আপনার নবজাতক পুত্রের খৎনা করাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। আপনি খৎনার সুবিধা ও ঝুঁকি দুটোই ভেবে দেখবেন। তা ছাড়া অন্য কিছু বিষয় যেমন আপনার সংস্কৃতি, ধর্ম ও ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার আপনার সিদ্ধান্তের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
তবে আপনি যে ধর্ম বা যে সংস্কৃতির লোক হোন না কেন, খৎনা সম্পর্কে আপনার পুরো তথ্য জানা থাকলে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। আপনার যদি জানা থাকে খৎনা কতটা স্বাস্থ্য সুরক্ষাকর তাহলে আপনার পুত্রের খৎনা করানোর ব্যাপারে আপনার দ্বিধা থাকার কথা নয়। একথা সত্য যে, ইহুদি ও মুসলমানরা ধর্মীয় কারণে খৎনা করান, কিন্তু এর স্বাস্থ্য সুফলের কথা চিন্তা করলে কিংবা বাস্তবে দেখলে সব পুরুষেরই (যারা খৎনা করাননি) খৎনা করানো উচিত।
খৎনাকে ইংরেজিতে বলে সারকামসিশন। খৎনা হচ্ছে লিঙ্গের অগ্রভাগের ত্বক (যে ত্বক লিঙ্গমুণ্ডুকে ঢেকে রাখে) কেটে বাদ দেয়া। খৎনা সাধারণত জন্মের প্রথম দিন বা দ্বিতীয় দিন সম্পন্ন করা হয়। বয়স দু’মাসের বেশি হলে বয়স্ক ছেলেদের এবং বয়স্ক লোকদের খৎনা করানো কিছুটা জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে প্রয়োজনে অবশ্যই খৎনা করাতে হবে। খৎনা করাতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিট। ব্যথা যাতে না পায় সে জন্য আপনার শিশুকে স্থানিক অবশকরণ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
খৎনা করানোর ফলে কি কোনো লাভ হয়?
দ্য অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসের সাম্প্রতিক রিপোর্ট মতে, খৎনা করালে শিশু ছেলেদের মূত্রপথের সংক্রমণ রোগ প্রতিহত হয়। অধিকাংশ ছোট ছেলে মূত্রপথের সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হয়। এর ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, জ্বর, খাবারে অনীহা এবং স্বাস্থ্য ভালো না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা লেগেই থাকে। খৎনা করালে এসব সমস্যা দূর হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরাও খৎনা করালে অবশ্যই কিছু সুফল পান, যেমন খৎনা পুরুষদের লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। খৎনা যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষের খৎনা এইচআইভি প্রতিরোধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা। তবে এটা আংশিক সুরক্ষা দেয়। বহুগামিতার ফলে এইচআইভি’র বিস্তার প্রতিরোধ করতে পারে না।
লিঙ্গের মাথায় প্রদাহ হলে, লিঙ্গাগ্রের ত্বকে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া করলে, খৎনা করালে তা সেরে যায়।
আগেই বলা হয়েছে, খৎনার ইংরেজি সারকামসিশন। ‘সারকামসিশন’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘সারকাম’ ও ‘সিডারে’ থেকে। সারকাম শব্দের অর্থ চার পাশে এবং সিডারে শব্দের অর্থ কেটে ফেলা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাবিশ্বের ৩০ শতাংশ পুরুষ খৎনা করিয়ে থাকেন। অধিকাংশ করান ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক কারণে।
মানব ইতিহাসে খৎনার ইতিহাস অতি পুরান। পাথরযুগের গুহাগুলোতে খৎনার অনেক চিত্র পাওয়া গেছে। প্রাচীন মিসরের সমাধিগুলোতেও পাওয়া গেছে খৎনার অনেক চিত্র। বিভিন্ন মতবাদ অনুসারে খৎনা হচ্ছে ধর্মীয় বলিদান, স্বাস্থ্য সতর্কতা, দেবতার প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন, বয়ঃসন্ধিকাল পেরনোর ধর্মীয় আচার, পরাজয় বা দাসত্বের চিহ্ন অথবা সবল পুরুষত্বের প্রতীক। পুরুষের খৎনা ইহুদি ও মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় আদেশ। আফ্রিকায় প্রথাগতভাবে কিছু খ্রিষ্টানের মধ্যে এটা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু অংশে খৎনা খুব সাধারণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেকোনো পুরুষের স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য বিশেষ করে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণের জন্য খৎনা করানোর পরামর্শ দেন। লিঙ্গমুণ্ডুতে প্রদাহ এবং লিঙ্গের ক্যান্সারের চিকিৎসায়ও খৎনা করানো হয়। ফাইমোসিসের চিকিৎসায় অহরহ খৎনা করানো হচ্ছে।
সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০৬ জানুয়ারী ২০০৮
লেখকঃ ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, (বাটা সিগন্যাল ও হাতিরপুল বাজারের সংযোগ রাস্তার মাঝামাঝি), ঢাকা।
Leave a Reply