ঢাকার ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের গ্যালারিজুড়ে সিংহাসনে বসে আছেন ভারতীয় রাজরাজড়ারা। পুরো গ্যালারিই যেন রাজরাজড়াদের একটা রাজসভায় পরিণত হয়েছে। কারও মাথায় শোভা পাচ্ছে মুকুট, কারও বা হাতে আংটি আবার কারও বা গলায় হার। ভারতের রাজরাজড়াদের এসব অলংকারের ছবিগুলোই আঁলিয়স ফ্রঁসেসের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো। এখানে আয়োজিত ‘ইন্ডিয়ান প্রিন্সেস অ্যান্ড প্যারিসিয়ান জুয়েলার্স’ শীর্ষক এ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ২৩ অক্টোবর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে ফরাসি রাষ্ট্রদূত শার্লে কোজার্ট ও ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মুক্তা দত্ত। প্রদর্শনী আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। শনিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত আর শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই প্রদর্শনীর ছবিগুলো বাংলাদেশ ছাড়াও একই সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও চীনে প্রদর্শিত হচ্ছে।
প্রদর্শনী কক্ষে ঢুকতেই দৃষ্টি যায় ঢোলপুরের মহারাজার মাথার অলংকারের দিকে। অসাধারণ সে অলংকারের কারুকাজ। পাশের ছবিতে আছে পাতিয়ালা মহারাজা ভূপিন্দর সিংয়ের জন্য তৈরি গলার হার এবং মাথার অলংকার। হীরা কেটে তৈরি করা নয়নাভিরাম এসব অলংকার থেকে যেন দৃষ্টি ফেরানো যায় না। আরেকটু এগোলেই চোখে পড়ে গ্রাভিটি ক্লক ছবিটির দিকে। পুরো ঘড়িটাই সোনার আস্তরে মোড়ানো। এসব ছবি দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, সে সময়ের ভারতীয় রাজরাজড়ারা কী রকম অলংকারপ্রিয় আর শৌখিন ছিলেন। কোনো কোনো অলংকারে রঙের বাহারও চোখে পড়ে। ১৩৬ দশমিক ২৫ ক্যারেট ওজনের একটি অলংকারে ব্যবহার করা হয়েছে নীল, গোলাপি আর জলপাই রঙের মূল্যবান পাথরখণ্ড। ঘুরতে ঘুরতে দৃষ্টি পড়ে ১৯৩০ সালে পাতিয়ালার মহারানির জন্য বানানো একটি গলার হারের ছবির দিকে। রুবি বল, মুক্তা ও হীরকখণ্ড বসানো আছে প্লাটিনামের তৈরি এই গলার হারটিতে। পাশের ছবিতে ফ্রান্সের কার্টিয়ার কোম্পানির বানানো কানের দুলজোড়া যেন এখনো পেন্ডুলামের মতো দুলে যাচ্ছে। এতে প্লাটিনাম, সাদা সোনা, মুক্তা ও রুবি ব্যবহার করা হয়েছে। সবশেষে নজর কাড়ে পাতিয়ালার মহারাজা যাদবেন্দ্র সিং তাঁর বাবা ভূপিন্দর সিংয়ের জন্য তৈরি গলার হার পরে সিংহাসনে বসে আছেন। ছবিটা দেখে মনে হয়, এখনো তিনি বিপুল প্রতাপে সত্যি সত্যিই রাজসিংহাসনে বসে আছেন।
পাশেই টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে সেসব অলংকার তৈরির চুলচেরা বিশ্লেষণ। ছবিগুলো দেখতে দেখতে কল্পনার রঙে ভেসে ওঠে সেসব রাজরাজড়ার কাহিনী। হঠাত্ই গ্লাসের টুংটাং শব্দে সংবিত্ ফিরে আসে। রাত তখন গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে চলেছে। রাস্তা থেকে নিয়ন আলো বারবার জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল আঁলিয়স ফ্রঁসেজের ভেতর। গ্যালারি থেকে বেরিয়ে পথ ধরে হাঁটতে থাকি। আর মনের মধ্যে সেসব অলংকার বারবার দোলা দিয়ে যায় পুরোনো দিনের সেসব শৌখিন রাজা আর তাঁদের স্মৃতিচিহ্নের সাক্ষী হয়ে।
সুজন সুপান্থ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৯
Leave a Reply