প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমকম পাস করে জনতা ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন মুসলিমা বেগম। ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় তখন তিনিই একমাত্র নারী কর্মকর্তা। চাকরিতে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরই টের পেলেন প্রথম সন্তানের আগমন স্পন্দন। আজিমপুরের বাসা থেকে প্রতিদিন রিকশায় যেতেন মতিঝিলের অফিসে। নতুন সংসার, ঢাকায় নিজের বলে কেউ নেই, একহাতে সংসারের সবকিছু সামলে প্রায় প্রতিদিন কিছু না খেয়েই অফিস করতে ছুটতেন। আর গলদঘর্ম হয়ে অফিসে ঢুকেই তাঁর প্রথম কাজ ছিল বাথরুমে ঢুকে হড়হড় করে বমি করা।
‘সে যে কী অস্বস্তিকর দিনগুলি গেছে।’ আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বলেন মুসলিমা, ‘সে সময় অফিসে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো বাথরুম ছিল না। প্রেগন্যান্সির সময়টাতে পুরুষ সহকর্মীদের সামনে সংকুচিত হয়ে কোনোমতে দিনটা কাটাতে হতো। শরীর খারাপ লাগলে প্রাণপণে চেপে রাখতে হতো সবকিছু; তখন এসব মেয়েলি বিষয় নিয়ে অফিসের কারও সঙ্গে আলাপ করার প্রশ্নই আসত না। এখনকার অফিসের পরিবেশ তো সেদিনের তুলনায় অনেক উদার, পুরুষ সহকর্মীরাও এখন অনেক সচেতন। এখনকার কর্মজীবী মেয়েরা আমাদের তুলনায় অনেক লাকি।’
২৫ বছর পর আজকের অফিস-আদালতের চিত্র অনেকটাই বদলেছে বইকি। বর্তমানে কমবেশি প্রায় সব অফিসই মেয়েদের পদচারণে মুখর। আর সে কারণে বিশেষ সময়গুলোতে মেয়েদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারেও অফিসগুলো এখন সচেতন। তার পরও ক্যারিয়ারের শুরুতেই যে জিনিসটি কর্মজীবী মেয়েদের একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়, তা হচ্ছে প্রেগন্যান্সি। এই নাজুক সময়ে অফিসের সব ধরনের কাজে মানিয়ে নেওয়া, আলাদা করে নিজের যত্ন নেওয়া বা কিছুটা বাড়তি প্রাইভেসির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বেশির ভাগ মেয়েই ঝামেলায় পড়েন। তাল মিলিয়ে না চলতে পেরে অনেকে এ সময় ক্যারিয়ারে ইস্তফা দিতেও দেরি করেন না। তেমনই একজন তানিয়া রহমান প্রথম সন্তান জ্নের সময় একটা নামকরা এনজিওর বড় পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বেসরকারি সংস্থাটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে মাসে প্রায় তিন-চারবার ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হতো। কখনো গাড়িতে, কখনো ভ্যানে, কখনো গ্রামের মেঠোপথে রিকশায় বা হেঁটে চলতে হতো তাঁকে। প্রচণ্ড কষ্ট হলেও দায়িত্বশীলতার কারণে শরীর খারাপ নিয়েও অফিসের কোনো কাজে কখনো আপত্তি জানাননি তিনি। কিন্তু মাস দুয়েক যেতে একদিন উত্তরাঞ্চলে কষ্টকর এক ট্যুর সেরে ঢাকায় ফিরতেই পরপর দুদিন রক্তপাত হলো তাঁর। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তাঁকে এক মাস পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বললেন। নতুন চাকরি-এক মাসের ছুটি পাওয়া গেল না। অগত্যা অমন ভালো চাকরিটা ছেড়ে দিলেন তানিয়া। পুরো গর্ভকালীন সময়ে আর চাকরির কথা ভাবলেনই না তিনি। সন্তান হয়ে যাওয়ার আরও ছয় মাস পর ইন্টারভিউ দিয়ে যোগ দিলেন এবার এমন একটি অফিসে, যেখানে কায়িক শ্রম নেই। কেননা, দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার সময় আর চাকরি ছাড়ার ঝুঁকি নিতে চান না তিনি।
প্রেগন্যান্সি তো কোনো অসুস্থতা নয়
অন্য সব ঘটনার মতোই গর্ভাবস্থা মেয়েদের জীবনে একটা সহজ স্বাভাবিক ঘটনা। এটা কোনো অসুস্থতা নয়, কোনো প্রতিবন্ধকতাও নয়। এ সময় কেবল মেয়েদের দরকার একটু বাড়তি মনোযোগ, বাড়তি যত্ন আর বাড়তি সচেতনতা। আর এগুলো হচ্ছে মেয়েদের একটি মৌলিক অধিকার। এই প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাটাও নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব। অথচ গর্ভাবস্থায় কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের একটু ছাড় দিতে হয় বলে, আর তারপর চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হয় বলে অনেক অফিসের বড় কর্তা নারী অধীনস্থদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন। এতে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের কর্মদক্ষতা এবং উৎপাদনক্ষমতাকেই অপমান করা হয়। সংসার এবং ক্যারিয়ার জীবনের শুরুতে শারীরিক নাজুকতার কারণে এসব দোলাচলে পড়ে অনেক মেয়েকেই নার্ভাস হয়ে পড়তে দেখা যায়। বিশেষ সময়ে অফিসে সামান্য এসব ছাড় পাওয়ার কারণে অনেক নারীই সংকুচিত হয়ে থাকেন। অথচ এ বিষয়টি নিয়ে এত বিব্রত বা সংকুচিত হওয়ার কিছুই নেই। বাড়িতে যেমন, তেমনি অফিসেও এ সময় একটু বাড়তি যত্ন ও মনোযোগ প্রতিটি মেয়ের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ইদানীং অবশ্য বেশির ভাগ অফিসে এসব নিয়ে সংকোচ বা লজ্জার আড় ভেঙেছে। গর্ভবতী সহকর্মী বা অধীনস্থদের ব্যাপারে পুরুষ সহকর্মীদের সচেতনতা বেড়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক মনোভাবও বেড়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন ডা· জুবাইদা। গর্ভকালীন পুরুষ সহকর্মীদের যথেষ্ট সহযোগিতাই তিনি পেয়েছেন বলে মনে করেন। হাসপাতালে ডিউটির সময় হঠাৎ শরীর খারাপ হলে খুব ভারী বা শ্রমসাধ্য কোনো কাজের ব্যাপারে সব সময়ই সহকর্মীরা কি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন? শেষের দিকে রাতে ডিউটির ব্যাপারেও ছাড় পেয়েছেন তিনি। খুব খারাপ ধরনের সংক্রামক ব্যাধি আছে এমন রোগী নিজের দায়িত্বে পড়লে তাঁর প্রফেসর নিজ উদ্যোগে তাঁর দায়িত্ব অন্য চিকিৎসককে বণ্টন করে দিতেন হবু মায়ের সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য। ‘তবে এটা ঠিক।’ বলেন ডা· জুবাইদা। ‘কর্মজীবী হবু মায়েদের খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম প্রভৃতি নিয়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়। আমার অফিস শুরু হতো সকাল আটটায়, বের হতাম সাড়ে সাতটায়। মর্নিং সিকনেসের ভয়ে কিছু না খেয়েই যেতে হতো। পুরো দিনের খাবার আগের রাতে তৈরি করে অফিসে নিয়ে যেতাম। কাজের ফাঁকে একটু একটু করে খেতাম। হাসপাতালে ছোটাছুটির সময় শেষের দিকে একটু বিশ্রাম বা ঘুমের জন্য শরীরটা ভেঙে আসত। শরীরটা বেশি ভারী হয়ে গেলে হাঁসফাঁস লাগত। মনে হতো কখন বাসায় গিয়ে এসব বাইরের পোশাক ছেড়ে একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিতে পারব।’
একটি মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মুনমুন। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা-অবধি একই টেবিলে বসে কাস্টমার কেয়ার করতে হয় তাঁকে। মাঝখানে দুপুরের খাওয়ার সময় বাদে একটু ফুরসতও নেই। সারা দিন এভাবে বসে কাজ করতে করতে সাড়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মুনমুন দুটি বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। একটি হলো, তাঁর পা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে, দুই দফা জুতোর আকার পাল্টেছেন তিনি। দ্বিতীয়ত, রাতে বাড়িতে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই শুরু হয় কোমর আর পিঠের ব্যথা। প্রায়ই সারা রাত বালিশে হেলান দিয়ে হট ওয়াটার ব্যাগ পিঠে বসে থাকতে হয়। তাঁর গাইনোকলজিস্ট দীর্ঘ সময় পা ঝুলিয়ে কম্পিউটারে কাজ করতে নিষেধ করলে কী হবে, মুনমুনের সারা দিনের কাজই যে সেটা।
তবে ঢাকা শহরে কর্মজীবী হবু মায়েরা সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়েন, নিঃসন্দেহে তা হচ্ছে যাতায়াত। নিজস্ব গাড়ি যাঁদের নেই তাঁরা এ অবস্থায় বাস, রিকশা, সিএনজি যা-ই ব্যবহার করুন না কেন, বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়ার পথটুকু প্রত্যেকের কাছেই দুর্গম মনে হয়। সুস্থ সবল পুরুষ সহকর্মীরাও যেখানে বিকেল পাঁচটায় অফিস ছুটির পর বাড়ি ফেরা নিয়ে বিরাট সংগ্রামে নেমে নাজেহাল হয়ে পড়েন, সেখানে নাজুক ও ভারী শরীর নিয়ে নারীটির কী দশা হয় তা সহজেই অনুমেয়।
এ বিষয়ে মুনমুনের অভিমত, প্রতিটি অফিসেরই উচিত কর্মজীবীদের, বিশেষত নারী কর্মজীবীদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা। এ জন্য বাড়তি ভাড়া নিয়ে হলেও তারা এটা করতে পারে। একটি অফিসের সবাই যদি অফিসের যানবাহন ব্যবহার করে, তাহলে রাস্তায়ও যানজট অনেক কমে যায়।
ওদিকে সরকারি চাকুরেদের জন্য রয়েছে ভিন্নতর কিছু সমস্যা। সরাবন তহুরা কর্মরত আছেন সহকারী বিচারক হিসেবে। এ মুহূর্তে তাঁর কর্মস্থল ময়মনসিংহ সদরে। তিনি অন্তঃসত্ত্বাও। তাঁর স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন ঢাকায়; কিন্তু বদলির চাকরির সুবাদে তাঁকে এ সময় ময়মনসিংহেই থাকতে হচ্ছে। যদিও আদালতের সব সহকর্মী, এমনকি পেশকার থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকেই একজন হবু মায়ের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও যত্নশীল বলে মনে হয় তাঁর কাছে, তবু এই বিশেষ সময়ে পরিবার থেকে দূরে থাকা এবং প্রায়ই ঢাকা-ময়মনসিংহ যাতায়াতের ধকল সামলানো অত্যন্ত দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা বলে বোধ হয়। শেষবার মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে একেবারে ঢাকায় চলে আসার সময় ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় এবং প্রচণ্ড গরমে অস্থির তহুরার যখন হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়ে গেল, তখন তো তিনি একেবারেই ঘাবড়ে গেলেন। এখনই যদি লেবার পেইন শুরু হয়ে যায়, তবে এই চলন্ত ট্রেনে তিনি কী করবেন বুঝে না পেয়ে দিশেহারা লাগছিল তাঁর। কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ কেবল কর্মজীবী মাকেই সামলাতে হয়, তা মানতে রাজি নন তিনি। কেননা, সন্তান ধারণ এবং তার জ্ন দেওয়ার পুরো ব্যাপারটিই আসলে একটি বিরাট ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ প্রতিটি মেয়ের জন্য। কর্মজীবী কি গৃহবধূ প্রতিটি নারীকেই এই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করতে হয়। এ জন্য প্রত্যেকেরই দরকার আশপাশের সবার সাহায্যের হাত।
সচেতনতা নিজেকে নিয়ে
কর্মজীবী মায়েদের এই বিশেষ সময়ে নিজের প্রতি সচেতনতা নিয়ে আমরা কথা বলেছি বারডেম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
ডা· রোনা লায়লার সঙ্গে। গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারীরই উচিত নিজের ব্যাপারে একটু সচেতন হওয়া, নিজের একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া। কর্মজীবী মায়েদের বেলায়ও তাই। তফাৎ কেবল এটুকুই যে তাদের বেলায় খাদ্যাভ্যাস-বিশ্রাম এ সবকিছু অফিসের সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে নিতে হবে। তবে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে ডা· রোনা লায়লা বলেন, গৃহিণীদের তুলনায় বরং কর্মজীবী নারীরা এ সময়টা তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো কাটান। গর্ভকালীন বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্যথা, বমি, মাথা ঘোরা, শরীর খারাপ লাগা প্রভৃতি বরং এঁদেরই কম হতে দেখা যায়। সারা দিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণেই বোধহয় উপসর্গগুলো কর্মজীবী নারীদের একটু কম বলতে শোনা যায়। তার পরও গর্ভকালীন কর্মজীবী নারীদের বিশেষ কিছু পরামর্শ দিতে চান ডা· রোনা লায়লা।
এক· যত তাড়াহুড়োই থাক, একেবারে খালি পেটে কখনোই সকালে অফিসে ছুটবেন না। যাঁদের মর্নিং সিকনেস বা বমি ভাব বেশি তাঁরা হালকা মুড়ি, বিস্কুট বা এক টুকরা পাউরুটি খেয়ে মূল নাশতাটি টিফিন বক্সে ভরে নিয়ে যেতে পারেন। অফিসে পৌঁছে ধীরেসুস্থে নাশতাটি সারবেন।
দুই· যাঁরা সারা দিন অফিসে থাকবেন, তাঁরা দুপুর ও বিকেলে কী খাবেন সে ভাবনা আগের রাতেই সেরে রাখবেন। কেনা খাবার বা ক্যান্টিনের খাবার খেতে সব সময়ই চিকিৎসকেরা নিরুৎসাহিত করে থাকেন। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বাড়ি থেকে সারা দিনের খাবার আলাদা বক্সে করে নিয়ে যাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতিদিন একটি করে ফল, প্রচুর পরিমাণে সবজি এবং মাঝেমধ্যে একটি করে ডিম সেদ্ধ নেবেন। সারা দিনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। অফিসে অনেকেই বারবার বাথরুমে যাওয়ার ভয়ে পানি কম পান করেন, এটা ঠিক নয়।
তিন· গর্ভবতী মহিলাদের এ সময় যে রাতে আট ঘণ্টা ঘুমের পরও দিনে আরও দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে বলা হয়, তা হয়তো অধিকাংশ কর্মজীবী নারীর পক্ষে সম্ভব হয় না। তবু অফিসে কাজের ফাঁকে বিকেলের দিকে একটু বিরতি নিন, একটু রিলাক্স করুন। কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। রাতে বাড়ি ফিরে বিশ্রামটুকু পুষিয়ে নিন।
চার· টেবিলে বসে কাজ করতে করতে পায়ে পানি চলে এলে পায়ের নিচে একটি টুল রেখে কাজ করার অভ্যাস করুন। একইভাবে সারা দিন বসে না থেকে কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে একটু হেঁটে আসুন, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে আসুন।
পাঁচ· অফিসে যাওয়ার সময় ছোট যানবাহন যেমন-রিকশা বা সিএনজি পরিহার করুন। কেননা, এগুলোতে ঝাঁকুনি বেশি হয়। বড় ধরনের যানবাহন যেমন-বাস বা ট্রেন ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত ভিড় ও ঠেলাঠেলি পরিহার করুন। ধীরেসুস্থে চলুন।
ছয়· গর্ভকালীন অফিসে আরামদায়ক সুতি পোশাক ও ফ্ল্যাট স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। জবরজং অস্বস্তিকর পোশাকআশাক কিছুদিনের জন্য হলেও বাদ দিন।
সাত· ঠিক কবে নাগাদ ডেলিভারির তারিখ এবং কবে থেকে আপনি ছুটি নেবেন সে বিষয়ে অফিসকে আগেভাগেই জানিয়ে রাখুন। মাতৃত্বকালীন ছুটি নেবেন অন্তত ডেলিভারির তারিখের দুই সপ্তাহ আগে থেকে।
আসুন, সবাই সচেতন হই
মা হওয়ার সময়টা শুধু একজন নারীর জন্য নয়, তাঁর পরিবারের জন্য এমনকি পুরো জাতির জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মায়ের সুস্বাস্থ্য ও সঠিক পুষ্টি-যত্ন নিশ্চিত করা আমাদের সবারই দায়িত্ব। অফিসের সবাই মিলে যেমন এ সময় একজন মায়ের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, তেমনি বাড়িতে যারা আছে তাদেরও এ ব্যাপারে অনেক কিছু করণীয় আছে। অফিস সময়ে তিনি কী খাবেন, কী করবেন বা কীভাবে যাওয়া-আসা করবেন, সেদিকে বাড়ির লোকেরও দৃষ্টি রাখতে হবে। যে মেয়েটি সারা দিন অফিসে হয়তো বিশ্রাম করার একটু সময় পায়নি, তাঁকে বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে ও রিলাক্স করতে সাহায্য করুন। ছুটির দিনগুলোতে তাঁকে একটু বাড়তি বিশ্রামের সুযোগ দিন, একটু বাড়তি যত্ন নিন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক রাখুন ও যোগাযোগ বজায় রাখুন। বাড়িতে ও কর্মক্ষেত্রে সবাই মিলে আসুন, হবু মায়ের কষ্ট ও আনন্দ দুই-ই ভাগাভাগি করে নিতে চেষ্টা করি।
ডা· তানজিনা হোসেন
সূত্রঃ প্রথম আলো, অক্টোবর ২৮, ২০০৮
Leave a Reply