প্রকৃতিতে এখন ঋতু বদলের পালা। গাছের পাতাগুলোও আছে ঝরার অপেক্ষায়। এ সময়টায় আপনার ত্বকের চাই বিশেষ পরিচর্যা। বাতাসে আর্দ্রতার অভাবটা ধরা পড়ছে ত্বক টানটান হয়ে ওঠায়। ত্বকের এখন চাই বাড়তি আর্দ্রতা। ব্যবহার করতে হয় ময়েশ্চারাইজার। সঠিক ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন আর এর ব্যবহারবিধি নিয়ে বলেছেন রূপসজ্জাশিল্পী আফরোজা পারভীন।
ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার
‘ত্বকের খাদ্য হচ্ছে ময়েশ্চারাইজার। ত্বককে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে সতেজ রাখে। ত্বকের যে কোলাজেনগুলো থাকে, সেগুলোকে সতেজ রাখে ময়েশ্চারাইজার। শীতের সময় ত্বকের স্বাভাবিক তেল নিঃসরণ কমে যায়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই ময়েশ্চারাইজার লাগানো জরুরি।’ ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এভাবেই বলছিলেন আফরোজা পারভীন। এ ছাড়াও ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার জরুরি। কারণ অতিরিক্ত রোদ, ঠান্ডা, ধুলোবালি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। ফলে ত্বক থাকে সজীব ও টানটান।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার
আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। শুষ্ক ত্বকের তেল নিঃসরণ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় বছরের এ সময়টায়। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য বেছে নিন এমন ময়েশ্চারাইজার, যাতে পানি, গ্লিসারিন ও তেলের পরিমাণ বেশি। শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম দিতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেলমুক্ত ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করুন। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে, তারাও তেলমুক্ত ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য অল্প পরিমাণ তেল আছে, এমন ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করতে পারেন।
ভেষজ উপাদানে ময়েশ্চারাইজিং
বাজারে যেসব ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, সেগুলো থেকে আপনি আপনার ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে না চাইলে ঘরে বসেও ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন।
ঘৃতকুমারীর রস, গাজরের অঙ্কুর ও মৌমাছির মোম ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
স্বাভাবিক ত্বকে মধু একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার।
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে মধুর সঙ্গে একটু লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
শুষ্ক ত্বকে নারকেলের দুধ খুবই উপকারী।
গোলাপজল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে পারেন হাত, পা ও মুখে।
শুষ্ক ত্বকে দুধের সর লাগাতে পারেন। কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে পারেন।
জলপাইয়ের তেল একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার।
পাকা কলা বা পাকা পেঁপে মুখে কিছুক্ষণ রেখে হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
আপেল কোরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
মেকআপ তোলার জন্য তুলার বল ভিজিয়ে তাতে নারকেল তেল ও জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
শসার রস ও মধু মিশিয়েও ময়েশ্চারাইজার হিসেবে লাগাতে পারেন।
টমেটোর রস একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার। কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
ব্যবহারবিধি
সকালে ও রাতে দুবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। গোসলের পর ত্বকে ভিজে ভিজে ভাব থাকতে থাকতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। কারণ, ভিজে ত্বকে লাগালে ত্বকের অতিরিক্ত আর্দ্রতা বজায় থাকে। বাইরে বেরোনোর আগে ময়েশ্চারাইজার দিন, তারপর সানস্ক্রিন। ঘুমানোর আগে হাত, পা ও মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে খানিকক্ষণ ম্যাসাজ করুন। চোখের তলায় হালকা করে লাগান। ঠোঁটে চ্যাপস্টিক, লিপবাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন। লিপস্টিক হিসেবে বেছে নিন ভিটামিন ‘ই’ ও ময়েশ্চারাইজারযুক্ত লিপস্টিক।
বাজারে পাওয়া যায় এমন ময়েশ্চারাইজার
যারা একটু ব্যস্ত থাকেন, তাঁরা বাজার থেকেও ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার কিনে নিতে পারেন। বাজারে ক্রিম ও লোশন দুই ধরনের ময়েশ্চারাইজার পাবেন। ক্রিম বেছে নিতে চাইলে নিভিয়া পাবেন ৬৫ থেকে ২৪০ টাকায়, ক্রিস্টাল আইস ২২০ থেকে ৪৫০, ক্রিম টুয়েন্টি ওয়ান ১২৫ থেকে ৩১০, এসেনসিয়ালস ২৫০ থেকে ৩২০, লরিয়াল ডে ও নাইচ ৭৫০ টাকায়।
ময়েশ্চারাইজিং লোশন পাবেন গার্নিয়ার ২৩০ টাকা, কেরি ময়েশ্চার থেরাপি ৩০০ থেকে ৪০০, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার ৪৫০ থেকে ৫০০, ডাভ ২৮০ থেকে ৩০০, ভেসলিন ২৫০ থেকে ৩৯০, নিউট্রিজিনা ২৮০ ও জনসন বেবি লোশন ৫৫০ টাকায়।
শান্তা তাওহিদা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৯
Leave a Reply