হাইলাইটস
- সর্বত্র করোনা-করোনা রবে এমনিতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে ঘোর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
- মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস, কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দোলুইরা জানাচ্ছেন, ইদানীং নিয়মিত তাঁরা বহু শ্বাসকষ্টের রোগীর ফোন পান রাতবিরেতে
- মারাত্মক উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারের রোগীদের মধ্যে বরাবরই শ্বাসের সমস্যা, বুকে চাপ ভাব, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
সদ্য করোনার বলি হয়েছেন এক সহকর্মী। তাই রেলের অফিসার ভদ্রলোক নিজের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ দেখার পর থেকেই মানসিক ভাবে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। অথচ তেমন কোনও উপসর্গই ছিল না তাঁর। সন্ধ্যায় আচমকা শ্বাসের সমস্যা দেখা দেওয়ায় আঙুলে পালস অক্সিমিটার লাগিয়ে দেখলেন, ৯৩% দেখাচ্ছে অক্সিজেন স্যাচুরেশন। তড়িঘড়ি স্থানীয় নার্সিংহোমে যাওয়ার পর তাঁর যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক অবশ্য জানিয়ে দেন, দিব্যি আছে তাঁর ফুসফুস। শ্বাসকষ্টটা আদতে তাঁর মানসিক উদ্বেগের চরম বহিঃপ্রকাশ।
হাওড়ার এক গৃহবধূও। রাতের খাবার খেয়ে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই বুক ধড়ফড় আর বুকে চাপধরা অনুভূতি এবং সঙ্গে নিঃশ্বাসের অসুবিধা হওয়ায় তড়িঘড়ি ভিডিয়ো কল করেন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানকে। তিনি স্যাচুরেশন মাপিয়ে আর কয়েকটি প্রশ্ন করেই বুঝে যান, ওই কোভিড রোগিণী করোনা নয়, বরং প্যানিক অ্যাটাকের শিকার।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এমন নজির আজকাল আকছার দেখছেন তাঁরা। সর্বত্র করোনা-করোনা রবে এমনিতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে ঘোর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। তাঁদের মধ্যে আবার যাঁরা কোভিড পজিটিভ হয়ে পড়ছেন, উপসর্গ থাক বা না-থাক, অনেকেই শ্বাসকষ্টের শিকার হচ্ছেন! কারও বুক ধড়ফড় করছে তো কারও নেমে যাচ্ছে পালস অক্সিমিটারের রিডিং! অথচ করোনার উপসর্গ একেবারেই মৃদু বা মাঝারি গোত্রের। অক্সিমিটার দেখেও আবার অনেকের বেড়ে যাচ্ছে শ্বাসের সমস্যা। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখছেন, এঁদের অধিকাংশেরই আসল সমস্যাটা ফুসফুসে নয়, বরং মনে। সাধারণ কয়েকটি শ্বাসের ব্যায়ামেই এর নিরাময় সম্ভব। কিন্তু অতি-সচেতন হয়ে পড়াই কাল হচ্ছে লোকের!
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস, কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দোলুইরা জানাচ্ছেন, ইদানীং নিয়মিত তাঁরা বহু শ্বাসকষ্টের রোগীর ফোন পান রাতবিরেতে। কথাবার্তা বলে, যথাযথ ভাবে স্যাচুরেশন মেপে একসময় তাঁরা নিশ্চিত হন, আদতে সমস্যাটা প্যানিক অ্যাটাকের। তা থেকেই ওই সব রোগীর শ্বাস ও অক্সিজেন সংক্রান্ত সমস্যার সূত্রপাত। অর্থাৎ ভাইরাসের কারণে নয়, গণ্ডগোলটা আদতে মানসিক, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে শরীরেও। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সরকার বলেন, ‘চারদিকে করোনার এত নেতিবাচক খবর সব সময়ে ভিড় করছে মনে। তার ওপর জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেনও মিলছে না। অনেক করোনা রোগীরই তাই উদ্বেগ, রাতবিরেতে কারও সাহায্য ছাড়াই বেঘোরে হাঁফাতে হাঁফাতে মরে যেতে হবে না তো! সেখান থেকেই প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে অনেকের।’
আর এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেল জানান, বিষয়টি নতুন নয়। মারাত্মক উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারের রোগীদের মধ্যে বরাবরই শ্বাসের সমস্যা, বুকে চাপ ভাব, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। করোনাকালের আগেও ছিল, এখনও আছে। তাঁর কথায়, ‘যখনই প্যানিক অ্যাটাক হয়, তখনই গোটা শরীরের সব ক’টি তন্ত্র বিপদের গন্ধ পেয়ে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। বেড়ে যায় নাড়ি ও শ্বাসের গতি। অ্যাড্রেনালিন-সহ গুচ্ছ হরমোন ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। একদম যেন ইমার্জেন্সি! সেটাকেই করোনা রোগী ও তাঁর পরিজন কোভিডের শ্বাসকষ্টের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।’ তাঁর পরামর্শ, এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রাজেশ প্রামাণিক জানান, প্রকৃত শ্বাসকষ্টের রোগীরা একটা লম্বা বাক্য শেষ করার আগেই বারংবার থেমে দম নিয়ে নেন। একটু কায়িক পরিশ্রমেই তাঁদের স্যাচুরেশন আরও কমে যায়। কিন্তু প্যানিক অ্যাটাকের রোগীদের এ সব কিছুই হয় না। তাঁর কথায়, ‘প্যানিক অ্যাটাকের বৃত্তটা কিন্তু গণ্ডগোলে। স্যাচুরেশন ৯৫% বা তার কম দেখে ভয় পেয়ে যাওয়া মানেই হল ছদ্ম শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যাবে। ফলে বেড়ে যাবে শ্বাসের গতি। তখন আরও কমে যাবে স্যাচুরেশন।’ বিশেষজ্ঞদের তাই পরামর্শ, এমনটা হলে ‘যা হয় হোক’ ভেবে জোর করেই বরং কিছুটা শান্ত ও উদাসীন থাকার চেষ্টা করতে হবে। তাতেই পরিস্থিতি অনেকটা শুধরোতে বাধ্য।
কী ভাবে? স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিমেষ কর বলেন, ‘আচমকা উদ্বেগ বেড়ে গেলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি পুরোনো অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারের রোগী না-হন, সে ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরে মস্তিষ্কই শরীরকে ধীরে ধীরে শান্ত করতে শুরু করে। শ্বাসের অসুবিধা হলে কিংবা স্যাচুরেশন কম দেখালেই টেনশন শুরু না-করে যদি কিছুক্ষণ ধীর-স্থির হয়ে থাকা যায়, তা হলে সব ঠিক হয়ে যায় একটু পরে। প্রয়োজনে ডিপ ব্রিদিং করা যেতে পারে। এতে আরও দ্রুত স্বাভাবিক হয় শরীর।’
মনের গভীরে শ্বাসকষ্ট
* ফারাক বুঝবেন কী করে?
ফুসফুসের সমস্যায়: লম্বা বাক্য শেষ করতে বার বার হাঁফ ধরে। কায়িক পরিশ্রমে কষ্ট বাড়ে, কমে স্যাচুরেশন
প্যানিক অ্যাটাকে: লম্বা বাক্য শেষ করতে হাঁফ ধরে না। কায়িক পরিশ্রমে কষ্ট বাড়ে না, কমে না স্যাচুরেশন
* প্যানিক অ্যাটাকে কী করণীয়?
নেতিবাচক চিন্তা দূরে সরান
নাক দিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিন। কিছুক্ষণ দম ধরে রাখুন। মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়ার মতো করে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন
শান্ত হয়ে পালস অক্সিমিটার লাগান আঙুলে। ডিসপ্লে স্থির হওয়ার অন্তত এক মিনিট পরে রিডিং নিন। রিডিং ৯৫% বা তার কম এলে আধ ঘণ্টা পরে ফের দেখুন বিভিন্ন আঙুলে। সবচেয়ে কম রিডিংটা নয়, সবচেয়ে বেশি রিডিংটাই ধরতে হবে
কলকাতার আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন। প্রতি মুহূর্তে খবরের আপডেটের জন্য চোখ রাখুন এই সময় ডিজিটালে।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-05-08 09:58:43
Source link
Leave a Reply