টনসিল কীঃ আমাদের গলার ভেতর দুই দিকে দুটি মাংসপিণ্ডের মতো গ্রন্থি আছে, যাকে বলে টনসিল। একে লিমফোয়েড টিসু বা লসিকাগ্রন্থি বলে।
কাজঃ আমাদের শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি বা টিসু রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। টনসিলও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। শরীরে কোনো জীবাণু প্রবেশ করলে প্রথমে টনসিলেই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা থাকে শিশুদের চার থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত। পরে এ ক্ষমতা কমে যায়। তখন শরীরের অন্যান্য গ্রন্থি রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। তাই টনসিল অপারেশন করে ফেলে দিলে পরে শরীরের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতার কোনো তারতম্য হয় না।
টনসিলে কী হয়ঃ বিভিন্ন জীবাণুতে হঠাৎ টনসিলের ইনফেকশন বা সংক্রমণ হতে পারে। যেমন গ্রুপ এ বিটা-হেমোলইটিক স্ট্রেপটো কক্কাস, স্টাফাইলো কক্কাস অরিয়াস, গ্রামনেগেটিভ অরগানিজম, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি ইত্যাদি। বারবার সংক্রমণের ফলে এবং অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণে মুখে ও জিভে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে জিভ সাদা হয়ে যায়। বারবার টনসিলের সংক্রমণ হতে পারে। টনসিল বড় হলে শ্বাসনালি বন্ধ হতে পারে, এমনকি টনসিলের ক্যান্সারও হতে পারে।
টনসিলের সংক্রমণ হলে তা ফুলে যায়, শ্বাস নিতে ও খেতে কষ্ট হয়। অনেকের টনসিল আকারে বড় থাকে। আবার টনসিলের সংক্রমণের কারণে রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর এবং রিউমেটিক হার্ট ডিজিস হয়ে থাকে।
টনসিলের সংক্রমণের চিকিৎসায় করে তা সেরে গেলেও আবার হতে পারে। বারবার ইনফেকশন হওয়াকে বলে ক্রোনিক টনসিলাইটিস।
চিকিৎসা করার পরও যদি টনসিলে সংক্রমণ ভালো না হয়, তখন প্রশ্ন আসে, টনসিল রাখা ঠিক হবে কি না। অপারেশন করে টনসিল ফেলে দেওয়াটাকে বলে টনসিলেকটমি।
কী কী কারণে টনসিলেকটমি করা হয়ঃ চার থেকে আট বছরের শিশুরা বারবার টনসিলের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে এবং চিকিৎসার পর যদি ভালো হয় তাহলে সে অবস্থায়ই সে বেড়ে উঠুক, টনসিলেকটমি করার প্রয়োজন নেই।
— যদি শিশুরা বছরে বারবার আক্রান্ত হয় এবং শীতকালে আক্রান্ত হয় তাহলে টনসিলেকটমি করাতে হবে।
— টনসিলের ইনফেকশনের কারণে যদি কয়েক সপ্তাহ পড়াশোনায় ক্ষতি হয় প্রতিবছর, তাহলে টনসিলেকটমি করাতে হবে।
চার বছরের নিচে শিশুদের যদি বারবার টনসিলের ইনফেকশন হয় এবং বছরে দুই থেকে তিনবার মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়, তাহলে টনসিলেকটমি করাতে হবে।
— আট বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের খুব সহজে টনসিলের ইনফেকশন সেরে যেতে চায় না। ফলে বছরে দুই থেকে তিনবার আক্রান্ত হলে টনসিলেকটমি করানো উচিত।
— কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যখন বড় দুটি টনসিলের জন্য খেতে অসুবিধা হচ্ছে অথবা শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, এমনকি ঘুমের মধ্যে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শরীরে বেশি হওয়ায় পালমোনারি হাইপার টেনশন বা ফুসফুসে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায়।
টনসিলেকটমির ভালো দিকঃ — শিশুদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, ঘন ঘন অসুস্থ হবে না এবং আগের চেয়ে প্রফুল্ল থাকবে।
— ক্ষুধামান্দ্য দূর হবে এবং হঠাৎ করে খাওয়ায় রুচি বৃদ্ধি পাবে।
সুতরাং চিন্তাভাবনা না করে সোনামণির সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টনসিলের সুচিকিৎসা করাবেন। চিকিৎসা ব্যর্থ হলে অবশ্যই টনসিলেকটমি করতে দ্বিধা করবেন না।
ডা· মো· মুজিবুর রহমান মামুন
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র কনসালটেন্ট
নিবেদিতা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৪, ২০০৮
Leave a Reply