কিন্তু একথা পিউকে বললে চলবে না। বললেই অশান্তি। কাজ পারফেক্ট হয়েছে শুনলে পিউ ভীষণ চটে যায়। মুখ গোমড়া করে বসে থাকে। সারাদিন বেশি কথা বলে না।মেসেজ করে না। তাই প্রশংসা করা চলবে না। জিভের জলকে কোনোরকমে বাধ মানাতে মানাতে ঋষভ বলল, “ভালোই হয়েছে রাইসটা একটু বেশিই ঝরঝরে হয়ে গেছে। তিহারির রাইস আরেকটু গলে যায়।”
পিউয়ের মুখে চওড়া হাসি। “ঠিকই মনে হয় বলেছো। আমারও সেটাই মনে হচ্ছিল। পরের বার আরও পারফেক্ট করতে হবে।”
পিউকে খুশি দেখে ঋষভও স্বস্তি পেল। মনে মনে নিজেও খুব খুশি হল।
আরেক দিনের ঘটনা। ঋষভের জন্য দারুণ একটা শার্ট কিনে এনেছে পিউ। রং, সাইজ, কোয়ালিটি একদম পারফেক্ট। পিউয়ের পছন্দ সবসময়ই তারিফযোগ্য। মেয়েটার মধ্যে যেন কোনও ঘাটতিই নেই। ঋষভ সবসময় ওর কাজে মুগ্ধ। মানুষ হিসেবেও পিউ পারফেক্ট। সবাইকে ভালোবসতে, যত্নআত্তি করতে ওর জুরি মেলা ভার। হবু শ্বশুরবাড়ি হোক কিংবা প্রেমিকের বন্ধুবান্ধব কিংবা নিজের আত্মীয়-বন্ধু, সকলেই পিউয়ের কাজে মুগ্ধ। কিন্তু ওর সমস্যা একটাই। পিউ কিছুতেই নিজের কাজে মুগ্ধ হয় না। সবসময়ই নিজের কাজে খুঁত খোঁজে। কোনও খুঁত ধরা পড়লে অপরাধবোধে ভোগ। আবার কেউ যদি খুঁত না ধরে তাহলে ভীষণ রেগে যায়। বেশিরভাগ রাগটাই গিয়ে পড়ে ঋষভের উপর। সে তখন কোনোমতে প্রেমিকার নিন্দা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ যেন এক অদ্ভুদ রোগ।
পিউকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ঋষভ কল্পনাও করতে পারে না। কিন্তু এভাবে কোনও পারফেক্ট মানুষের খুঁত ধরে বেড়ানোটা তো এক ধরনের শাস্তি। টুকটাক কাজ বা রান্নাবান্নার খুঁত ধরা তাও যায়। কিন্তু সেক্সের পর খুঁত ধরা এবং তা নিয়ে আলোচনা করা কীভাবে সম্ভব?
অথচ পিউ সেটাই চায়। পারফেক্ট সেক্সের পরও ঋষভের কাছ থেকে সমালোচনা শুনতে চায় সে। আজকে উত্তেজনা কম ছিল, কালকে কম সময় ধরে আদর হয়েছে, পরশু চরমসুখের সন্ধান মেলেনি এসব নানা অবাঞ্ছিত কথা বলে পিউকে খুশি করতে হয়। যা এক কথায় বিরক্তিকর।
এভাবে প্রায় তিন-চার বছর চলল। পিউয়ের সঙ্গে ব্রেক আপের কথা ঋষভ কল্পনাও করে না। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান দ্রুত দরকার। না হলে সে নিজে মানসিক রোগীতে পরিণত হবে।
এসব কথা ঋষভ কোনোদিন কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি। কিন্তু সম্প্রতি এক মনোবিদ বন্ধুর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এক নাগাড়ে এসব বলে ফেলে। বিচক্ষণ মনোবিদ সমস্যাটি বুঝে ফেলেন। তিনি ঋষভকে সরাসরি বলেন যে, “সমস্যা ওর থেকেও বেশি তোমার রয়েছে।” তাঁর মতে, ঋষভ সবসময় পিউকে খুশি দেখতে চায়। সেকারণেই সবসময় ওর মন জুগিয়ে চলে। তার জন্য মিথ্যে বলতে হলেও সে পিছপা হয় না।
ঋষভকে মনোবিদের পরামর্শ, পিউকে নিজের সমস্যার কথা আগে খুলে বল। ওকে বল যে সে একেবারেই পারফেক্ট। তাঁর খুঁত ধরা সহজ নয়। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় খুঁত হল বারবার নিজের নিন্দা শোনার প্রবণতা। আর সেই বিষয়টিই ঋষভের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মনোবিদের বিশ্বাস, পারফেক্ট গার্ল পিউ নিজেকে পারফেক্ট করার চেষ্টা করবে। প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে এই নিন্দা-প্রেমকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর তা না হলে ঋষভকেই বারবার বলতে হবে যে সে মিথ্যে সমালোচনা করতে করতে বিরক্ত হযে উঠছে। পিউ পারফেক্ট বলেই সে তাঁকে এত ভালোবাসে।
ঋষভ বা পিউ শুধু নয়, সম্পর্কের মাঝে এধরনের সমস্যা অনেকেরই দেখা দেয়। পারফেকশনের বাতিকগ্রস্তরা নিজের সমালোচনা শুনতে পছন্দ করেন। মনে করেন যে সমালোচনা শুনলে পরের বার কাজটি আরও ভালো হবে। কিন্তু বিপরীতদিকের মানুষগুলো যে তাতে বিরক্ত হচ্ছেন তা বোঝার শক্তি তাঁদের নেই। অগত্যা আপনিও যদি এধরনের সমস্যায় পড়েন তাহলে সঙ্গীকে সরাসরি নিজের বিরক্তির কথা জানান। পারফেক্ট সঙ্গী সেক্ষেত্রেও পারফেকশন আনার চেষ্টা করবেন।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-22 16:11:17
Source link
Leave a Reply