে মেক্সিকোয় পৌঁছেছিলেন।টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ডে নদীর তীরবর্তী সিউদাদ ওয়ারেজ থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন।
রাজনৈতিক কারণে আশ্রয় প্রার্থী মিকেল এটিস রিভিয়াক্স বলেন, “আমার একটি স্বপ্ন ছিল যে আমি যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছতে পারব এবং সেখানে গিয়ে আমি আমার আবেদনটি উপস্থাপন করতে সক্ষম হব।” তিনি “বোয়েন সামারিটানো” আশ্রয়ে প্রায় দু’বছর কা্টিয়েছিলেন, বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে আশ্রয় প্রার্থী আবেদনকারী মিকেল এটিস রিভিয়াক্স বলেন, “আমি জানি না, আমি এখন যে সুখ অনুভব করছি তা কীভাবে ব্যাখ্যা করব, আমি কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করব জানি না।”
১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন কয়েক হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মামলা করার বিষয়টি তুলে ধরার অনুমতি দিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউনিসেফ এবং অভিবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এই প্রক্রিয়াটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সানিসিড্রোতে শুরু হয়েছে। অভিবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম’এর আলবার্তো কাবেজাস বলেন, “আমাদের সংস্থার তরফ থেকে আমাদের দুটি ভূমিকা রয়েছে, বিশেষভাবে তৈরি মেক্সিকান পরীক্ষাগারগুলির সহায়তায় কভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যাবস্থা করা এবং একটি প্রায়োগিক ভূমিকা, যা মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত করার সাথে সম্পর্কিত।
স্বেচ্ছাসেবীরা আবেদনকারীদের ক্যাথলিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের “কাসা অ্যালিটাস” এর মতো অলাভজনক সংস্থায় আশ্রয়ের জন্য স্থানান্তরিত করে। একবার তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে তাদের গন্তব্যস্থলের অভিবাসন আদালতে হাজির হওয়ার জন্য ৬0 দিন সময় দেওয়া হয়েছে।” তবে, সমস্ত অভিবাসী যারা আজ মেক্সিকোয় আশ্রয়কেন্দ্রে অপেক্ষা করছেন, সবার ভাগ্য কিন্তু এক নয় । এডা ক্রিস্টেলিয়া মেলান্দেজের মতো হাজারো মানুষ আছেন, যাদেরকে শিরোনাম ৪২ এর ধারার অধীনে মেক্সিকো সীমান্তে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করা হয়েছে। এই শিরোনাম ৪২ অনুযায়ী অভিবাসন কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অভিবাসীদের প্রবেশ আটকে দিতে পারে।
এদা ক্রিস্টেলিয়া মেলান্দেজ বলেন, “আমি আমার নাতনিকে নিয়ে জোর করে চলে এসেছি, কারণ আমার ছেলেকে গুলি করে মারা হয়েছিল।”হন্ডুরাস থেকে আগত মেলান্দেজ যখন নাতনিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের সীমানা অতিক্রম করেছিলেন, তখন শুল্ক এবং সীমান্ত সুরক্ষা প্রতিনিধিরা তার আঙুলের ছাপ নিয়েছিলেন,এবং শিরোনাম ৪২এর ধারা অনুযায়ী তাকে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়েছিলো।এদা ক্রিস্টেলিয়া মেলান্দেজ বলেন, “অফিসাররা আমাকে না বলেছিলেন, যদিও তাতে তারা নিজেরাও যথেষ্ট দুঃখিত ছিলেন, তারা আমাকে বলেছিলেন ‘ম্যাডাম, মহামারীর কারণে আমরা আপনাকে আমরা যেতে দিতে পারব না।” ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা ঊয়ান গঞ্জালেজ শিরোনামের ৪২ টি প্রভাব এবং তা ঠিক রাখার যুক্তি ব্যাখ্যা করেছেন।হোয়াইট হাউস জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা ঊয়ান গঞ্জালেজ বলেন, “আমরা এমপিপির (মাইগ্রান্ট প্রোটেকশন প্রোটোকল) প্রোগ্রামের অংশ নন, এমন মানুষদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে নিশ্চিত করতে শিরোনাম ৪২ এর অধীনে থাকা কর্তৃত্বের ব্যবহার করছি। আমরা সীমান্তের আরও বেশী সংখ্যায় অভিবাসীদের প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং আইনী পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা করছি এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে এটি করা উচিত বলে মনে করছি।”
টেক্সাসের এল প্যাসো থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এডা এবং তার নাতনি মেক্সিকোয় “গুড সামারিটান” আশ্রয়ে অপেক্ষা করছেন। দিদিমা জানিয়েছেন যে মেয়েটির মা, যিনি শিকাগোতে থাকেন, শিশুটিকে একাই সীমান্ত পেরিয়ে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু এডা সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজেই নাতনীকে মেয়ের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য এই যাত্রা শুরু করেছিলেন।
আইনী ক্লার্ক ক্রিস্টাল স্যান্ডোভাল বলেন, “আমরা আশা করি যে প্রশাসন যখন এমপিপি অর্থাৎ মাইগ্রান্ট প্রোটেকশন প্রোটোকলের অন্তর্ভুক্ত লোকদের জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে যারা আশ্রয় চেয়ে অপেক্ষা করছে তাদের সকলের কথাও তারা বিবেচনা করবে।” তবে আইনী সাফল্য না পেয়ে এই পরিণত বয়সে এসে এডা আশা করেন যে, বাইডেন প্রশাসনের আমলে শীঘ্রই এর কিছু একটা সমাধান হবে।এডা বলেন, “কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তা আমার আশা বজায় রাখতে সাহায্য করবেন, কারণ আমি তাঁর উপরে নির্ভর করি এবং আমি আমার সব সমস্যা তার কাছেই সমর্পণ করেছি।” এডার আশা, কর্তৃপক্ষ তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের এবং শিকাগোয় তার মেয়ের সাথে পুনরায় মিলিত হওয়ার সুযোগ অবশ্যই করে দেবে।
স্বাস্থ্য – ভয়েস অব আমেরিকা
2021-05-16 00:47:06
Source link
Leave a Reply