একই ঘটনা ঘটেছিল উত্তরপ্রদেশের প্রখ্যাত বাইজি উমরাও জান এবং উর্দু সাহিত্যিক মির্জা হাদি হুসওয়ারের ক্ষেত্রেও। বাইজি নিজের জীবনের কথা সাহিত্যিককে বলেছিলেন মাত্র। তাঁর মনে প্রেম কখনওই ছিল না। তিনি ছিলেন পেশাদার প্রেমিকা। কিন্তু বাইজির প্রতি সাহিত্যিকের প্রেম ছিল একতরফা। তাই বাস্তব আর কল্পনা মিলিয়েই টউমরাও জান আদা’ সৃষ্টি হয়েছিল উপন্যাসের। যার অবলম্বনে প্রথমে রেখা এবং পরে ঐশ্বর্য় রাই অভিনীত ছবি বলিউডের বক্সঅফিস মাত করে।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থেও একতরফা প্রেমের উদাহরণ ভূরি ভূরি। শিবের প্রতি পার্বতীর কিংবা কৃষ্ণের প্রতি রাধার প্রেম ছিল একতরফা। তা ছিল ভক্ত এবং ভগবানের ভালোবাসা। শিব ছিলেন সতীর প্রেমিক এবং স্বামী। সতী ছাড়া অন্য কারও কথা কল্পনাও করতেন না তিনি। এককথায় শিব ছিলেন মনোগামি। কিন্তু যখন তিনি জানতে পারেন যে তাঁর প্রিয় সতীই যুগে সুগে বিভিন্ন অবতারে তাঁর কাছে ধরা দেবেন এবং পার্বতীই সেই সতীর এক রূপ তখন তিনি পার্বতীকে গ্রহণ করেন। অন্যদিকে কৃষ্ণ ছিলেন পলিগামী। অনেক প্রেমিকার সঙ্গে অভিসারেই অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু রাধা কৃষ্ণকে ভালোবাসতেন একতরফা। একই কথা খাটে মীরার ক্ষেত্রেও।
এতসব কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য। আপনি কি একতরফা প্রেম করছেন? আর সেটা আদৌ বুঝতে পারছেন কি?
রাধা, মীরা, মজনু, মহাদেবের প্রেমকাহিনি বইয়ের পাতায় পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু ঘটনা যদি আপনার জীবনেও ঘটে থাকে তাহলে কিন্তু সাবধান। জীবনটা নাটক-নভেল নয়। একতরফা কাউকে ভালোবেসে আখেরে কষ্ট ছাড়া কিছু মেলে না।
কী করে বুঝবেন যে আপনার প্রেম একতরফা্?
খেয়াল করে দেখুন তো আপনি সঙ্গীর সঙ্গে কমিটমেন্টে আগ্রহী হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান কিনা।
সাজগোজ হোক, ডিনার ডেট, সেক্স কিংবা বেড়াতে যাওয়া সব ক্ষেত্রেই সঙ্গীকে জোর করে রাজি করাতে হয় কি?
ভবিষ্যতের কথা আলোচনা করলেই সঙ্গী এড়িয়ে যান?
আপনিই নিয়মিত ফোন করে তাঁর খোঁজ খবর নেন, কিন্তু তিনি প্রয়োজন ছাড়া আপনাকে ফোন করেন না বা খোঁজ খবর নেন না।
আপনি আপনার সম্পর্কে সমস্ত কথা শেয়ার করলেও তিনি আপনাকে নিজের সম্পর্কে কিছু বলেন না। এবং দিনের শেষে দেখা যায় তিনি আপনার কাছে এমন একজন অচেনা ব্যক্তি, যার সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। আপনি যেচে পড়ে হয়তো তাঁকে সাহায্য করেন কিন্তু তিনি আপনাকে কখনও না চাইতে সাহায্য করেন না। তাহলে ঠান্ডা মাথায় একবার ভেবে দেখুন যে আপনি একতরফা প্রেম করে চলেছেন না তো?
সমস্যারই সমাধানের চেষ্টা
তবে প্রথমেই মাথা গরম না করে বা কষ্ট না পেয়ে একবার ভেবে দেখুন তো সঙ্গী কি প্রথম দিন থেকেই এমন ছিলেন নাকি সম্প্রতি এমন হয়েছেন। যদি এটি সাময়িক সমস্যা হয় তাহলে তার খোঁজ নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন।
এও হতে পারে আপনার সঙ্গে আপনার সঙ্গীর মানসিক মিল হচ্ছে না। সম্পর্ক টেকাতে গেলে এর প্রয়োজন কিন্তু সবচেয়ে বেশি।
প্রাক্তন সম্পর্কের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে আপনাকে একটু দূরে সরিয়ে রাখতে চান।
আপনাদের দুজনের চাহিদা সম্পূর্ণ আলাদা।
তবে তিনি যদি প্রথম থেকেই আপনাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড বলে ধরে নেন তাহলে তাঁকেও পাত্তা কম দেওয়ার প্র্যাকটিস শুরু করা উচিত। সাফ কথা, যে পাত্তা দেয় না তাঁকেও পাত্তা দিও না।
কারণ আপনার একতরফা প্রেমিক মন মানতে না চাইলেও বাস্তবে কিন্তু একতরফা প্রেম কখনোই টিকে থাকতে পারেন না। তাও সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলে দু-একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। কিছুদিন সঙ্গীর সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ কিংবা ফোনালাপ বন্ধ করে দিয়ে দেখুন সঙ্গীর সঙ্গে তিনি আপনার সঙ্গে আগবাড়িয়ে যোগাযোগ করছেন কিনা।
নিজেকে অযথা অন্যের হাতের পুতুল না বানিয়ে ব্যক্তিত্ব নিয়ে বাঁচুন। একতরফা প্রেমকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিন। সঠিক সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করুন। দেখবেন সেই অপেক্ষার অভিজ্ঞতাও অনেক সুমুধুর হবে।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-29 17:45:10
Source link
Leave a Reply