চাকরির পাশাপাশি সংসারও সামলাতে হয় নাজিয়াকে। এতসবের পরও মাঝেমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই মনে থাকে না। এই তো গত মাসের কথা। বড় বোনের জন্মদিন ছিল। ওই দিন শুভেচ্ছা জানাতেই ভুলে গেলেন। পরদিন মনে পড়লে নিজের ওপর খুব বিরক্ত লাগল, আফসোস হতে থাকল। এমন ঘটনা আমাদের জীবনেও ঘটে। ‘নাগরিক জীবনে সবকিছু মনে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা ব্যস্ততায় আমাদের স্মৃতিশক্তি খানিকটা কমে যায়। তবে কিছু পন্থা অবলম্বন করলে সহজেই মনে রাখা সম্ভব। নিজের পাশাপাশি পরিবারের সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’ কথাগুলো বললেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা সুলতানা।
তিনি মনে রাখার বিভিন্ন উপায় জানিয়েছেন।
কারও কথা বা তথ্য যা-ই হোক না কেন, তা মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন। মনোযোগী হলে ভুলও কম হবে।
পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী—এসব সম্পর্ককে আলাদা ভাগে ভাগ করুন। সম্পর্কের ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দিবস, উপলক্ষ, কার কী প্রয়োজন এসব নোটবুক বা ডায়েরিতে আলাদাভাবে লিখে রাখতে পারেন।
ছন্দের মাধ্যমে ফোন নম্বর, ঠিকানা বা জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর তারিখও মনে রাখা সম্ভব।
আধুনিক যুগে ইলেকট্রনিক-সামগ্রীর ওপর আমরা অনেকখানি নির্ভরশীল। বিশেষ করে, মুঠোফোন বা কম্পিউটারে বিভিন্ন উপলক্ষ, দিবস, জরুরি তথ্য সংরক্ষণ করে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতে পারেন। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট মুহূর্তে তা আপনাকে জানিয়ে দেবে। এ ছাড়া বর্তমানে বহুল জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেইসবুকের মাধ্যমেও আপনি সব জানতে পারবেন।
সামর্থ্য থাকলে আপনি ডিজিটাল ডায়েরি বা নোটবুক সঙ্গে রাখতে পারেন; এখানেও সবকিছু সংরক্ষণ করা যায়।
খাবার টেবিলের সামনে একটি সাদা বোর্ড রাখা উচিত। এতে প্রতিদিনের সব কাজ লিখে রাখুন। এ ছাড়া কোন মাসে কার কী দিবস, সেটিও লিখে রাখতে পারেন।
প্রতি তিন মাসে পরিবারের কী কী কার্যক্রম আছে, তা সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করুন। সঙ্গে সঙ্গে তা আলাদা কাগজে লিখে রাখতে ভুলবেন না যেন। দিনে দুবার ওই কাগজে বা নোটবুকে চোখ বুলিয়ে নিন।
আপনার সর্বক্ষণের সঙ্গী বা কাছের কাউকে আগেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটির কথা বলে রাখতে পারেন, যেন সে সময়মতো আপনাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ব্যস্ততার ভিড়ে নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন। তখন আপনার করণীয় প্রতিটি কাজের কথা ভাবুন। তাহলে ঠান্ডা মাথায় আরও অনেক কিছু মনে পড়বে, যা এত দিন হয়তো ভুলেই ছিলেন। এভাবেও অনেক কিছু মনে পড়ে যায়।
মাসের শুরুতে ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখুন। নানা রঙের পেনসিল বা কলম দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম দাগিয়ে রাখুন।
এ ছাড়া দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ঠিকমতো ঘুমানো এবং সেই সঙ্গে পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্য সবার খাওয়া উচিত। এতে মনে রাখার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে।
মনে রাখার জন্য মস্তিষ্কের বিজ্ঞানসম্মত কিছু ব্যায়াম আছে। প্রয়োজন মনে করলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী তাও করতে পারেন।
সবচেয়ে বড় কথা, নিজের সঙ্গে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। মনে করবেন আপনি কিছুই ভুলবেন না, তাহলেই দেখা যাবে সমস্যায় পড়তে হবে না।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৩, ২০০৯
Leave a Reply