হাইলাইটস
- টালিগঞ্জ কুদঘাটের বাসিন্দা নমিতা সরকার।
- হঠাৎ শ্বাসকষ্ট। শরীরের অক্সিজেনের মাত্রাও কমতে থাকে।
- প্রৌঢ়ার জামাইয়ের ফোন গেল বাপন দাসের কাছে।
- কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা গেল মুমূর্ষু নমিতাদেবীকে।
টালিগঞ্জ কুদঘাটের বাসিন্দা নমিতা সরকার। করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই প্রৌঢ়া বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট। শরীরের অক্সিজেনের মাত্রাও কমতে থাকে। স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করেও হাসপাতাল ভর্তি করা যায়নি। প্রৌঢ়ার জামাইয়ের ফোন গেল বাপন দাসের কাছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা গেল মুমূর্ষু নমিতাদেবীকে।
বরাহনগরের বাসিন্দা সহেলি দাসের ঠাকুমা সপ্তাহখানেক আগে করোনা আক্রান্ত হন। অক্সিজেন সাপোর্টে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। সিলিন্ডার খালি হতে শুরু করেছে, হন্যে হয়ে ঘুরেও মিলছে না অক্সিজেন। দিশেহারা পরিবার। এ বারও মুশকিল আসানে সেই বাপন দাস!
করোনা আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এ ভাবেই ছুটে বেড়াচ্ছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কনস্টেবল বাপন। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের একজন। ভিআইপি ডিউটি থেকে ছুটি পেলেই পিপিই কিট পরে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাপন। কখনও হাসপাতালের গেটের সামনে, কখনও বস্তিতে মাস্ক বিলি করে করছেন তিনি, কখনও বা অসমর্থদের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্যানিটাজার থেকে সাবান। করোনা আক্রান্ত কোনও রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে না-পারলে, নিজের সাধ্যমতো চেষ্টাও করছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডারের আকালে রোগীর পরিবারের কাছে ‘দেবদূত’ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বাপন। তাঁর কাছ থেকে উপকার পাওয়া অনেক রোগীর পরিবারই বলছেন, এ যেন চলমান ‘বাইক হাসপাতাল’।
শুরুটা হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসে। করোনার ছোবলে মানুষ মরতে দেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যত দিন না এই অতিমারী থেকে মুক্তি মিলছে, যে কোনও মূল্যেই মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। সেই থেকে শুরু। প্রথমে বাসের কনডাক্টর এবং চালকদের মাস্ক, স্যানিটাইজার দিতেন। তার পর রেল স্টেশন, হাসপাতাল চত্বরে গিয়েও করোনা আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান।
দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে আরও দৃঢ় হয়েছে সঙ্কল্প। ছুটি পেলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। গলায় ঝোলানো প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘নিজে বাচুন, অন্যকে বাঁচান।’ সঙ্গে ফোন নম্বর-সহ ফ্রি-তে করোনা আক্রান্ত পরিবারকে সাহায্যের বার্তাও লেখা রয়েছে সেখানে।
রক্তের আকালেও অভিনব পন্থা নিয়েছেন বাপন। রক্তদান শিবির থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় যখনই কারও সঙ্গে পরিচয় হয়, তাঁর ফোন নম্বর সঙ্গে রক্তের গ্রুপ লিখে সেভ করেন। পরে কারও রক্তের প্রয়োজন হয়, ওই সেভ করা নম্বর সার্চ করে দেখে নেন ওই গ্রুপের রক্ত কাদের রয়েছে। পরে প্রয়োজন হলে সাহায্যের আর্জি নিয়ে আবেদনও জানান।
ভিআইপি ডিউটি সেরে এত কিছু করার সময় পান বাপন? তাঁর কথায়, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। টাকারও অভাব পড়ে না। ছুটি পেলেই হাসপাতালে পৌঁছে যাই। যাঁরা মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান কিনতে পারেন না, তাঁদের হাতে তুলে দিই বিনা পয়সায়। এই লড়াইয়ে অনেককে সঙ্গে পেয়েছি। কোনও খবর পেলে, সেখানকার সাহায্যকারীদেরও জানিয়ে দিই। তাঁরাও খুশি মনে রোগীর পরিবারকে সাহায্য করেন।’
উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে বিধাননগরের বাড়ি বাপনের। ২০০০ সালে কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেন। এক সময়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দেহরক্ষী ছিলেন। ২০১৪ তিনি সৌগত রায়ের নিরাপত্তার দায়িত্বেই রয়েছেন।
দু’তিন দিনের ছুটি পেলে উত্তরবঙ্গেও চলে যান তিনি। কখনও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, ডুয়ার্সের মালবাজার হাসপাতাল দার্জিলিঙ, নকশালবাড়ি ব্লক, ইসলামপুর, চোপড়াতে ব্লক হাসপাতালে গিয়েও একই ভাবে রোগীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমনকী ইসলামপুরে যমরাজ সেজেও করোনা নিয়ে সচেতনতার পাঠ শিখিয়েছেন কলকাতা পুলিশের এই কনস্টেবল!
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-05-07 08:23:49
Source link
Leave a Reply