টানা চারদিন ধরে জ্বরে ভুগছে আনিকা। অথচ সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা পর্যন্ত একদিন ফোন করে জানতে চাইলো না কেমন আছে সে? অথচ বন্ধুদের কেউ অসুস্থ হলে সবার আগে তার খোঁজ নিতে ছুটে যায় অনিকাই। কাজেই এ অবস্থায় বন্ধুদের প্রতি যদি আনিকার একটু অভিমান হয়েই যায় তাহলে তাকে কি দোষ দেয়া যায়? অথচ মুদ্রার অন্যপিঠে ঘটনাটা কিন্তু তখন একেবারেই ভিন্নতর। কাছের বন্ধু তো দূরে থাক, আনিকার বন্ধুমহলের কারোই আসলে বিন্দু-বিসর্গ জানা নেই আনিকা সম্পর্কে। কাজেই আদৌ আনিকার জ্বর হয়েছে নাকি সে কোথাও বেড়াতে গিয়েছে সেটা জানাই ছিল না বন্ধুদের। আর এ কারণেই অহেতুক এ ভুল বোঝাবুঝি।
আসলে শুধু বন্ধুদের মাঝেই নয়, বরং সম্পর্কের নানা পর্যায়েই ভুল বোঝাবুঝির জন্ম হতে পারে। আর এই ভুল বোঝাবুঝির কারণেই অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হয় সম্পর্কের বলয়ে থাকা মানুষগুলোর মাঝে। বিশেষ করে দাম্পত্য সম্পর্ক কিংবা মা-বাবার সাথে সন্তানের ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেক সময়ই বড় ধরনের মাশুল গুনতে হয় আমাদের। অথচ যে সময়ের ঘটনা সে সময়ই সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা থেকে দূরে সরে যদি ঠান্ডা মাথায় সবকিছু বিচার বিবেচনা করা যায় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রেহাই পাওয়া যায় ভুল বোঝাবুঝির হাত থেকে।
সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের অভিমানী মন কিংবা অহেতুক প্রত্যাশা থেকেই জন্ম হয় ভুল বোঝাবুঝির। এছাড়া কোনো ঘটনার পরম্পরা না জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া, হুট করে মেজাজ হারিয়ে ফেলার প্রবণতা, সন্দেহ কিংবা অতিমাত্রার আত্মকেন্দ্রিকতা থেকেও জন্ম হতে পারে ভুল বোঝাবুঝির। এসব ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি যত শীঘ্র দূর করা যায় ততই মঙ্গল। আর এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে দু’ পক্ষকেই।
ভুল বোঝাবুঝি দূর করার প্রথম শর্তই হলো যে কারণে ভুল বোঝাবুঝি সেটি সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করা। হয়তো প্রিয় মানুষটি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি কিংবা আপনার অগোচরেই ঘটিয়ে ফেলেছে ভয়ংকর কোনো ঘটনা। এক্ষেত্রে নিজের মনের মধ্যে অভিমান পুষে না রেখে কিংবা অহেতুক তার সম্পর্কে কোনো বাজে ধারণা পোষণ না করে সরাসরি তার মুখোমুখি হন। যে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির জন্ম সেটি সম্পর্কে প্রিয় জনের ব্যাখ্যাটাও জেনে নিন।
ভুল বোঝাবুঝির কারণ যদি হয় বাড়তি প্রত্যাশা তাহলে নিজেকেই প্রথমে দাঁড় করান বিশ্লেষণের কাঠগড়ায়। লক্ষ্য করে দেখুন, আপনি আপনার সম্পর্কের বলয়ে থাকা মানুষগুলোর কাছে যা প্রত্যাশা করেন সেটি কতটা বাস্তবিক। এক্ষেত্রে যদি মনে হয় যে, আপনার সামান্য চাহিদা কিংবা প্রত্যাশাগুলোও কাছের মানুষেরা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাহলে এ নিয়ে নিজের মনের মাঝে রাগ পুষে না রেখে তাদের সাথে কথা বলুন। অহেতুক অন্যের উপর দোষ না চাপিয়ে কি কারণে সম্পর্কের মাঝে এই শীতলতার সৃষ্টি হচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখুন। সঙ্গী-সঙ্গিনী কিংবা বাবা-মায়ের সাথে কেন দূরত্ব তৈরি হচ্ছে সেটিও বুঝতে চেষ্টা করুন। সর্বোপরি কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হবার আগে যাকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা সম্পর্কেও একটিবারের জন্য ভাবুন। আর এভাবে নিজের প্রত্যাশার সাথে অন্যের বাস্তব অবস্থা বুঝতে পারার সক্ষমতাই আপনাকে দূরে রাখবে অহেতুক ভুল বোঝাবুঝি থেকে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, অক্টোবর ২০, ২০০৯
Leave a Reply