ঘরের আলোকসজ্জ্বার প্রাথমিক প্রয়োজন অন্ধকার দূর করা। এই প্রয়োজনটা মাথায় রেখে এতোকাল বাড়িতে আলো জ্বালানো হতো। গ্রাম বাংলায় এখনো সন্ধ্যা নামলেই কুপি কিংবা হারিকেন জ্বালানো হয়। কিন্তু আধুনিক ইন্টেরিয়র এই আলোক সজ্জ্বার ধারণাতে পরিবর্তন এনেছে। এখন আলো শুধু অন্ধকার দুর করার জন্যই নয়, পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্যকে প্রস্ফুটিত করতেই বেশী ব্যস্ত। আর তাই ইন্টেরিয়রে এখন প্রচলন নানান ধরনের ল্যাম্প শেডের ব্যবহার।
আলোর অবাধ বিস্তরণ রোধে মূলত ল্যাম্প শেড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাপড়, কাগজ, পাস্টিক, রঙিন কাঁচ অনেককিছু দিয়েই এই ল্যাম্পশেড নির্মাণ হতে পারে। কিন্তু এর ব্যবহার বুঝতে হবে জায়গা বুঝে। আর তাহলেই আলো আধারি দোল খাবে আপনার ঘরের দেয়ার জুড়ে। ল্যাম্পশেড ব্যবহার করতে প্রতিটি ঘর আলাদা করে ভাগ করে নেয়া ভালো। পাশাপাশি ঘরের ফার্নিচার টাইপ আর লাইট সোর্সও গুরুত্বপূর্ণ। বসার ঘরের আসবাব যদি একটু এ্যাথনিক স্টাইলের হয় তাহলে বড় পাথরের কিংবা চীনামাটির তৈরি ল্যাম্পশেড ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে রাখতে পারেন গর্জিয়াস ক্লথিং-এর কোনো শেড। ঘরে বেতের আসবাব থাকলে চেষ্টা করুন বেতের তৈরি ল্যাম্পশেড ব্যবহার করতে। সাথে দিন খাদি এক রঙা কাপড়ের তৈরি শেড। আর যদি জিওম্যাট্রিক স্টাইলের আধুনিক ফার্নিচারে সাজানো হয় আপনার বসার ঘর, তাহলে ল্যাম্পশেডেও থাকা উচিৎ তার ছোঁয়া। এক্ষেত্রে প্লাস্টিক কিংবা চাচের তৈরি ল্যাম্পশেড ব্যবহার করতে পারেন। অথবা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি আর্চ টাইপের ল্যাম্পশেডও দারুণ মানাবে। এধরের ল্যাম্পে সাদা, কালো কিংবা লাল এমন সলিড রঙের শেড ব্যবহার করুন। বসার ঘরের প্রবেশের আগে ফয়ার অংশেও রাখতে পারেন ল্যাম্প শেড। ফয়ারে লম্বা হাতে তৈরি কাগজে মোড়ানো ল্যাম্প শেড রাখতে পারেন। যদি ফয়ারে স্পট লাইট করা থাকে তাহলে ল্যাম্পশেড রাখুন দেয়াল ঘেষে।
খাবার ঘরে ল্যাম্পশেড রাখতে একই রকম ল্যাম্পশেড দুই দিকে মিলিয়ে রাখুন, দেখতে ভাল লাগবে। রট আয়রনের ডাইনিং-এ রটের স্ট্যান্ড সহ ল্যাম্পশেড ব্যবহার করতে পারেন। শোবার ঘরে ল্যাম্পশেড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শোবার ঘরে আলো সরাসরি চোখে পড়লে তা অস্বস্তিকর হয়ে উঠে। আর তাই শোবার ঘরের জন্য পুরোটা ঢেকে থাকবে এমন কোনো ল্যাম্পশেড ব্যবহার করুন। এক্ষেত্র ঘরে যদি আলাদা কোনো বসার জায়গা থাকে তাহলে বসার জায়গাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্টাইলের ল্যাম্পশেড ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের ফার্নিচারের উচ্চতা কম থাকলে অপেক্ষাকৃত নিচু স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন। আর শেডের কাপড় বা কাগজ মিলিয়ে রাখুন পর্দার রঙের সাথে। একই স্ট্যান্ডে ২-৩ রকম শেড ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘরের আকৃতিগত পরিবর্তন আসবে। বেড সাইডে এমন কোনো ল্যাম্পশেড রাখুন যেটা ঘরের সৌন্দর্যের পাশাপাশি আপনার প্রয়োজনও মেটাবে।
স্ট্যান্ড ছাড়াও এখন দেয়াল থেকে ঝুলন্ত ল্যাম্পশেডের প্রচলন দেখা যায়। কাগজ কিংবা কাপড়ে তৈরি এসব শেড একদিকে যেমন দেখতে নান্দনিক তেমনি অপরদিক থেকে দামেও সস্তা। মনে রাখবেন ছোট ঘরে ল্যাম্পশেড ঘরের কোণায় কোণায় রাখা থাকলে ঘর আকৃতিতে বড় দেখাবে।
ল্যাম্প শেড কিনতে
শহরের অধিকাংশ ফ্যাশন হাউসগুলোই এখন ল্যাম্পশেড তৈরি করে থাকে। এছাড়া আজিজ সুপার মার্কেট, যাত্রা, আড়ং এসব জায়গাতে অসংখ্য ল্যাম্পশেড মিলবে। ল্যাম্পস্ট্যান্ড কিনে নিয়ে নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন রকমারি ল্যাম্পশেড। এর বাইরে কাগজের তৈরি নানান রকম ল্যাম্পশেড কিনতে পারবেন নন্দনকুটির, রঙ, বিবিয়ানার বিভিন্ন শোরুমগুলোতে। নান্দিনিক কিছু ল্যাম্পশেড মিলবে অরোরার ধানমন্ডি আর বনানী শো রুমে। এছাড়া পাথরের তৈরি খুব দামি ল্যাম্পশেড পাবেন বসুন্ধরা সিটির ইরানী ইম্পোরিয়ামে, গুলশান ১ আর ২ নম্বর মার্কেটে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, অক্টোবর ২০, ২০০৯
Leave a Reply