সারা দিনের পরিশ্রমে শরীরটা যেন ভেঙে পড়ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে রোগবালাই। সেদিকে কি একবারও একটু নজর দিয়েছেন? সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ, অফিস-আদালত, ভার্সিটি-কলেজ কিংবা গৃহস্থালির কাজ করছেন নিজের ভালোর জন্যই। অথচ ভালো করতে গিয়ে শরীরের জন্য যে পরিমিত বিশ্রাম ও খাবার ছাড়াও আরও কিছু যত্নের প্রয়োজন, তা বেমালুম ভুলতে বসেছেন। একবারও কি ভেবেছেন শুধু ঠিকভাবে হাঁটতে-চলতে পারাটাই শরীর পুরোপুরি সুস্থ থাকা নয়?
বসুন্ধরা গোল্ডস জিমের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্ জানান, ঠিকভাবে হাঁটা-চলা করতে পারা আর ফিট থাকা কখনোই এক নয়। তাঁর মতে, প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট করে যদি কেউ হাঁটে, তাহলে শরীরটা মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। পারসোনা হেলথের ফিটনেস বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক তানজিনা চৌধুরীর মতে অবশ্য এ সময়টা ৩০ মিনিট হলে ভালো হয়। তবে তাঁরা দুজনই একমত যে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত শারীরিক কসরত করতে হবে।
শারীরিক কসরত দুইভাবে হতে পারে। জিমে অথবা বাসায়। তবে কোনো জিমে ব্যায়াম করলে সুবিধাটা হলো সেখানে হরেক রকম ব্যায়ামের সরঞ্জাম থাকে। সেই সঙ্গে থাকে দক্ষ প্রশিক্ষক। কোন ব্যায়াম কীভাবে করতে হবে, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় সেখানে। তবে সময় স্বল্পতায় যাঁরা জিমে যাওয়ার সুযোগ পান না, তাঁরা কিন্তু বাসায় নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরটাকে সুস্থ রাখতে পারেন।
শুরুটা কখন?
ব্যায়ামের শুরুটা কোন বয়সে হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্ জানান, ১৬ বছরের নিচে কারও ব্যায়াম করা উচিত নয়। আন্তর্জাতিকভাবে এ বিধিনিষেধ মেনে চলা হয়। গোল্ডস জিম বা পারসোনা হেলথ এ ব্যাপারটি কঠোরভাবে অনুসরণ করে। ১৬ বছরের নিচের বাচ্চাদের জন্য বিকেলের খেলাধুলাটাই যথেষ্ট-জানান তানজিমা চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ১৪ পেরোনো কিশোরীরা চাইলে অ্যারোবিক্স করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, মোটা স্বাস্থ্য কমানোর জন্য অ্যারোবিক্স ভালো সমাধান নয়।
শুরুতে কোন ব্যায়াম
তানজিমা চৌধুরী ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্র মতে, একদম শুরুতে কোনোভাবেই ভারী ব্যায়ামের দিকে যাওয়া যাবে না। শুরুর দিকে কিছু হালকা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। জিমের ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে ট্রেডমিল, বাইকিং, ন্যাচারাল রানার, স্পিনিং ইত্যাদি। প্রথম ১৫ থেকে ৩০ দিন এ ধরনের ব্যায়ামের মধ্যেই থাকতে হবে। তারপর শরীর যদি সইতে পারে তবে যাওয়া যাবে ওয়েট লিফটিংসহ অন্যদিকে। পারসোনা হেলথ থেকে জানা গেল, নারীদের ক্ষেত্রে একেবারে শুরুর ব্যায়ামটা অ্যারোবিক্স হলেও মন্দ নয়। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, ব্যায়াম যেভাবেই করুন না কেন, এক ব্যায়াম প্রতিদিন নয়। এমনটি হলে হিতে বিপরীতে হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ
যেকোনো বয়সে ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক। যদি এমন কোনো রোগ থেকে থাকে যাতে শরীর ব্যায়ামের ধকল সহ্য করতে পারবে কি না সন্দেহ, তবে ব্যায়াম না করাই ভালো। হৃদরোগ, হাইপারটেনশান বা শরীরের কোনো অঙ্গে কোনো ধরনের ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যায়াম শুরু করতে হবে।
পিঠে ব্যথা
সম্প্রতি রিডার্স ডাইজেস্ট-এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয়েছে পিঠে ব্যথা নিয়েই। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর পাঁচ ভাগের চার ভাগ মানুষ কোনো না কোনো বয়সে পিঠের ব্যথায় ভুগে থাকে। অনেকে আবার পিঠের ব্যথা বাড়বে এ ভয়ে সব রকম ব্যায়াম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। এ ধারণা যে ভিত্তিহীন, তা জোর গলায় বললেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্। তাঁর পরামর্শ হলো, পিঠে ব্যথা থাকলে সামনের দিকে ঝুঁকতে হয় বা তলপেটে চাপ পড়ে-এ ধরনের ব্যায়াম পরিহার করতে হবে। ওয়েট লিফটিং করা যাবে না। হাঁটতে হবে শরীরটাকে সোজা রেখে। দৌড়ানোর চেয়ে হাঁটাটা বেশি ফলপ্রসূ পিঠের ব্যথা উপশমে। তরুণীদের পিঠ ব্যথার অন্যতম কারণ দীর্ঘক্ষণ হাইহিল পরে থাকা। জানান তানজিমা চৌধুরী।
গর্ভকালীন ব্যায়াম
উন্নত বিশ্বে গর্ভকালীন কিছু বিশেষ ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশে এখনো প্রচলিত নয়। গর্ভকালে ভারী কিছু তোলা বা দৌড়ানো অথবা শরীরের ওপর বেশি চাপ পড়ে-এমন কিছু করা উচিত নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্ বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে গর্ভকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে স্বল্প পরিমাণের ব্যায়াম স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন গর্ভকালীন হালকা কিছু ব্যায়াম উপকার করতেই পারে।’ তবে আবারও বলছি, ‘অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করার কথা চিন্তা করতে হবে।’
যোগ অভ্যাস ও ধ্যান
যোগ অভ্যাস ও ধ্যানের ওপর গুরুত্ব দিলেন তানজিমা চৌধুরী। যোগ অভ্যাস বাড়িতেও ভালো মানের সিডি দেখে বা বই পড়ে করা যেতে পারে। তবে কঠিন আসনগুলো যেমন-মৎস্যাসন, শীর্ষাসন, হালাসন করার আগে দক্ষ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে। যোগের অভ্যাস ও ধ্যান শরীরের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং ভালো ঘুমে সাহায্য করে।
ব্যায়াম করলে কী হয়
এখন দেখা যায়, ৪০ বা ৪৫ বছরের বেশি বয়সের নারী মাত্রই অস্টিয়ো পরোসিস, বাতরোগ অথবা আর্থারাইটিসে ভোগে। আবার চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষেরাও বাত রোগে ভোগে হরহামেশা, কিন্তু যদি তরুণ বয়স থেকেই নিয়মিত ব্যায়াম করা হয়, তবে এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব এ বয়সে। এমনটিই জানান তানজিমা চৌধুরী।
ব্যায়ামের মাধ্যমে আরও পরিহার করা যায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী পুরোনো ব্যথা, হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা, পিঠে বা গিঁটের ব্যথা। এমনকি ঘুমের সমস্যাও।
তবে আর দেরি কেন
এবার অন্তত ঠিকভাবে খোঁজখবর নিন শরীরটার। শরীর ঠিক তো আপনি ঠিক। তবে একটা কথা আবারও বলছি, বয়স যতই হোক না কেন, নারী অথবা পুরুষ যা-ই হন, ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা খুবই জরুরি। আর মনে রাখুন, আপনি শরীরের যত্ন নিলে শরীরও আপনার যত্ন নেবে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৮, ২০০৮
nadia
এক ব্যায়াম প্রতিদিন নয় মানে?প্রতিদিন কেউ যদি ৩০ মিনিট হাঁটে সেই হাঁটাও কি প্রতিদিন হলে ক্ষতিকর?বা একই আসন প্রতিদিন করলে সেটাও কি হিতে বিপরীত ঘটাবে!!!!!????????
Bangla Health
মাঝে মাঝে একটু ভেরিয়েশন আনার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে ভারী ব্যায়ামের বেলায়। এমনিতেই ভারী ব্যায়ামগুলো মানে জিমে গিয়ে ওয়েট লিফটিং, এগুলো একদিন পর পর করতে হয়। এভাবে ধরুন সপ্তাহে ৩ দিন। আর এর একেক দিন শরীরের একেক অংশের ব্যায়াম করতে হয়। যেমন ধরুন। একদিন বুক এবং পিঠ, একদিন পা ও কোমরের নিচের অংশ, একদিন কাঁধ ও হাত/বাহু। এবার ধরুন বুক ও পিঠের ব্যায়াম- বুকের বেলায় ৩ ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিবার একই ভাবে না করে মাঝে মাঝে আগে পরে করা। আগে পিঠের, পরে বুকের। বা উল্টোটা।
হাঁটার মত হালকা ব্যায়ামে সমস্যা নেই। আসনের ব্যাপারে আসনগুলো আগে-পরে করে নিতে পারেন।