নাক বা গলার প্রদাহের কারণে উল্লেখিত জীবাণুগুলো ইউষ্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে মধ্যকর্ণের সমস্ত কাঠামোতে ছড়িয়ে পড়ে। বস্তুতপক্ষে কেমন করে মধ্যকর্ণে প্রদাহ হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
ঠান্ডাজ্বর, নাক বা সাইনাসের প্রদাহ কিংবা শ্বাসনালীর উপরের যে কোনো অংশের প্রদাহে শ্রুতিনালী বা ইউষ্টেশিয়ান টিউব আক্রান্ত করে এবং স্বভাবত তার প্রদাহ হয়, এর ফলে খুব দ্রুত নাকের পেছনের অংশে অবস্হিত টিউবের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। মধ্যকর্ণে যে বাতাস থাকে তা মধ্যকর্ণের প্রদাহকবলিত কোষসমুহ শোষণ করে ফলে মধ্যকর্ণের বাতাসের চাপের সঙ্গে বাইরের চাপের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। তখন আস্তে আস্তে মধ্যকর্ণের মধ্যে এক প্রকার তরল পদার্থ জমা হতে থাকে। তরল পদার্থ কানের মধ্যে একবার জমলে সেটি আর বের হতে পারে না এবং পরবর্তী সময়ে ইউষ্টেশিয়ান টিউবের কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে একটি চক্রের সৃষ্টি হয় এবং এই চক্র চলার কারণে আরো পানি জমতে থাকে। জীবাণুর খাদ্য হিসেবে এ পদার্থ অত্যন্ত ভালো যার ফলে তারা দ্রুত এখানে বংশ বিস্তার করে এবং ধীরে ধীরে তরল পদার্থকে পুঁজে পরিণত করে। প্রথমে পুঁজ মধ্যকর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কাঠামোগত দিক থেকে মধ্যকর্ণের সবচেয়ে নরম দেয়াল হচ্ছে কানের পর্দা। সুতরাং এই পুঁজ কানের পর্দায় চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এভাবে পুঁজ জমতে জমতে এবং চাপ দিতে দিতে এক সময় কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে পুঁজ মধ্যকর্ণের বাইরে চলে আসে। এমনি পরিস্হিতিতে মধ্যকর্ণের সঙ্গে কানের পেছনে অস্হির সরু সংযোগনালীর মধ্য দিয়ে পুঁজ অস্হির পেছনের মাষ্টয়েড নামক অস্হিকে আক্রান্ত করে, ফলে তার মধ্যের সুক্ষ্ম কোষ ও দেয়াল ভেঙে পুঁজ বাইরে চলে আসে। অনেক সময় বাহির থেকে চামড়ার নিচে পুঁজের উপস্হিতি বোঝা যায়। এভাবে অস্হি ক্ষয় করে ব্রেইনের মধ্যেও এই পুঁজ চলে যেতে পারে। তখন ব্রেইনের বিভিন্ন অংশকে আক্রান্ত করে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করে। শিশুদের কানের পর্দা বেশ শক্ত থাকে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় এই পুঁজ কানের পর্দাকে ছিদ্র না করে অস্হির ক্ষতি সাধন করে। সুতরাং ছোট্টমণিদের ব্যাপারে একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
সূত্রঃ দৈনিক আমারদেশ, ২৪ ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ অধ্যাপক (ডা.) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
Leave a Reply