মন মানুষের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। মানুষের ভেতরে যেসব মানসিক প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তার কোনোটি ইতিবাচক কোনোটি নেতিবাচক। অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে মানুষের মনে একধরনের মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়; এ কারণে মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। সঠিক সময় কী করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। এ সময় বিশ্বাসের অভাবে কাউকে সেসব সমস্যার কথা বলাও যায় না। আবার যদি কারও কাছে বিষয়গুলো খুলে বলতে পারে, পরামর্শ নিতে পারে; তাহলে অনেকাংশে চাপমুক্ত থাকা যায়। এমন পরিস্থিতে কোথায় পাবেন বিশ্বস্ত ও বাস্তবভিত্তিক সমাধান। এমন কঠিন সময়ে একজন মনোবিজ্ঞানীই হতে পারেন উপযুক্ত পরামর্শক ও সাহায্যকারী।
কাউন্সেলিং কী এবং কেন
বিশিষ্ট মনশ্চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক ডা· মোহিত কামাল এ বিষয়ে বলেন, ‘অনেকের ধারণা কাউন্সেলিং অর্থ পরামর্শ দেওয়া এবং একজনের নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কাউন্সেলিং হলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি ও মনশ্চিকিৎসকের মধ্যে একধরনের সম্পর্ক, যার ফলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি বিভিন্ন সমস্যার কথা চিকিৎসকে বলে। ব্যক্তি বিভিন্ন সময় আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এ অবস্থায় আবেগ থেকে মুক্ত ও আবেগের কষ্টের দিক লাঘব হয় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কথা বলার নতুন পথ তৈরি হয়। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি নতুনভাবে তার মূল্যায়ন করতে শেখে। সমস্যা সমাধানের উপায় নিজের মধ্যে খুঁজে পায়, প্রশিক্ষিত একজন কাউন্সেলর বা পরামর্শকের মাধ্যমে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান সম্ভব। পরামর্শকের সঙ্গে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি মন খুলে কথা বলার সুযোগ পায় বিধায় তার সমস্যা সমাধানের পথ অনেকটা প্রসারিত হয়। যখন একজন মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে তখন তার মধ্যে আবেগীয় পরিবর্তন আসে। এতে প্রভাবিত হয়ে সে মাদক নেওয়া, বিকৃত আচরণ করে এমনকি আত্মহত্যাও করতে পারে। তাই প্রত্যেকের উচিত যেকোনো মানসিক সমস্যায় পড়লে একজন দক্ষ পরামর্শকের শরণাপন্ন হওয়া।’
কোথায় যাওয়া যায়
–জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটঃ এটি ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত। এতে ১৫০টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ সরকারি। এ হাসপাতালের সাইকোথেরাপি বিভাগ থেকে যেকোনো বয়সের মানুষ মানসিক চিকিৎসা নিতে পারে।
–বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ এ হাসপাতালের মানসিক বিভাগ সপ্তাহে ছুটির দিন বাদে সকাল আটটা থেকে বেলা দুটা পর্যন্ত খোলা থাকে। বহির্বিভাগ থেকে পাঠানো মানসিক রোগীদের জন্য এখানে রয়েছে দক্ষ মনশ্চিকিৎসক।
–ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগে প্রতি সোমবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
–বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর ট্রমা ভিকটিম (বিআরসিটি)ঃ সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা দুটা পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঠিকানাঃ ২৪ বিজয়নগর, ঢাকা।
–আইসিডিডিআরবিঃ মহাখালীতে অবস্থিত এই হাসপাতালটির ‘জাগরী’তে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা।
–ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান কেন্দ্র (টিএসসি)ঃ সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে বিনামূলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
–ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালঃ সপ্তাহের মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এখানে সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মানসিক সমস্যার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঠিকানাঃ ১৯০/১ বড় মগবাজার, ওয়্যারলেস, রেলগেট, ঢাকা।
–প্রবীণ হিতৈষী হাসপাতালঃ এখানে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটির অবস্থান আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পাশে।
–মেরিস্টোপ হাসপাতালঃ এর বেশ কয়েকটি শাখা । ঢাকা-১ ক্লিনিক, এলিফ্যান্ট রোড; ঢাকা-২ ক্লিনিক, ৪৭/২ শহীদ তাজউদ্দীন সরণি, অলক টাওয়ার; ঢাকা-৩ ক্লিনিক, টঙ্গি। এসব ক্লিনিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
–ক্রিয়াঃ এখানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য সাইকোথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। ঠিকানাঃ ১/১৪ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
মানসিক সমস্যা মনের মধ্যে পুষে রাখতে নেই। এতে মানসিক চাপ আরও বৃদ্ধি পায়। একজন দক্ষ মনশ্চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে মানসিক চাপমুক্ত থাকা যায়।
মোছাব্বের রিবন
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২১, ২০০৮
Leave a Reply