হাইলাইটস
- মোবাইল ও কমপিউটার গেমসের যুগ শুরু হওয়ার সময়কাল থেকেই বাচ্চারা এ ধরণের ইনডোর গেমসে মজেছে।
- তার ওপর ২৪ ঘণ্টার নানা কার্টুন চ্যানেলের উপস্থিতি তো রয়েছেই।
- একই জায়গায় বসে বসে কার্টুন দেখে বা গেম খেলে আদতে বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশ বাধিত হয়।
স্বাস্থ্যকর খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়াও আরও নানা বিষয়ে নজর রাখতে হবে। বাচ্চারা যতটা বাইরের পরিবেশে উপস্থিত জীবাণুর সংস্পর্শে আসবে, ততই তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের ঘুম কমে যেতে থাকে। সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টার ঘুম দরকার। আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেই বার বার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার অভ্যাসও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। দেখে নিন, কোন কোন বদ অভ্যাস বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
আউটডোর গেম না-খেলা
মোবাইল ও কমপিউটার গেমসের যুগ শুরু হওয়ার সময়কাল থেকেই বাচ্চারা এ ধরণের ইনডোর গেমসে মজেছে। তার ওপর ২৪ ঘণ্টার নানা কার্টুন চ্যানেলের উপস্থিতি তো রয়েছেই। একই জায়গায় বসে বসে কার্টুন দেখে বা গেম খেলে আদতে বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশ বাধিত হয়। এর ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে এবং তারা বার বার অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। অন্যদিকে আউটডোর গেম খেললে বাচ্চারা পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
বাচ্চাদের আউটডোর গেম খেলার জন্য উৎসাহিত করুন। একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। ওই সময় তাদের নানান গেম ও অ্যাক্টিভিটিতে শামিল করুন। আবার বাচ্চারা কোন স্পোর্টস ভালোবাসে, তা জানুন। প্রয়োজনে আউটডোর খেলার প্রতি তাদের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য পছন্দের স্পোর্টসের ট্রেনিং কোচও রাখুন। নিয়মিত পড়াশোনার পর বা সপ্তাহান্তে আউটডোর গেম খেলান।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
বয়স অনুযায়ী প্রত্যহ ১০-১৪ ঘণ্টার ঘুম বাচ্চাদের জন্য জরুরি। পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রাতে দেরি করে ঘুমানো, কম্পিউটার ও মোবাইলে গেম খেলা বাচ্চাদের ঘুম কমিয়ে আনতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শারীরিক অবসাদের সষ্টি হয়, যা মস্তিষ্কে স্বতন্ত্র ভাবে অক্সিজেন প্রসারিত হতে বাধা দেয়। এর ফলে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বার বার অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে তারা।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
বাচ্চাদের শয়নকক্ষের মধ্যে ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করুন। অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে বাচ্চারা ঘুমোতে পারে। ঘুমানোর ১-২ ঘণ্টা আগে কমপিউটার ও মোবাইল থেকে দূরে রাখুন বাচ্চাদের। কমপিউটার বা মোবাইল গেম খেলার সময় নির্ধারণ করুন।
বার বার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার ফলে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অধিক অসুস্থ হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে অ্যন্টিবায়োটিকও খাওয়ানো হয়। অধিক ও ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমে যায়। এমনকি এর ফলে তাদের অ্যান্টিবায়োটিক রেসিটেন্সও কমে যায়।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
সর্দি-কাশি, ছোট-খাটো রোগে বার বার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না। এর পরিবর্তে অসুস্থতার প্রথম দিকে কিছু ঘরোয়া উপায় করে দেখুন। এগুলির ফলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া শীঘ্র স্বস্তি পাওয়া যায়।
পরিচ্ছন্নতার অভাব
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে অত্যধিক জীবাণু বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। খাবার আগে হাত না-ধোয়া, ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার না-করা, বড় ও নোংরা জমা নখ ইত্যাদি এ সমস্ত অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে সন্তানকে অবগত করুন। দৈনন্দিন জীবন যাপনে এ ধরণের অভ্যাস গ্রহণ করতে উৎসাহিত করুন।
মনের কথা লুকিয়ে যাওয়া
কিছু কিছু বাচ্চা স্বভাবজাত ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী। স্কুলের, বন্ধুদের বা অন্য নানা কথা, যার ফলে মনে আঘাত পেয়েছে, তা তারা নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। এর ফলে বাচ্চাদের মধ্যে অবসাদ বাড়ে এবং তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুল ও তাদের বন্ধুদের সম্পর্কে কথা বলুন। কোনও সমস্যা হলে নিজের সঙ্গে মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন। মন দিয়ে তাদের কথা শুনুন। নিজের ব্যবহার এবং পরিবেশ এমন রাখুন, যাতে সহজে নিজের মনের সমস্ত কথা তারা আপনাদের জানাতে পারে। যোগ্যতা অনুযায়ী বাচ্চাদের পারফর্ম করতে দিন। অযথা বোঝা চাপাবেন না। ধৈর্য ধরে তাদের কথা শোনার ও বোঝার চেষ্টা করুন, এর ফলে আপনার ওপর তাদের ভরসা বাড়বে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
পুষ্টিকর ও ভারসাম্য যুক্ত খাবার-দাবার বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মজবুত বানানোর জন্য জরুরি। বর্তমানে অধিকাংশ বাচ্চাই জাঙ্ক ফুড, প্যাকড ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস পছন্দ করে। কিন্তু এ ধরণের খাবারে উপস্থিত প্রিজার্ভেটিভ, কৃত্রিম রঙ ও চিনি তাঁদের হজম শক্তির ক্ষতি করে। এর ফলে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
পুষ্টিকর ও সতেজ খাবার খাওয়ান। ডাল, ড্রাউফ্রুট, ফল ও সবজি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভূক্ত করুন। বাচ্চাদের দিনে ৫ বার কিছু না-কিছু খাইয়ে যান।
প্যাসিভ স্মোকিং
ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। ধূমপানকারীদের জন্য এটি যতটা ক্ষতিকর, ততটাই ক্ষতিকর অধূমপানকারীদের জন্যও। সিগারেটের ধোঁয়া ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষত বাচ্চাদের ফুসফুসের। ছোট বয়সে বাচ্চাদের ফুসফুস পূর্ণ রূপে বিকশিত হয় না। তাই ধূমপানের ধোঁয়া তাদের ক্ষতি করতে পারে। এটিও তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর কু প্রভাব বিস্তার করে।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
পরিবারের কোনও সদস্য ধূমপান করে থাকলে, তাঁদের তা ছাড়তে বলুন।
শরীরে জলের অভাব
বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের শরীরে অধিক পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পাচকতন্ত্র সুষ্ঠু পরিমাণে কাজ করার জন্য যে পরিমাণ জলের প্রয়োজন তা অবশ্যই পান করা উচিত। পাচকতন্ত্রের মাধ্যমে পুষ্টিকর উপাদান শোষণে সাহায্য করে জল। এর ফলে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়। এ ছাড়া শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করতেও জল সাহায্য করে।
অভিভাবক হিসেবে কী করতে পারেন
বাচ্চা সারাদিন কোনও না-কোনও ভাবে তরল পানীয় গ্রহণ করে তা লক্ষ্য রাখুন। তৃষ্ণা না-পেলেও তাদের জল পানের জন্য উৎসাহিত করুন।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-21 16:25:35
Source link
Leave a Reply