এ বছর অ্যানেসথেসিয়ার জন্মদিনে স্মরণ করতে হয় ডেন্টাল সার্জন থমাস জি মর্টনের নাম, যিনি ১৮৪৬ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথম অ্যানেসথেসিয়ার সফল প্রয়োগ করেন। গত ১৬২ বছরে অ্যানেসথেসিয়ার পরিবর্তন, পরিবর্ধন চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব বিভাগ ছাড়িয়ে গেছে। অ্যানেসথেসিয়া-সংক্রান্ত ভয়ভীতি এখন অমূলক বলে প্রমাণিত।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়া ও মানবাধিকার। নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়া বলতে সাধারণভাবে বোঝায় অ্যানেসথেসিয়ার প্রক্রিয়া হবে ঝুঁকিবিহীন। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার আগের শারীরিক অবস্থা এবং অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পরের অবস্থার মধ্যে কোনো তারতম্য হবে না। অ্যানেসথেসিয়ার নিরাপত্তা সম্পর্কে সাধারণের মনে সর্বদাই অনেক প্রশ্ন থাকে। কারণ, আমাদের দেশে অ্যানেসথেসিয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু বা শারীরিক ক্ষতি সম্পর্কিত ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। তাই নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়া পাওয়া এখন এক অধিকার।
অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। অ্যানেসথেসিয়া দিলে শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব কিছুর দায়িত্ব পুরোপুরি অ্যানেসথেসিওলজিস্টের হাতে থাকে। সঠিকভাবে এসব দায়িত্ব পালন করতে না পারলে অ্যানেসথেসিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। রোগীর রক্ষণাবেক্ষণ ও অবস্থা নিরূপণের জন্য এখন অনেক যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়। যেমন পালস অক্সিমিটার, আঙ্গুলের মাথায় এক সেন্সর লাগিয়ে রক্তের অক্সিজেনের পরিমাণ এবং পালস রেট খুব সহজেই নির্ণয় করা যায়। রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকলেই এই যন্ত্র সংকেত দেবে এবং সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। এই যন্ত্র ব্যতীত অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা উচিত নয়। বলা বাহুল্য, উন্নত বিশ্বে এর প্রয়োগ বাধ্যতামূলক। আরেক যন্ত্রের নাম ক্যাপনোগ্রাফ। এই যন্ত্রের সাহায্যে রোগীর প্রশ্বাসের কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগের সময় শ্বাসনালিতে নল ঢোকানো (ইটিটি) হয়। এই নলের সাহায্যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়। শ্বাসনালির নল ভুলে খাদ্যনালিতে গেলে এবং তা নিরূপণে ব্যর্থ হলে কয়েক মিনিটেই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হতে পারে। কিন্তু এই যন্ত্র নল ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে নির্ণয় করতে পারে নলটি শ্বাসনালিতে না খাদ্যনালিতে। বিভিন্ন ধরনের মনিটর, যেমন পালস অক্সিমিটার, এনআইবিপি, ক্যাপনোগ্রাফ, ইসিজি-এগুলোর প্রয়োগে উন্নত বিশ্বে অ্যানেসথেসিয়ার কারণে মৃত্যু লাখে মাত্র একটা।
শুধু যন্ত্রপাতির আধুনিকতাই অবস্থা পরিবর্তনের প্রধান মাপকাঠি নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল। বাংলাদেশের মতো ১৫ কোটি লোকের দেশে মাত্র এক হাজার প্রশিক্ষিত অ্যানেসথেসিয়াবিদ নেহাত সমুদ্রে এক ফোঁটা জলের মতো। তাই বিভিন্ন পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই অ্যানেসথেসিয়ায় প্রশিক্ষিত নয় এমন ব্যক্তিরাও অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করছে।
নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়া পাওয়ার অধিকার সবার। চিকিৎসা নেওয়ার সময় অ্যানেসথেসিয়া-বিভ্রাটে রোগীর মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। এবার বিশ্ব অ্যানেসথেসিয়া দিবসে সবার জন্য নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়ার সুযোগ তৈরি হোক, এটাই প্রত্যাশা।
নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়া সবার অধিকার
প্রফেসর ডা· খলিলুর রহমান
পরামর্শদাতা, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৪, ২০০৮
Leave a Reply