বিচারকদের যখন ফোন করে বিচারকাজের সময় জানানো হচ্ছিল, তখন সবাই দারুণ উত্তেজিত। এত্ত এত্ত আচার চেখে দেখা যাবে! বিচারের দিনও টেবিলে সাজিয়ে রাখা সারি সারি আচারের বয়াম ঘুরেফিরে দেখে বারবার একই কথা বলছিলেন সবাই। তবে রাহিমা সুলতানা তখনই সবাইকে সতর্ক করছিলেন, ‘কাজটা কিন্তু মোটেও এত মজার নয়।’ আগে একবার বিচারক হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলছিলেন।
প্রাণ-প্রথম আলো জাতীয় আচার প্রতিযোগিতার ১০ বছর পূর্তিতে বিচারকের সংখ্যাও ছিল ১০। এবার বিচারক হিসেবে ছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা লায়লা আরজুমান্দ বানু, রান্নাবিদ রাহিমা সুলতানা, নজরুলসংগীতের শিল্পী ফেরদৌস আরা, বাংলাদেশ সরকারের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নাহিদ মাহতাব, ফ্যাশন হাউস সাদাকালোর স্বত্বাধিকারী তাহসিনা শাহীন, চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী পপি, উপস্থাপক ফারজানা ব্রাউনিয়া, সংবাদ উপস্থাপক ফারহানা নিশো, অভিনয়শিল্পী ও মডেল বাঁধন এবং কণ্ঠশিল্পী পুতুল।
শুরু হলো মিষ্টি আচার দিয়ে। সবাই দারুণ মজা করে খেয়ে যাচ্ছিলেন। একটায় পুরো নম্বর দিয়ে বিচারকেরা চিন্তায় পড়ে গেলেন। পরেরটা নাকি আরও মজা। এটাকে কি তাহলে পুরো নম্বরের চেয়েও বেশি দেওয়া হবে! নিশো রহমান আবার কয়েকটি ঘরে তারকা চিহ্ন দিয়ে রাখছিলেন। এগুলো নাকি বাসায় নিয়ে যেতে চান। একটা বয়াম সঙ্গে করে আনা হলো না বলে অনেকেই আফসোস করছিলেন।
মিষ্টি শেষ না হতেই সবার মুখ তেতো। একনাগাড়ে এত রকম আচার খাওয়ার ফল! খিচুড়ি বা সাদা ভাতের অভাবটা তখন টের পাওয়া যাচ্ছিল খুব। সেটা পূরণ হওয়া যখন সম্ভব না, তখন ফারজানা ব্রাউনিয়া প্রস্তাব রাখলেন স্যান্ডউইচ খেয়েই মুখের স্বাদ ফেরানোর। প্রতিটি আচারের চুলচেরা পরখ, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তবেই নম্বর দেওয়া চলছিল।
এরপর টক আচার। এখানে নির্বিঘ্নেই নম্বর দেওয়ার পালা শেষ হলো। ঝাল আচারের শুরুতে বিচারকেরা একটু চিন্তিত। এত ঝাল খাওয়া যাবে তো! প্রাণ গ্রুপ ও প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরাও ভাবছিলেন একই কথা। গতবারের বিচারকদের মতো ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হবে না তো! সে রকম কিছু অবশ্য হলো না। হয় আচারের ঝালই এবার কম, নয়তো বিচারকদের ঝাল খাওয়ার অভ্যাস অনেক বেশি। পরেরটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি মনে হলো। সবশেষে তাহসিনা শাহীন তো বলেই ফেললেন, ঝাল বিভাগের আচারগুলোই নাকি তাঁর সবচেয়ে মজা লেগেছে। অবশ্য ফারহানা নিশো ও ফারজানা ব্রাউনিয়া মত দিলেন অন্যান্য বিভাগের পক্ষে। লায়লা আরজুমান্দ বানু আর রাহিমা সুলতানা অবশ্য স্বাদের সঙ্গে গুণগত মানের দিকেও নজর রাখছিলেন। প্লাস্টিকের বয়ামের চেয়ে কাচের বয়ামে রাখলেই যে আচার বেশি দিন ভালো থাকে, এ তথ্যটাও সবাইকে জানিয়ে দিলেন রাহিমা সুলতানা।
ফলাফল ২০০৯
বর্ষসেরা আচার
গওহর আফজা, আরামবাগ আ/এ, মিরপুর-৭, ঢাকা।
সেরা উপস্থাপনা
মোসাম্মত্ হোসনেয়ারা মিলি
বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা ।
টক বিভাগ
প্রথম: ইভা কবির, বয়রা, খুলনা। দ্বিতীয়: হাসিনা রহমান, সবুজবাগ, ঢাকা। তৃতীয়: জিয়াসমিন হক, ধানমন্ডি, ঢাকা।
মিষ্টি বিভাগ
প্রথম: মেহেরুন নেছা তুলি, দেওয়ানবাজার, চটগ্রাম।
দ্বিতীয়: বেগম মাহমুদা রুবাইয়া, রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট, রাজশাহী। তৃতীয়: নুরজাহান মিরু, পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা।
ঝাল বিভাগ
প্রথম: জেবুন্নেসা বেগম, উত্তর আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
দ্বিতীয়: জোবাইদা আশরাফ, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
তৃতীয়: শামসুন নাহার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
অন্যান্য বিভাগ
প্রথম: যমুনা দাস, চাঁপাপুর, কুমিল্লা।
দ্বিতীয়: রোকসানা আহমেদ, তাজমহল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
তৃতীয়: সাজ্জাদুন নেসা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
সান্ত্বনা পুরস্কার
নওরীন করিম, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
নিলুফা রানু, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল।
রওনক আরা খানম, নতুন বাজার, খুলনা।
লুত্ফুন নাহার, আমির কুটির, বরিশাল।
ফাতেমা চৌধুরী, মগবাজার, ঢাকা।
জিন্নাত রহমান, মগবাজার, ঢাকা।
দিলারা ইয়াসমিন, ধানমন্ডি, ঢাকা।
প্রীতি রায়, ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা।
জেসমিন সুলতানা, বন্দর হাইস্কুল কলোনি, চট্টগ্রাম।
শামীমা আলম, সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।
নাসিমা বানু, খুলশী, চট্টগ্রাম।
নাছিমা আক্তার, ঝিলপাড়া, ঢাকা।
ফরিদা পারভীন, মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
নিশাত সুলতানা, নওয়াপাড়া কলেজ, যশোর।
রওশন আরা, লালকুঠি মাজার রোড, ঢাকা।
তসলিমা খাতুন, বোয়ালিয়াপাড়া, রাজশাহী।
চাঁদ সুলতানা, টঙ্গী, গাজীপুর।
নওরীন করিম, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
শারমিন সুলতানা, চানমিয়া হাউজিং, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
জোবেদা করিম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
হোসনে আরা হুমায়ূন, পূর্ব সুবিদবাজার, সিলেট।
সেলিনা মর্তুজা, টিকাটুলি, ঢাকা।
রাবেয়া আক্তার, শ্যামলী, ঢাকা।
মাজেদা আজিজ, কাফরুল, ঢাকা।
সেতারা আকতার, বাঁশবাড়ী মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
ইয়াসমিন চৌধুরী, মগবাজার, ঢাকা।
লায়লা ইয়াসমিন, মিরপুর, ঢাকা।
ফাহমিদা শারমিন, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
নাসিমা আলম, খিলগাঁও, ঢাকা।
মাকসুদা গাজী, মতিঝিল, ঢাকা।
মোসাম্মত্ ফারহানা খাতুন, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
ফরিদা আক্তার, মিরপুর, ঢাকা।
তসলিমা বেগম, মিরপুর-১৪, ঢাকা।
এলিনা আফরোজ, পূর্ব গোড়ান, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৯
Leave a Reply